• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ০৭ মে, ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৯, ০৮:৫৪ এএম
সর্বশেষ আপডেট : সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৯, ০৮:৫৫ এএম

ফুলছড়ি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স : জনবল সংকটে স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত

ফুলছড়ি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স : জনবল সংকটে স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত

গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জনবল সংকটের কারণে স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হচ্ছে। উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের প্রায় ৩ লক্ষাধিক মানুষ চিকিৎসা সেবার জন্য এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ওপর নির্ভরশীল। এছাড়া পার্শ্ববর্তী সাঘাটা ও সদর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের মানুষ এ হাসপাতালেই চিকিৎসা নেন। চরাঞ্চল বেষ্টিত এ উপজেলার অধিকাংশ মানুষ দরিদ্রসীমার নিচে বাস করে। প্রতিদিন স্বল্প আয়ের মানুষেরা এ হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিয়ে থাকে। তাদের চিকিৎসার জন্য একমাত্র ভরসা এ হাসপাতালটি। বিগত সময়ে বিভিন্ন কারণে হাসপাতালটিতে অচলাবস্থা তৈরি হলেও বর্তমানে স্থানীয় সাংসদ জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার এডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়ার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে ইউএইচএফপিও, আরএমও, চিকিৎসক এবং সিনিয়র স্টাফ নার্সসহ অন্যান্য কর্মচারীদের আন্তরিক সেবাদানের প্রচেষ্টায় জনগণের মাঝে আস্থা ফিরে আসছিল।

কিন্তু জনবল সংকটের কারণে এই হাসপাতালটিতে চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, ফুলছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৩১ শয্যা হতে ৫০ শয্যায় উন্নতি হলেও এখানে জনবল রয়েছে ৩১ শয্যার।

হাসপাতালটিতে ৯ জন ডাক্তারের স্থলে মাত্র ৪ জন ডাক্তার কর্মরত আছেন। আবাসিক মেডিকেল অফিসারসহ ৫ জন জুনিয়ার কনসালটেন্টের মধ্যে গাইনী এন্ড অবস, মেডিসিন, সার্জারি ও এনেসথেসিয়া কনসালটেন্টের পদ শূন্য রয়েছে। দীর্ঘদিন হলো ডেন্টাল সার্জন ও মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ডেন্টাল) পদ দুটি ফাঁকা পড়ে রয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক ডেলিভারিসহ মাতৃস্বাস্থ্য নিশ্চিতকরণে ৪ জন মিড ওয়াইফের ৩ জন নিয়মিত কাজ করছেন ১ জন জেলা হাসপাতালে ডেপুটেশনে কাজ করছেন। এক্ষেত্রেও আলট্রাসনোগ্রাম মেশিন না থাকায় অনেক ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত সেবা প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না। 

ক্যাশিয়ারের ১টি পদ থাকলেও সেটি শুন্য রয়েছে। পরিসংখ্যান পদটি ফাঁকা হলেও এ পদে এখনও পদায়ন করা হয়নি। ফার্মাসিস্ট এবং স্টোর কিপারের ২টি পদ ফাঁকা রয়েছে।

এখানে নার্সের ১৪টি পদের মধ্যে কর্মরত আছেন ১২ জন, অফিস সহকারী ৪টি পদের মধ্যে কর্মরত আছেন ১ জন। নিরাপত্তা প্রহরী ২টি পদের মধ্যে কর্মরত আছেন ১ জন, বাবুর্চি ২টি পদের মধ্যে কর্মরত আছেন ১ জন। টিকিট কাউন্টারে বাধ্য হয়ে এমএলএসএস দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে। 

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি নজরে এসেছে তা হল- পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা কর্মীর সমস্যা। পরিচ্ছন্ন কর্মীর মোট পদ ৫টি। এরমধ্যে ১ জন ডেপুটেশনে জেলা হাসপাতালে কর্মরত রয়েছে। ১ জন নিয়মিত রংপুরে বসবাস করে এবং কাজ না করেই বেতন  ভাতা উত্তোলনের জন্য নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করে বলে জানা যায়। বাকি ৩ জনের ১ জন চাকরি ছেড়ে দেওয়ার জন্য আবেদন করেছে। এমতাবস্থায় মাত্র ২ জন অনিয়মিত কাজ করলেও ডেঙ্গুসহ বর্তমান সংকটকালীন সময়ে পুনরায় স্যানিটারি ইন্সপেক্টর ও ১ জন পরিচ্ছন্নকর্মীকে জেলায় বদলীর আদেশ দেয়া হয়েছে। বর্তমানে কার্যত ১ জন পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা কর্মী কাজ করছে। এভাবে হাসপাতালের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা রক্ষা করা একেবারেই দুরুহ হয়ে পড়েছে। 

ফুলছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জি.এম. সেলিম পারভেজ বলেন, হাসপাতালটিকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করে অবকাঠামো নির্মাণ করা হলেও এখনও জনবল নিয়োগ দেয়া হয়নি। চরাঞ্চল বেষ্টিত অনগ্রসর এ উপজেলার মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে অতিদ্রুত ৫০ শয্যার জন্য প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ প্রদান করতে তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. রফিকুজ্জামান জানান, ১২ জন সিনিয়র স্টাফ নার্স ব্যতীত অধিকাংশ ক্ষেত্রেই জনবলের সংকট রয়েছে। বিষয়টি ডেপুটি স্পিকার মহোদয় এর সভাপতিত্বে উপজেলা স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা কমিটির মিটিং-এ আলোচনা হয়েছে এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জনবল চেয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। স্বল্প সংখ্যক ডাক্তার ও সাপোর্ট স্টাফ নিয়ে সাধ্যমত সেবা দেয়ার চেষ্টা করছি। ইতোপূর্বে বিভিন্ন কারণে হাসপাতালটিতে অচলাবস্থা তৈরি হলেও বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত আরএমও, চিকিৎসক এবং নার্সসহ অন্যান্য সকলের আন্তরিক সেবাদানের মাধ্যমে এই হাসপাতালের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা ফিরে এসেছে। আমিসহ আমার সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীর আন্তরিক প্রচেষ্টা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতিতে আমরা সার্থকভাবে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছি। একইভাবে ডেঙ্গু পরিস্থিতিতে জনগণের পাশে রয়েছি।

ফুলছড়িবাসীর চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ একান্ত প্রয়োজন বলে মনে করছেন এলাকার সচেতন মানুষ।

কেএসটি

আরও পড়ুন