• ঢাকা
  • সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুলাই ২৮, ২০১৯, ০৯:৪৭ এএম
সর্বশেষ আপডেট : জুলাই ২৮, ২০১৯, ০৯:৪৭ এএম

৭ জেলায় ৬৪ ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত

৭ জেলায় ৬৪ ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত

দেশের ৭ জেলায় ৬৪ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। বিশেষ করে ময়মনসিংহে ২২, মৌলভীবাজারে ১০, মানিকগঞ্জে ১৪, ঝিনাইদহে ৯, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৩, চুয়াডাঙ্গায় ৩ ও সুনামগঞ্জে ৩ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে।  

সংবাদদাতাদের পাঠানো প্রতিবেদন তুলে ধরা হলো-

ময়মনসিংহ
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শনিবার বিকাল পর্যন্ত ২২ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি আছেন। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক লক্ষ্মী নারায়ণ মজুমদার বলেন, শনিবার (২৭ জুলাই) ৬ জন নতুন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এছাড়াও গত কয়েকদিনে আরো ১৬ জন রোগী ভর্তি হন যারা এখনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত অধিকাংশ ঢাকায় বসবাস করতো। কেউ ঢাকায় কোনো কাজে গিয়েছিল। এরপর থেকেই তারা জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে। হাসপাতালে নিবীড় পর্যাবেক্ষণের মাধ্যমে আক্রান্তদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।

মৌলভীবাজার 
মৌলভীবাজার জেলায় এ পর্যন্ত ১০ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে একজন ছাড়া সবাই ঢাকা থেকে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এসেছেন। তবে একজন স্থানীয়ভাবে আক্রান্ত হয়েছে বলে ধারণা করছেন চিকিৎসকেরা।

মৌলভীবাজার সিভিল সার্জনের কার্যালয়, সদর হাসপাতাল এবং বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যমতে, জেলায় এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ১০ জন। এদের মধ্যে দুজন মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন, ২ জন মৌলভী পলি ক্লিনিকে এবং ২ জন সিলেটে চিকিৎসা নিচ্ছেন। বাকি দুজন সুস্থ হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে মৌলভীবাজার জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয়। এছাড়া শনিবার আরও নতুন দুই জনের ডেঙ্গু ধরা পড়েছে।

মৌলভীবাজারের সিভিল সার্জন ডা. শাহজাহান কবির চৌধুরী জানান, জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সতর্ক রয়েছে। মৌলভীবাজার জেলায় ২৫০ শয্যা হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে ডেঙ্গু চিকিৎসার জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি রয়েছে।

মানিকগঞ্জ
মানিকগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে ডেঙ্গু রোগ। প্রতিদিনই আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। গত এক সপ্তাহে জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন নারী-শিশুসহ ১৪ ডেঙ্গু রোগী।

জেলায় প্রথমবারের মাতো হঠাৎ করেই ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে জনমনে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর্যাপ্ত সুবিধা না থাকায় বিপাকে পড়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন জেলা প্রশাসক।

মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. আব্দুল আওয়াল বলেন, মানিকগঞ্জে গত বছরও ডেঙ্গু রোগীর উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। এ কারণে ডেঙ্গু রোগ পরীক্ষার যন্ত্রের প্রয়োজন পড়েনি। হঠাৎ করে ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় টেনশনে পড়েছি আমরা। চলতি অর্থবছরের বাজেট শেষ হওয়ায় ইচ্ছা করলেই ওসব যন্ত্র কেনা যাচ্ছে না। তবে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি আমরা।

হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. লুৎফর রহমান বলেন, গত কয়েকদিন ধরে হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী আসতে শুরু করেছে। তবে গত দুইদিনে রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। এ পর্যন্ত হাসপাতালে ১৪ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন।

মানিকগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. আনোয়ারুল আমিন আখন্দ বলেন, জেলা হাসপাতাল ছাড়া কোনো উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডেঙ্গু রোগীর উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। সীমিত সাধ্যের মধ্যে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তবে সরকারি হাসপাতালে কিট এবং রিএজেন্ট সরবরাহ না থাকার কারণে এনএসওয়ান পরীক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। কিট ও রিএজেন্ট সরবরাহ না থাকার কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে টেন্ডার আহ্বানের মাধ্যমে কিট ও রিএজেন্ট ক্রয় করা হবে।

ঝিনাইদহ
এ পর্যন্ত ঝিনাইদহ সদরে আটজন এবং শৈলকুপায় একজন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এদের তিনজন জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন, পাঁচজন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন আর এক ছাত্র চিকিৎসা না নিয়েই শৈলকুপা থেকে ঢাকা চলে গেছেন বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। চিকিৎসকরা ডেঙ্গু নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে চিকিৎসা নিতে পরামর্শ দিয়েছেন। তবে সদর হাসপাতালে রক্ত পরীক্ষার শনাক্ত উপাদান না থাকায় বাইরে থেকে তা পরীক্ষা করতে অতিরিক্ত অর্থ ও সময় ব্যয় হচ্ছে বলে রোগীর অভিভাবকরা জানিয়েছেন।

ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, সদর হাসপাতালে রক্ত পরীক্ষার শনাক্ত উপাদান না থাকায় বাইরের ডায়াগনস্টিক ক্লিনিক থেকে পরীক্ষা করে ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত করেছেন চিকিৎসকেরা।
এ বিষয়ে সদর হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. জাকির হোসেন জানান, তিনজনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাদের তত্ত্বাবধানে রাখা হয়েছে। এ রোগে আক্রান্তদের বেশিরভাগ কোনো না কোনোভাবে ঢাকা থেকে আসা মানুষ। 
শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. শাহনেওয়াজ কাশেম জানান, এক ছাত্র ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ নিয়ে চিকিৎসার জন্য এলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে বলা হয়। চারদিন আগেই তিনি আক্রান্ত হয়েছেন বলে তথ্য পাওয়া যায়। কিন্তু ঢাকায় তার বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা চলছে বলে সে হাসপাতাল ত্যাগ করে বিধায় তার চিকিৎসা নিশ্চিত করা যায়নি। 
ওই চিকিৎসক জানান, জ্বর, পেটে ব্যথা, মাথা ঘোরা, বমি বা এ জাতীয় উপসর্গ দেখা দিলে আতঙ্কিত না হয়ে যে কোনো সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। 

চাঁপাইনবাবগঞ্জ
ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ আধুনিক সদর হাসপাতালে তিনজন রোগী ভর্তি হয়েছেন। আক্রান্তরা হচ্ছেন- চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার বালুবাগান মহল্লার শাহীন, সদর উপজেলার দেবীনগর ইউনিয়নের ধোলারীহাট গ্রামের শরিফুল ইসলাম ও কালিনগর গ্রামের শাহিন। 

চাঁপাইনবাবগঞ্জ আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা নাদিম সরকার জানান, আক্রান্তরা ঢাকাতে অবস্থানকালে ডেঙ্গ জ্বরে আক্রান্ত হয়। সেখান থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নেয়ার পরে তারা বাড়িতে আসেন। জ্বর না কমায় শুক্রবার সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়। বর্তমানে তারা চিকিৎসাধীন রয়েছেন। 

তিনি জানান, জ্বরে আক্রান্ত হয়ে আরও কয়েকজন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তবে তারা ডেঙ্গ জ্বরে আক্রান্ত কি না পরীক্ষা শেষে জানা যাবে।

চুয়াডাঙ্গা
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে একদিনে নারীসহ তিন রোগী ভর্তি হয়েছেন। শনিবার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তাদের ডেঙ্গু আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত করা হয় বলে জানান সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. শামীম কবীর।

ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তরা হলেন, চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার সিনেমা হলপাড়ার আজিমুদিনের স্ত্রী শিরিনা আক্তার (৫০), বাগানপাড়ার শের আলীর ছেলে আব্দুল মোহাইমেম (৩৮) ও মেহেরপুর বাড়াদি ইউনিয়নের মোমিনপুর গ্রামের পশ্চিমপাড়ার রফিকুল ইসলামের ছেলে তারিখ হাসান (২১)।

ডেঙ্গু আক্রান্ত তিন রোগীর স্বজনেরা বলেন, গত কয়েকদিন যাবত ধরে প্রচন্ড জ্বরে ভুগছিলেন তারা। বাড়িতে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েও জ্বর না কমলে আজ শনিবার তাদেরকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তাদের ডেঙ্গু আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত করে সদর হাসপাতালের চিকিৎসকরা।

সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. শামীম কবীর বলেন, শনিবারে একই দিনে সদর হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নারীসহ তিনজনকে ডেঙ্গু আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে। মূলত ঢাকা থেকে এই রোগ ছড়াচ্ছে। ইতিমধ্যে তাদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা শুরু হয়েছে।

সুনামগঞ্জ

সুনামগঞ্জ জেলাতেও ৩ ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। তবে তিনজনই ঢাকা থেকে আক্রান্ত হয়ে সুনামগঞ্জ এসেছেন বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের তথ্য মতে, শনিবার (২৭ জুলাই) পর্যন্ত সুনামগঞ্জে তিন জন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে এসেছেন। তাদের মধ্যে দুজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিলেটে পাঠানো হয় এবং একজনকে স্থানীয়ভাবে বাসায় চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে। তবে আক্রান্ত রোগীদের ব্যক্তিগত স্বার্থে তাদের পরিচয় গোপন রাখে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, ডেঙ্গু জরে আক্রান্ত একজন রোগীকে বাসায় চিকিৎসা চলছে। তাকে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বিষ্ণু প্রসাদ চন্দ্রের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

এ বিষয়ে সিভিল সার্জন ডা. আশুতোষ দাশ বলেন, এ পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে তিনজন রোগী চিকিৎসা সেবা নিতে হাসপাতালে আসেন। তারা ঢাকা থেকে আক্রান্ত হয়ে সুনামগঞ্জ এসেছেন। দুজনকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

কেএসটি

আরও পড়ুন