• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৯, ০৪:০৩ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৯, ০৪:০৩ পিএম

রিফাত হত্যা মামলা : পুলিশ প্রতিবেদনে যা আছে

রিফাত হত্যা মামলা : পুলিশ প্রতিবেদনে যা আছে
ফাইল ছবি

বরগুনায় আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলার চার্জশিট (পুলিশের অভিযোগপত্র) দাখিলের ১৮ দিন পর এর কপি বাইরে প্রকাশিত হয়েছে। গত ২৬ জুন হত্যাকাণ্ডের ৬৬ দিন পর ১ সেপ্টেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও বরগুনা থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. হুমায়ূন কবির। তবে আদালতে চার্জশিট দাখিল করলেও মামলার আসামিপক্ষ অথবা মিডিয়াকর্মীরা চার্জশিটের কপি এত দিনে হাতে পাননি। বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) চার্জশিট আদালত গ্রহণ করার পর বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) কপি বাইরে প্রকাশিত হয়েছে। আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির আইনজীবী মাহাবুবুল বারী আসলামের কাছ থেকে চার্জশিটের কপি পাওয়া গেছে।

অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, নিহত রিফাত শরীফ বরগুনা থানা এলাকায় ডিশ লাইনের ব্যবসা করতেন। রিফাত শরীফ ও মামলার ১ নম্বর আসামি (বন্দুকযুদ্ধে নিহত) নয়ন বন্ড পূর্বে বরগুনা জিলা স্কুলে একসাথে লেখাপড়া করেছে। সে সুবাদে তাদের উভয়ের মধ্যে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব ছিল। রিফাত শরীফের সাথে আনুমানিক দুই বছর আগে থেকে আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সে সময় সরল বিশ্বাসে রিফাত শরীফ তার বন্ধু নয়ন বন্ডের সাথে (তৎকালীন প্রেমিকা) মিন্নির পরিচয় করিয়ে দেয়। এদিকে মিন্নির সাথে রিফাত শরীফের প্রেমের সম্পর্ক থাকা অবস্থায় রিফাতের অন্য মেয়েদের সাথেও প্রেমের সম্পর্ক ছিল, যা মিন্নি জানতে পারে। ২০১৮ সালের রমজান মাসে রিফাত শরীফ মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হয়ে দেড় মাস চিকিৎসাধীন ছিল। এসব কারণে রিফাত শরীফের সাথে মিন্নির সম্পর্কের কিছুটা দূরত্ব সৃষ্টি হয়। এ সুযোগে আসামি নয়ন বন্ড মিন্নির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে প্রেম নিবেদন করে এবং মিন্নিও তার প্রেম নিবেদনে সাড়া দিয়ে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি করে। একপর্যায়ে মিন্নি রিফাত শরীফ ও নয়ন বন্ড দুজনের সাথেই প্রেমের সম্পর্ক বজায় রাখে।

২০১৮ সালের ১৫ অক্টোবর মিন্নি ও নয়ন বন্ড বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়। ওই বিয়েতে নয়ন বন্ডের পক্ষে সাক্ষী ছিল মামলার ২ নম্বর আসামি রাকিবুল হাসান রিফাত ফরাজী এবং মিন্নির পক্ষে সাক্ষী হিসেবে ছিল নয়ন বন্ডের প্রতিবেশী ও বন্ধু সাইফুল ইসলাম মুন্না ও তার স্ত্রী মোসা. জান্নাতুল ফেরদৌস। ওই বিয়ের পর মিন্নি ও নয়ন বন্ড স্বামী-স্ত্রী হিসেবে প্রকাশ্যে এবং গোপনে সম্পর্ক বজায় রাখে। কিন্তু নয়ন বন্ডের সাথে বিয়ের পর মিন্নি ধীরে ধীরে জানতে পারে নয়ন বন্ড মাদক সেবনসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত এবং থানায় তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। এ কারণে নয়ন বন্ডের সাথে মিন্নির সম্পর্কের কিছুটা অবনতি হতে থাকে এবং রিফাত শরীফের সাথে পুনরায় সম্পর্ক শুরু হয়। মিন্নি ও তার পরিবার নয়ন বন্ডের সাথে বিয়ের বিষয়টি গোপন রাখে এবং বিবাহবিচ্ছেদও করেনি। গত ২৬ এপ্রিল বিবাহবিচ্ছেদ ছাড়াই রিফাত শরীফের সাথে পারিবারিকভাবে মিন্নির বিয়ে হয়। কিন্তু রিফাত শরীফের সাথে বিয়ের পর কলেজে যাওয়া-আসার নানা অজুহাতে মিন্নি নয়ন বন্ডের সাথে দৈহিক মেলামেশাসহ সকল প্রকার যোগাযোগ রক্ষা করে আসছিল। বিষয়টি রিফাত শরীফ জানতে পেরে মিন্নিকে নয়ন বন্ডের সাথে যোগাযোগ রাখতে নিষেধ করে। এ ঘটনায় মিন্নি ও রিফাত শরীফের সাথে পারিবারিক কলহসহ বিভিন্ন সময় ঝগড়াঝাঁটি হয়। একপর্যায়ে মিন্নি রিফাতের কাছে ডিভোর্স চায় এবং পূর্বের স্বামী নয়ন বন্ডের কাছে ফিরে যেতে চায়।

অন্যদিকে রিফাত শরীফের সাথে মিন্নির বিয়ের পূর্বে এ বছরের মার্চ মাসে নয়ন বন্ড স্থানীয় ইউটিডিসি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে জন্মদিন উদ্‌যাপন করে এবং ওই অনুষ্ঠানে প্রধান মেহমান ছিল আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি। ওই অনুষ্ঠানটি নয়ন বন্ডের বন্ধু হেলাল শিকদার তার মোবাইলে ভিডিও করে এবং তার ফেসবুক আইডিতে পোস্ট করে। পরে রিফাত শরীফ ওই ভিডিও দেখতে পায় এবং গত ২৪ জুন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে হেলাল শিকদারকে ডেকে তার ব্যবহৃত মোবাইল সেট রিফাত শরীফ নিয়ে যায়। বিষয়টি হেলাল শিকদার নয়ন বন্ডকে জানালে নয়ন বন্ড আসামি রিফাত ফরাজীকে জানায়। পরবর্তী সময়ে রিফাত ফরাজী মোবাইল ফোনে রিফাত শরীফকে হেলালের মোবাইল ফেরত দেয়ার কথা বললে রিফাত শরীফ আসামি রিফাত ফরাজীকে মা-বাবা তুলে গালিগালাজ করে। পরে রিফাত ফরাজী মিন্নিকে ফোন করে রিফাত শরীফের কাছ থেকে মোবাইলটি উদ্ধার করে ফেরত দিতে বলে। যে অনুযায়ী হেলালের মোবাইল নেয়ার কারণে রিফাত শরীফকে মিন্নি ভর্ৎসনা করে। এ কারণে রিফাত শরীফ ক্ষুব্ধ হয়ে মিন্নিকে চড়-থাপ্পড়সহ তলপেটে লাথি মারে। রিফাত শরীফ কর্তৃক মিন্নিকে নয়ন বন্ডের সাথে প্রেমে বাধা দেয়াসহ নিজের ইচ্ছেমতো চলাচলে বাধা দেয়া, কলেজে গিয়ে মিন্নির ওপর নজরদারি করা এবং সর্বশেষ হেলালের মোবাইল ফোন উদ্ধারকে কেন্দ্র করে মিন্নিকে মারধর করার কারণে রিফাত শরীফের ওপর ক্ষুব্ধ হয় মিন্নি। এসব কারণে রিফাতকে খুন করার পরিকল্পনা নিয়েছে বলে মিন্নি কান্নাকাটি করে মোবাইল ফোনে আসামি নয়ন বন্ডকে জানিয়েছে। সে অনুযায়ী রিফাতকে হত্যার এক দিন আগে ২৫ জুন মিন্নি কলেজে যাওয়ার কথা বলে নয়ন বন্ডের বাসায় যায় এবং দীর্ঘ সময় ধরে রিফাত শরীফকে হত্যার পরিকল্পনা করে। নয়ন বন্ড মিন্নির কাছ থেকে রিফাত শরীফকে হত্যার প্রস্তাব পেয়ে পথের কাঁটা দূর করতে রিফাত শরীফকে হত্যার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে এবং ওই হত্যা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে ‘বন্ড ০০৭’ গ্রুপের সদস্য এবং তার অনুসারী আসামি রিফাত ফরাজী, রিশান ফরাজী, রায়হান, অলিউল্লাহ অলি, টিকটক হৃদয়, রাব্বি আকন, মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত, রাকিবুল হাসান রিফাত হাওলাদার, রাকিবুল হাসান নিয়ামত, তানভীর, নাজমুল হাসানকে নিয়ে ২৫ জুন বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বরগুনা সরকারি কলেজের শহীদ মিনারে মিটিং করে রিফাত শরীফকে হত্যার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ছক করে এবং হত্যাকাণ্ডে অংশগ্রহণের জন্য ২৬ জুন সকাল ৯টায় বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে উপস্থিত থাকতে নির্দেশ দেয়। তারই ধারাবাহিকতায় ২৬ জুন সকালে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

এনআই

আরও পড়ুন