• ঢাকা
  • সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: আগস্ট ৪, ২০১৯, ১০:০১ এএম
সর্বশেষ আপডেট : আগস্ট ৪, ২০১৯, ১০:২০ এএম

২শ’ ৮৯ কোটি ৬৮ লাখ টাকা ব্যয়ে

বাণিজ্য সম্প্রসারণে বেনাপোলে নির্মিত হবে কার্গো টার্মিনাল

বাণিজ্য সম্প্রসারণে বেনাপোলে নির্মিত হবে কার্গো টার্মিনাল
বেনাপোল বন্দরে টার্মিনাল শেড না থাকায় খোলা আকাশের নিচে রাখা হয়েছে ভারত থেকে আমদানিকৃত যানবাহন -ছবি : জাগরণ

রাজস্ব আদায়ে গতিশীলতা আনতে এবং প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে বাণিজ্য সম্প্রসারণ করতে দেশের সর্ববৃহৎ বেনাপোল স্থলবন্দরে কার্গো ভেহিকেল টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। এজন্য বেনাপোল স্থলবন্দরে কার্গো ভেহিকেল টার্মিনাল নির্মাণের একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়। এতে খরচ ধরা হয়েছে ২শ’৮৯ কোটি ৬৮ লাখ টাকা।

পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা জানান, প্রকল্পটির প্রস্তাব পাওয়ার পর চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনাটি (ডিপিপি) এখন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উপস্থাপন করা হবে। অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে ২০২১ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ।

দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বেনাপোল স্থলবন্দর। যার শুরু ৪টি টিনশেড দিয়ে। ধীরে ধীরে এ বন্দরটিই দেশের একমাত্র সর্ববৃহৎ স্থলবন্দরে হয়ে উঠেছে। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। ওপারে ভারতের পেট্রাপোল স্থলবন্দর, এপারে বেনাপোল বন্দর। দীর্ঘদিন ধরে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে মুক্ত বাজার স্থাপনে কম সময়ে দ্রুত মালামাল আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে যোগাযোগ ব্যবস্থায় এ বন্দরটি অত্যন্ত গুরুত্ব ভূমিকা পালন করে আসছে। স্থলপথে মালামাল আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে সুবিধাজনক হওয়ার দিন দিন এ বন্দরের অবকাঠামোগত উন্নয়ন অব্যাহত আছে। ভারত সীমান্তে স্থলপথে আমদানি-রপ্তানি তথা বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বেনাপোল স্থলবন্দর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর। এ বন্দর ব্যবহার করে স্থলপথে প্রায় ৮০ শতাংশ আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। প্রতি বছর বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার পণ্য আমদানি-রপ্তানি হয়। এখান থেকে প্রতি বছর প্রত্যক্ষভাবে সরকারের প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আসে। ২০০২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হচ্ছে বেনাপোল স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ।

আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য সম্প্রসারণ বন্দর উন্নয়নসহ দু’দেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের অংশ হিসেবে বিশ্ব ব্যাংক, এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) প্রতিনিধি, বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত, ভারতীয় হাই কমিশনার, ভুটানের অর্থসচিব, তৎকালিন নৌপরিবহণ মন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী, বানিজ্য মন্ত্রী, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন পর্যায়ের সচিবরা বেনাপোল কাস্টমস ও বন্দর একাধিকবার পরিদর্শন করেছেন।

প্রতিদিন প্রায় ৪শ থেকে ৫শ ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রাক এবং ৫শ’ থেকে ৬শ বাংলাদেশি ট্রাক এ বন্দরে আসে। টার্মিনালটি নির্মাণ করা হলে প্রায় ১ হাজার ২শ’৫০টি যানবাহন পার্কিং করা সম্ভব হবে। প্রকল্পের আওতায় ২৯ দশমিক ১০ একর জমি অধিগ্রহণ, ২ লাখ ৪৫৬ হাজার ৯৭ ঘনমিটার ভূমি উন্নয়ন, ২ হাজার ১শ’ মিটার সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ, ৬ হাজার বর্গমিটার অভ্যন্তরীণ রাস্তা নির্মাণ, ১ লাখ ৪৭ হাজার বর্গমিটার পার্কিং ইয়ার্ড, এক হাজার ৭শ’ ৪৭ বর্গমিটার ভবন নির্মাণ, দুইটি মেইন গেইট, দুইটি গেস্ট হাউস ও সিকিউরিটি সিস্টেম, ৪টি ওয়াচ টাওয়ার এবং ১ হাজার ৬শ’ ৫০ বর্গমিটার ড্রেন নির্মাণ করা হবে।

এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য শামীমা নার্গিস বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে বেনাপোল স্থলবন্দরের মাধ্যমে বাংলাদেশে আগত পণ্যবাহী গাড়ি সংরক্ষণ ও আমদানি-রপ্তানি কাজে গতিশীলতা আসবে। বাংলাদেশের রাজস্ব আদায় বাড়বে। ভারতের সঙ্গে স্থল বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এ বন্দর ব্যবহারের চাহিদাও বৃদ্ধি পাবে। সর্বোপরি দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে বন্দরটি। এ কারণে প্রকল্পটি অনুমোদনযোগ্য।

বেনাপোল সিআ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, সম্ভাবনাময় বন্দর বেনাপোল। দেশের অর্থনীতিতে বেনাপোল বন্দরের ভূমিকা অপরিসীম। এ পথে বাণিজ্য আরও গতিশীল করতে ভারত-বাংলাদেশ সরকার উভয়ে আন্তরিক। এরইমধ্যে তার ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ভারত-বাংলাদেশ-নেপাল-ভুটান চার দেশের বাণিজ্য চুক্তিও বাস্তবায়ন হয়েছে। কিন্তু বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানির ক্ষেত্রে অবকাঠামোগত সমস্যায় ব্যবসায়ীরা প্রয়োজনীয় সুফল পাচ্ছে না। সরকার যদি প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়ন করে তবে বর্তমানে যে রাজস্ব আদায় হয় তখন তার দ্বিগুণ হবে।

এ ব্যাপারে বেনাপোল স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের উপ পরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবির তরফদার বলেন, প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন হয়ে গেলে তা দ্রুত বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ। এর ফলে বন্দরের যানজট কমে আসবে। পাশাপাশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে গতিশীলতা বাড়বে। 

একেএস
    

আরও পড়ুন