• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১০ মে, ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৯, ০২:২৩ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৯, ০২:২৩ পিএম

কুড়িগ্রামে স্বামী-স্ত্রীর মরদেহ উদ্ধার

কুড়িগ্রামে স্বামী-স্ত্রীর মরদেহ উদ্ধার
মামা সাদ্দাম হোসেনের কোলে ৮ মাস বয়সী রিফাত  -  ছবি : জাগরণ

ভোর পেরিয়ে সকাল হলে ঘরে শোনা যায় আট মাস বয়সী শিশু রিফাতের কান্না। ঘরে মা-বাবা থাকলেও নেই কারও শব্দ। দীর্ঘক্ষণ শোনার পর বাড়ির লোকজন গিয়ে দরজা খোলা পেয়ে ঘরে ঢুকে দেখতে পায় বীভৎস দৃশ্য। মায়ের মরদেহ পড়ে আছে বিছানায়। পাশেই কাঁদছে রিফাত। এর মধ্যে পাশের রুমে গিয়ে তারা দেখতে পায় আরেক দৃশ্য। সেখানে চেয়ারে বসা অবস্থায় পড়ে রয়েছে রিফাতের বাবা নজরুল ইসলাম ম্যানার মরদেহ। সারা বাড়িতে পড়ে যায় কান্নার রোল।

শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সকালে এ ঘটনা ঘটেছে কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী বাজার-সংলগ্ন ভূষুটারী এলাকায়। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নাগেশ্বরী থানার পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। পরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন কুড়িগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মেনহাজুল ইসলাম।

স্থানীয়রা জানান, ভূষুটারী গ্রামের মৃত ছকিয়ত উল্লার ছেলে নজরুল ইসলামের প্রথম স্ত্রী মর্জিনা বেগমের দুই ছেলে ও তিন মেয়ে হওয়ার পর দ্বিতীয় বিয়ে করেন। দ্বিতীয় স্ত্রী রুমি বেগমের সাথে থাকতেন ভূষুটারীতে। দ্বিতীয় স্ত্রীর পক্ষের আট মাস বয়সী একটি ছেলে আছে।

বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) রাতে খাওয়াদাওয়া শেষে ছোট স্ত্রী রুমি আক্তারের পাশাপাশি রুমে ঘুমান নজরুল ইসলাম ম্যানা। সকাল ৮টার দিকে তাদের আট মাসের শিশুসন্তান দীর্ঘক্ষণ কান্না করলে কোনো সাড়া-শব্দ না পেয়ে বাড়ির লোকজন রুমে গিয়ে দুই রুমে দুজনের মরদেহ দেখতে পান।

এলাকাবাসী জানান, ম্যানা কাঠখড়ির ব্যবসা করতেন। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে দাদন ব্যবসা করে আসছেন তিনি। অনেকের সাথে তার আর্থিক লেনদেন ছিল। তবে বর্তমানে কার কার সাথে রয়েছে, সেটা ঠিক বলা যাচ্ছে না। অনেকের ধারণা, হত্যার পেছনে আর্থিক লেনদেনের বিষয় থাকতে পারে।

পরিবারের লোকজন জানান, কারও সাথে তাদের বা তার ভাইয়ের বিরোধ নেই। ম্যানার বড় ভাই ফজর আলী বলেন, ‘সে রাত-বিরাতে বাইরে যেত। অনেকের সাথে তার সম্পর্ক ছিল। তার মদ্যপানের অভ্যাস ছিল।’

নিহত রুমির ভাই সাদ্দাম হোসেনের কোলে আট মাস বয়সী রিফাত। তার চোখেও যেন পানি। যদিও সে জানে না এ বয়সে হারাল মা-বাকে। আর কখনো মায়ের আদর পাবে না। বাবার সোহাগ মিলবে না তার। এ ঘটনায় সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘আমরা বাড়ি থেকে খবর পেয়ে এসেছি। আগে বোন বা দুলাভাইয়ের কাছ থেকে শুনিনি যে কারও সাথে তাদের বিরোধ আছে। তবে অনেকের সাথে তার টাকার লেনদেন রয়েছে। এ ঘটনার সাথে জড়িতদের শাস্তি চাই।’ কোলের বোনের ছেলের দিকে চেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন সাদ্দাম। বলেন, এই শিশু বাচ্চাটার কী হবে।

সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। নাগেশ্বরী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রওশন কবীর জানান, মরদেহে তেমন আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। মহিলার মুখ ও নাক দিয়ে রক্ত ঝরার চিহ্ন রয়েছে। মরদেহ দুটি ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে।

এরপর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন কুড়িগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মেনহাজুল আলম। তিনি বলেন, ‘আমরা পরিবারের লোকজনের সাথে কথা বলার চেষ্টা করছি। সব দিক মাথায় রেখে তদন্ত শুরু হয়েছে। আশা করি অল্প সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্টদের আইনের আওতায় আনা যাবে।’

এনআই

আরও পড়ুন