• ঢাকা
  • সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: আগস্ট ২৯, ২০১৯, ০৯:৩৩ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : আগস্ট ২৯, ২০১৯, ০৯:৪৬ পিএম

নাটোরে যৌন নিপীড়ক শিক্ষক সাইফুলের কীর্তি!

নাটোরে যৌন নিপীড়ক শিক্ষক সাইফুলের কীর্তি!
শিক্ষক সাইফুল ইসলাম - ছবি : জাগরণ

একের পর এক বের হচ্ছে নাটোর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদালয়ের ছাত্রীদের যৌন নিপীড়নকারী শিক্ষকদের খোঁজ। সম্প্রতি শারীরিক শিক্ষা শিক্ষক আব্দুল হাকিম গ্রেফতার হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হচ্ছে শিক্ষক কর্তৃক বিভিন্ন সময়ে ছাত্রীদের যৌন নিপীড়নের ঘটনা। বছরখানেক আগে প্রাক্তন এক ছাত্রীর সাথে ঘটে যাওয়া বর্তমানে কর্মরত এক শিক্ষকের নিপীড়নের ঘটনা ফেসবুকে উঠে এলে বেরিয়ে আসে ওই শিক্ষকের কুকীর্তি।

আলোচিত ওই শিক্ষকের নাম সাইফুল ইসলাম। তিনি নাটোর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের গণিতের শিক্ষক। ওই শিক্ষকের সাথে স্কুলের প্রাক্তন এক ছাত্রীর ফেসবুক কথোপকথন এসেছে এ প্রতিবেদকের কাছে। এর সূত্র ধরে অনুসন্ধান চালিয়ে বের করা হয়েছে গত ৩ দিনে ঘটে যাওয়া বেশ কিছু ঘটনা, যা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। গত ২৬ আগস্ট তৃতীয় শ্রেণির এক ছাত্রীর অভিভাবকের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গ্রেফতার হন স্কুলের শারীরিক শিক্ষা শিক্ষক আব্দুল হাকিম।

এ সংবাদ ওইদিন বিকেল থেকে স্থানীয় বিভিন্ন অনলাইন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর ভাইরাল হয়। নাটোর থেকে প্রকাশিত একটি অনলাইন পত্রিকার ফেসবুক পেজের কমেন্টে শহরের লালবাজার এলাকায় বসবাসকারী স্কুলের প্রাক্তন এক ছাত্রী তার এক সহপাঠীকে শিক্ষক সাইফুল কর্তৃক নিপীড়নের ঘটনা প্রকাশ করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সাইফুল ওই ছাত্রীকে ফেসবুকের মন্তব্য প্রত্যাহারে হুমকি দেন। রাজি না হলে মন্তব্যকারী ওই তরুণীর বাড়িতে গিয়ে তাকে হুমকি দেন। তরুণী ভীত হয়ে মন্তব্যটি প্রত্যাহার করেন।
পুরো বিষয়টি তরুণী তার এক ভাইকে জানান। সেলফোনে ওই ভাই সাইফুলের সাথে কথা বললে উল্টো তরুণীকে দেখে নেয়ার কথা বলে তার বাড়িতে আসেন। ততক্ষণে মন্তব্য প্রত্যাহারের বিষয়টি না জেনে তরুণীর বাড়িতে এসে সাইফুল জানতে পারেন তরুণীর ভাই শহরের প্রভাবশালী ব্যক্তি। এতে ভীত হয় ক্ষমা চান শিক্ষক সাইফুল। স্থানীয়রা বিষয়টি জানার পর ওই রাতেই লালবাজার এলাকায় সাইফুলকে গণপিটুনি দেন। পরদিন সাইফুলের সাথে তরুণীর সহপাঠীর ফেসবুক কথোপকথন ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। ওইদিন রাতে কথোপকথনের চৌকস অংশ পৌঁছায় এ প্রতিবেদকের কাছে।

কথোপকথনে শিক্ষক সাইফুল ওই ছাত্রীকে সরাসরি যৌন সম্পর্ক স্থাপনের প্রস্তাব দেন। এর জন্য তার স্ত্রীকে তিনি বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দেয়ারও কথা বলেন। সাইফুল জানান, ছাত্রীটিকে পাওয়ার জন্য তার চোখের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। এ জন্য ছাত্রীর শরীরের স্পর্শকাতর অঙ্গের ছবিও চান তিনি।

গত ২৬ আগস্ট রাতে লালবাজারের ঘটনায় ২৮ আগস্ট সকালে বিদ্যালয়ে সাইফুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিতে আসে ফেসবুকে মন্তব্যকারী সেই তরুণীর পরিবার। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুল মতিন অভিযোগের বিষয়ে সাইফুলকে জেরা করলে প্রথমে তিনি অস্বীকার করেন। পরে কথোপকথনের স্ক্রিনশর্ট দেখালে হাত-পা ধরে ক্ষমা চান সাইফুল। এ ঘটনা জানার পর জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাইফুলকে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে ডাকা হয়।

তবে শিক্ষক সাইফুলের বিরুদ্ধে রহস্যজনকভাবে এখন আর অভিযোগ করতে রাজি নন ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত শিক্ষক সাইফুলের বক্তব্য নিতে একাধিকবার সেলফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

নাটোর জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আকরামুল ইসলাম 'সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না পাওয়ায়' সাইফুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করে সতর্ক করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ত্বরিৎ পদক্ষেপ নিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুলিশের এমন ভূমিকাকে স্বাগত জানিয়েছেন। তবে স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুল মতিন শুরুতে অভিযোগের 'তেমনটা জানেন না' বলে জানালেও পরে স্বীকার করেন, সাইফুলের বিরুদ্ধে তদন্ত হচ্ছে।

এনআই

আরও পড়ুন