• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুলাই ২৭, ২০১৯, ১১:৫৯ এএম
সর্বশেষ আপডেট : জুলাই ২৭, ২০১৯, ১১:৫৯ এএম

পুলিশের সহযোগিতায় গণপিটুনি

৮ বছরেও মেলেনি কিশোর মিলন হত্যার বিচার

৮ বছরেও মেলেনি কিশোর মিলন হত্যার বিচার
ভিডিও ফুটেজ থেকে প্রাপ্ত ছবি; মিলনকে উত্তেজিত জনতার হাতে তুলে দিচ্ছে পুলিশ


আজ থেকে ৮ বছর আগে এই দিনে (২৭ জুলাই, ২০১১) নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চরকাঁকড়া ইউনিয়নের টেকের বাজারের তিন রাস্তার মোড়ে ডাকাত সন্দেহে আটক ১৬ বছরের কিশোর সামছুদ্দিন মিলনকে পুলিশের গাড়ি থেকে জনতার হাতে ছেড়ে দেয়া হয়। তারপর পুলিশের উপস্থিতিতেই গণপিটুনিতে মৃত্যু হয় মিলনের। ঘটনার কয়েকদিন পর এ নৃশংসতার মোবাইলে ধারণ করা ফুটেজ একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে প্রকাশ হলে দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। নড়ে-চড়ে ওঠে নোয়াখালীর পুলিশ প্রশাসন। দায়িত্ব অবহেলায় জড়িত পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয় পুলিশ হেডকোয়ার্টার। 

চাঞ্চল্যেকর এ ঘটনায় তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর নির্দেশে কোম্পানীগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। মামলার তদন্তভার দেয়া হয় নোয়াখালী জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ওসিকে।

ডিবি পুলিশ হত্যার ভিডিও ফুটেজ দেখে ঘটনার সঙ্গে জড়িত স্থানীয় ৭ জনকে আটক করে। ঘটনার মূল হোতা কোম্পানীগঞ্জ থানার এসআই আকরাম উদ্দীন শেখ, কনস্টেবল আব্দুর রহিম ও হেমা রঞ্জন চাকমাকে দায়িত্ব অবহেলায় বরখাস্ত করা হয়। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে বরখাস্ত হন সে সময়কার কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি রফিক উল্লাহ। তবে এ ঘটনার প্রায় এক বছর পর তদন্ত চলাকালীন অবস্থায় অজ্ঞাত কারণে তাদের বরখাস্ত আদেশ প্রত্যাহার করে চাকরিতে পুনর্বহাল করা হয়।

তদন্তকারী কর্মকর্তা ঘটনার ৪ বছর পর (২০১৫ সালে) চাঞ্চল্যেকর এ হত্যা মামলার সব আসামিদের বাদ দিয়েই চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। মোবাইলের ভিডিও চিত্রে সব আসামীদের অপরাধ স্পষ্ট থাকলেও সে সময় তদন্তকারী কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মিলন হত্যার ভিডিও চিত্র প্রকাশ হয়ে পড়লেও ‘পর্যাপ্ত সাক্ষ্য-প্রমাণ’ মেলেনি। এজন্য অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যরাসহ ৯ জন আসামিকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।’

পুলিশের এ চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে ‘নারাজি’ দিয়েও নিহত মিলনের মা কোহিনুর বেগম কোন সুফল পাননি। দীর্ঘ ৮ বছর ধরে ছেলে হত্যার বিচার চেয়ে আদালতপাড়ায় ঘুরতে ঘুরতে এখন তিনি ক্লান্ত। ঘটনার পর বিচার চাইতে দেখা করছিলেন, তৎকালীন স্থানীয় সংসদ সদস্য ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে। তিনি আশ্বাসও দিয়েছিলেন সুষ্ঠু বিচারের। কিন্তু অসহায় কোহিনুর বেগম তার কিশোর পুত্র মিলন হত্যার বিচার পেলেন না। পাওয়ার সম্ভাবনাও দেখছেন না। কারণ মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদনে সব আসামির নামই বাদ দেয়া হয়েছে। কোহিনূর বেগমের ভাষ্য, ‘বুক থেকে কেড়ে নেয়া মিলন হত্যার এখন শুধু বিচার চাই আল্লাহর কাছে।’

যেভাবে মিলনকে হত্যা করা হয়

২০১১ সালের ২৭ জুলাই ভোরে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চরকাঁকড়া ইউনিয়নের টেকের বাজারের তিন রাস্তার মোড় নামক স্থানে তৎকালীন কোম্পানীগঞ্জ থানার এসআই আকরাম উদ্দীন শেখ, কনস্টেবল আব্দুর রহিম ও হেমা রঞ্জন চাকমা মিলনকে ডাকাত সন্দেহে আটক করেন। এর কিছু সময় পর সেখানে অনেক লোক জড়ো হয়। এসময় পুলিশ মিলনকে গাড়ি থেকে  উত্তেজিত জনতার মাঝে নামিয়ে দেয়। পরে উত্তেজিত জনতা পুলিশের উপস্থিতিতেই মিলনকে লাথি-ঘুষি মারতে থাকে। এক পর্যায়ে ইট দিয়ে থেতলে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।

ঘটনার কয়েকদিন পর মুঠোফোনে তোলা দুর্লভ ভিডিওচিত্রটি একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে প্রচার হলে সারাদেশে তোলপাড় শুরু হয়। 

এমএএম/আরআই