• ঢাকা
  • সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৩, ২০১৯, ১০:২২ এএম
সর্বশেষ আপডেট : সেপ্টেম্বর ৩, ২০১৯, ১০:২২ এএম

দালালের ফাঁদে ধুঁকছে জামালপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস

দালালের ফাঁদে ধুঁকছে জামালপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস

দালালের আখড়ায় পরিণত হয়েছে জামালপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস। এক দালাল টপকে এক পা বাড়ালেই আরেক দালালের খপ্পরে পড়তে হয়। বহিরাগত দালাল ছাড়াও নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত আনসার সদস্যরাও দালালের ভূমিকায় আবর্তিত হয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে টাকা। সামনের সড়ক থেকে অফিসে ঢোকার গলিসহ অফিসের ভেতরেও ফাঁদ পেতে রেখেছে সংঘবদ্ধ দালাল চক্র। এই ফাঁদে আটকে পড়ে নির্ধারিত ফি’র চেয়ে তিনগুন বেশি টাকা গুনতে হচ্ছে পাসপোর্ট করতে আসা লোকজনদের। অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছে টাকা ছাড়া সেবা মেলে না। 

জামালপুর শহরের পশ্চিম কাচারী পাড়ায় আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস যেন এক বাজপাখিদের অভয়ারণ্য। পাসপোর্ট করতে আসা লোকজনদের দেখলে ছুঁ মেরে ধরে। তাদের নিয়ে দালালে দালালে চলে টানাটানি। পাসপোর্ট করতে গিয়ে নানা বিড়ম্বনার শিকার হতে হয় এমনই অভিযোগ করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভুক্তভোগী।

অনুসন্ধানে জানা যায়, পাসপোর্ট অফিসের গলিতে পা পড়তেই দালালরা ঘিরে ধরে জানতে চায় ভাই পাসপোর্ট করবেন? নরমাল না ইমার্জেন্সি? অযাচিত এসব প্রশ্নের উত্তর না দিলে কোন কোন দালাল বলে উঠে যেখানেই যান আমাদের ছাড়া কাজ হবে না। আপনি করলে যে কাজ দেরিতে হবে, আমরা করলে সে কাজ দ্রুত হয়ে যাবে। পুলিশ ভেরিফিকেশনেরও দায়িত্ব আমাদের। বিনিময়ে গুনতে হবে অতিরিক্ত টাকা। জানতে চাই, নরমাল পাসপোর্টের জন্য কত দিতে হবে? দালাল চক্রের সদস্য বাদশা মিয়া বলেন, অফিস খরচাপাতি মিলিয়ে ৫ হাজার দিলেই হবে। সরকার নির্ধারিত নরমাল পাসপোর্টে ৩ হাজার টাকা ৪৫০ টাকার কথা তাকে বলতেই তিনি বলে উঠেন ছোট মিয়া বড় মিয়া সব মিয়ারেই দিতে হবে, এর কমে হবে না। ইমার্জেন্সি পাসপোর্ট করতে কত লাগবে জানতে চাইলে বলেন, ৯ হাজার টাকা লাগবে। অথচ সরকারি রেট ৬ হাজার ৯শ টাকা। একটু এগিয়ে গেলেই অফিসের গেইটে পড়তে হয় নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত আনসার সদস্যদের খপ্পরে। সেখানেও পাসপোর্ট সেবা প্রার্থীদের নিয়ে চলে টানাহেঁচড়া। প্রতি পাসপোর্টে আনসার সদস্য ১শ টাকা, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর ২শ টাকা, বায়োমেট্রিক অপারেটর ২শ টাকা ও সিল স্বাক্ষরে ৫শ টাকা অফিস খরচ দিতে হয় বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কজন দালালের সাথে কথা বলে জানা যায়। 

পাসপোর্ট অফিস ঘিরে গড়ে উঠেছে সংঘবদ্ধ দালাল চক্র। এই দালাল চক্রের মূল হোতা মতি মিয়া। অফিসের সামনেই তার দোকান। দোকানটি এখন ছায়া পাসপোর্ট অফিস। মতি মিয়ার দারস্থ হলে পাসপোর্টের আবেদন ফরম থেকে শুরু সকল সেবাই মেলে। মতি মিয়ার নেটওয়ার্কে রয়েছে আব্দুল্লাহ, বাদশা, রানা, রিপন-১, রিপন-২, শফিকুল, শাহাবুদ্দি, সুমন, রুবেল, আল-আমিন আরমানসহ প্রায় অর্ধশত দালাল। এর আগে মতি মিয়া ঢাকার আগারগাঁওয়ে পাসপোর্ট অফিসের দালাল ছিল। তিনি দালালদের নাটের গুরু সেঁজে বনে গেছেন কোটিপতি। এর আগে র‌্যাব অভিযান চালিয়ে দালাল মতি মিয়াকে গ্রেপ্তার করেছিল। জেল থেকে বের হয়ে ফের পুরনো কায়দায় দালাল চক্রের নেটওয়ার্ক চালু রেখেছে। চক্রটি স্থানীয় বিধায় পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও তাদের কাছে অসহায়। নিরাপত্তাহীনতায় উদ্বেগ উৎকণ্ঠার মধ্যে কাটে সবসময়। ইতোপূর্বে দালালদের হামলার শিকার হয়েছিলেন রফিকুল ইসলাম ও বেলাল হোসেন নামে দুই সহকারী পরিচালক। হামলাকারীদের বিরুদ্ধে মামলা হলেও এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছে দালাল চক্র। একাধিকবার পুলিশ ও র‌্যাবের অভিযানে দালালরা গ্রেপ্তার হলেও আজও দালাল মুক্ত হয়নি জামালপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস।

জামালপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক নাজমুল আহসান হাবীব বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই স্থানীয়রা এ কাজে জড়িত। দালাল মুক্ত করতে হলে, স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনসহ সকলের একযোগে কাজ করতে হবে। নতুন ভবনে স্থানান্তরিত হলে অবস্থার উত্তরণ ঘটবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তিনি।

কেএসটি

আরও পড়ুন