• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৯, ০৯:৫৩ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৯, ০৯:৫৩ পিএম

দক্ষ মাঝি হওয়ার স্বপ্নে বিভোর উপকূলের শিশুরা

দক্ষ মাঝি হওয়ার স্বপ্নে বিভোর উপকূলের শিশুরা
পাথরঘাটার বলেশ্বর নদীতে মাছ ধরছে তিন কিশোর  -  ছবি : জাগরণ

হাসি-খুশি ও আনন্দ-উল্লাসে বেড়ে ওঠার কথা ওদের। ওদের থাকার কথা ছিল স্কুলে। হাতে বই, খাতা, কলম, কাঁধে স্কুলব্যাগ। শিক্ষার আলোয় আলোকিত হওয়ার স্বপ্ন দেখার কথা ছিল ওদের। কিন্তু ওরা নদী ও সমুদ্রে মাছ ধরায় ব্যস্ত। ওদের কাঁধে সংসারের অভাব-অনটনের বোঝা। ওরা দক্ষ জেলে থেকে দক্ষ মাঝি হওয়ার স্বপ্নে বিভোর। নৌকা বা ট্রলারের নেতৃত্ব দেয়ার স্বপ্ন লালন করতে করতে সংসারজীবনে প্রবেশ করে ওরা।

যুগ যুগ ধরে এ নিয়ম চলছে উপকূলের অবহেলিত পাথরঘাটার জনপদে। দারিদ্র্যের সংসারে একটু আয়ের আশায় এখানকার শিশুরা কম বয়সেই বেছে নিতে বাধ্য হয় নদী ও জেলেজীবন। অনিশ্চয়তায় বিবর্ণ হয়ে ওঠে ওদের শৈশব। শিশুশ্রমের বেড়াজালে বন্দিজীবন কাটে এসব শিশুর। এভাবেই উপকূলীয় এলাকা বরগুনার পাথরঘাটার হাজারো শিশু সুখের শৈশব ছেড়ে কষ্টের কর্মজীবনে প্রবেশ করে।

হয় না আর স্কুলে যাওয়া ওদের। এসব শিশু কখনো নদীতে, কখনো সমুদ্রে জাল টেনে বাগদা রেণু আহরণ করে; কখনো নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল টেনে ফাইশা, পোয়াজাতীয় মাছ ধরে। মাছ আহরণে বড়দের সঙ্গে সমানতালে কাজ করে আবার অনেকে সস্তায় শ্রম বিক্রি করে। এর বাইরেও কিছু শিশু বিভিন্ন বরফ কল, ওয়ার্কশপ, হোটেল-রেস্টুরেন্টে কাজ করে। অনেকে রিকশা চালায় বা দিনমজুর হিসেবেও কাজ করে। উপকূলীয় অঞ্চলের জেলেপল্লীর অধিকাংশ শিশুর জীবনের গল্প এমন।

অভাব-অনটনের সঙ্গে যুদ্ধ করতে করতে ক্লান্ত জেলে পরিবারের অভিভাবকরা। সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবার সময় পান না। সন্তানদের পড়ালেখা করানোর প্রতি আগ্রহ নেই তাদের। আধুনিক সভ্যতা থেকে পিছিয়ে পড়া এই জনপদের অভিভাবকদের অসচেতনতা ও অভাবের কারণেই শিক্ষা পাচ্ছে না এখানকার শিশুরা। এ কারণেই উপকূলের নদীসংলগ্ন স্কুলগুলোতে তেমন শিক্ষার্থীর দেখা মিলছে না। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে এবং শিশুদের শিক্ষাব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সরকার নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও অভাবের কারণে সব চেষ্টাই বিফল।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার বলেশ্বর নদীসংলগ্ন চরলাঠিমারা, জ্বিনতলা, পদ্মা, টেংরা, রুইতা, কোড়ালিয়া ও বিষখালী নদীসংলগ্ন কালমেঘা, কুপদোন, কাকচিড়া, বাইনচটকীসহ বিভিন্ন এলাকার বেশির ভাগ শিশু মাছ শিকারে নিয়োজিত থাকে। এ এলাকার ছেলেমেয়েদের খুব একটা পড়াশোনার সুযোগ হয় না। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধের ঢালে ও বাঁধের ভেতরে-বাইরে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর শিশুরা এভাবেই বেড়ে ওঠে।

একাধিক শিশুর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ইচ্ছা থাকলেও অভাবের কারণে পড়াশোনা করতে পারছে না। কেউ কেউ হয়তো প্রথম কিংবা দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছে। এখন তারা নদীতে মাছ ও কাঁকড়া ধরছে। বিক্রি করে যে টাকা পায় তা সংসারের প্রয়োজনে খরচ হয়।

জেলেপল্লির বেশ কয়েকজন অভিভাবক বলেন, আমরা দিন আনা দিন খাওয়া মানুষ। মাছ না পেলে সংসার চালাতে কষ্ট হয়। নদীতে না গেলে তো জীবিকার পথ বন্ধ হয়ে যাবে। ছেলেমেয়ে কীভাবে স্কুলে পাঠাব, লেখাপড়া করানোর সামর্থ্য নেই। পেটের ক্ষুধা নিবারণের জন্য আমাদের শিশুদের অল্প বয়সেই কাজে নামাতে হয়।

পাথরঘাটা সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা খাদিজা খানম বলেন, স্কুলে পড়ালেখার জন্য এখন তেমন কোনো খরচই দরকার হয় না। গরিব পরিবারের শিশুদের লেখাপড়ার জন্য সরকার সর্বাত্মক সহযোগিতা করছে। বিভিন্ন সময় বিদ্যালয়কেন্দ্রিক অভিভাবক ও মা সমাবেশ করা হচ্ছে। সকল শিশুকে সবার জন্য শিক্ষা কর্মসূচির আওতায় আনার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি সচেতনতার মাধ্যমে ঝরে পড়া শিশুদের বিদ্যালয়ে ভর্তি করার কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. হূমায়ুন কবির বলেন, শিশুশ্রম বন্ধে আইন থাকলেও সব সময় আইন দিয়ে সবকিছুর সমাধান হয় না। সরকারের একার পক্ষে এই শিশুশ্রম বন্ধ করা সম্ভব নয়। আমাদেরকেও সচেতন হতে হবে। পাশাপাশি অন্যদেরও সচেতন করে গড়ে তুলতে হবে, যাতে করে শিশুশ্রম বন্ধ হয়।

এনআই

আরও পড়ুন