• ঢাকা
  • সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: অক্টোবর ১৯, ২০১৯, ০৮:৩৫ এএম
সর্বশেষ আপডেট : অক্টোবর ১৯, ২০১৯, ০৮:৩৫ এএম

হারিয়ে যেতে বসেছে নান্দনিক সৌন্দর্যের নান্দাইল দীঘি 

হারিয়ে যেতে বসেছে নান্দনিক সৌন্দর্যের নান্দাইল দীঘি 

কালের বিবর্তণে হারিয়ে যেতে বসেছে নান্দনিক সৌন্দর্যের নান্দাইল দীঘি। ইতিহাস, ঐতিহ্য, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় নানান উপাদানে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। প্রত্মতাত্ত্বিক নিদর্শন কিংবা মনুমেন্টে পরিপূর্ণ এই দেশ। খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দির পর হতে নানা ধর্মের অনুসারী নৃপতি, রাজা, বাদশাগণ শাসন করে গেছে সুজলা, সুফলা শস্য শ্যামলে ঘেরা বর্তমানের এই সোনার বাংলাদেশ। ওই সব রাজা বাদশা বা নৃপতিগণ স্মরণীয় হবার আশায় নির্মাণ করে গেছেন নানা ধরনের জন কল্যাণসহ বহুমাত্রিক আনন্দ বিনোদনের স্থাপত্ব শৈলী। যার মধ্যে রয়েছে মসজিদ, মন্দির, বিহার, মাঠ নির্মাণ, বড় বড় জলাশয় খনন ইত্যাদি। ফলে সৃষ্টি হয়েছে প্রত্মতাত্ত্বিক স্মৃতি বিজড়িত বিভিন্ন নির্মাণ শৈলী। 

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরুপ লীলাভূমি ঐতিহাসিক নান্দাইল দীঘি- এটা জয়পুরহাট জেলার কালাই উপজেলায় অবস্থিত। এলাকাটির দৃষ্টিনন্দন আকর্ষণীয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। শীতে বিভিন্ন ধরনের অতিথি পাখির আগমন ঘটে। পিকনিক পার্টি ও পর্যটকদের আনাগোনা ঘটে প্রায় সারা বছরজুড়েই। তবে শীতকালে এর প্রবণতা বেশি হয়। 

নান্দাইল দীঘির নাম করণের ইতিহাস খুঁজে জানা যায়, করতোয়া নদী খনন করার ফলে এ অঞ্চলের পানি ওই নদীতে নেমে যাওয়ায় শুষ্ক মৌসুমে অর্থাৎ ফাল্গুন, চৈত্র ও বৈশাখ মাসে এ এলাকার মাঠ, ঘাট শুকিয়ে ফেঁটে চৌচির হয়ে যেত। ফলে চারদিকে শুধু খাঁ খাঁ করতো। সে সময়ে প্রজাকুলের দুঃখের কথা ভেবে রাজা নন্দলাল ১৬১০ খ্রিস্টাব্দে বিশালায়তনের এ দীঘিটি খনন করেন। রাজা নন্দলালের নাম থেকেই নান্দাইল দীঘির নামকরণ হয়। এর আয়তন প্রায় একশত একর। এর মাঝে ৬০ একর জলকার। স্বচ্ছ পানির দীঘিটি ১ কিলোমিটার লম্বাও বটে গভীর ও অনেক। দিঘীর চতুর্দিকে রয়েছে উঁচু নিচু টিলা এবং সবুজ শ্যামল বৃক্ষরাজি পরিবেষ্টিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলা। দীঘিটি সত্যিই পর্যটকদের আকৃষ্ট করে। জনশ্রুতি এ দীঘিটি ১ রাতে খনন করা হয়েছিল। এ সময়ে এই দীঘিতে ঘন বৃক্ষ ও ঝোপঝাড় ছিল। এর মধ্যে লুকয়ে থাকতো বাঘ এবং প্রহরীর ভূমিকায় থাকতো অসংখ্য সাপ। পূর্বপুরুষগণ বাঘ ও সাপের ভয় উপক্ষো করে যে যতটুকু পেয়েছে, ওইসব ঝোপ জঙ্গল কেটে দখলে নিয়েছে। বিস্তীর্ণ প্রায় তিন শতাব্দী পূর্বের জন মানবহীন। 

নান্দাইল দিঘী আর সে দিনের জলরাশিতে ঘুড়ে বেড়ানোর জন্যে রয়েছে একটি নৌকা। সময়ভেদে প্রতিদিন অসংখ্য দেশি বিদেশি পাখি ও বুনো হাঁস, সাঁরস, পানকৌরি পাখি, বকের সারি, রাজ হাঁস, চীনা হাঁসসহ নাম নাজানা বহুপ্রজাতির ও রঙ বেরঙের পাখি যেমন দীঘির সোভাবর্ধন করে তেমনই পর্যটকদের কাছে টানে। শীত মৌসুমে এদের আগমনে জেগে উঠা চর ও স্বচ্ছ পানিতে এক অনন্য দৃশ্যের সংমিশ্রণ। এছাড়া দীঘির টিলার উপর বসে প্রভাতে সূর্যোদয়ের দৃশ্য খুবই উপভোগ্য বটে। কিন্তু বর্তমানে চারধারের উঁচু টিলাগুলো কেটে বসতবাড়ি নির্মাণ করায় এর সৌন্দর্যহানী হয়েছে। 

বগুড়া জয়পুরহাট মহাসড়কের উত্তর পাশে বিশালায়তন দীঘিটি অবস্থিত। বগুড়া হতে বাস যোগে পুনট বাসট্যান্ডে নেমে অথবা জয়পুরহাট থেকে বাস যোগে কালাই বাসস্ট্যান্ডে নেমে রিক্সা ভ্যানে অনায়শে দীঘিতে যাওয়া যায়। এই ঐতিহাসিক দীঘিকে পর্যটন স্থান হিসাবে গড়ে তোলা সম্ভব। এ জন্য প্রয়োজন যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও সুষ্ঠু পরিকল্পনা। ভ্রমণকারীদের থাকার জন্য ১টি বড় ধরনের বিশ্রামাগার, ১টি রেস্টুরেন্ট, ১টি বোটানিক্যাল গার্ডেন, কৃত্রিম চিড়িয়াখানা, গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থা, প্রবেশদার, স্পিড বোট, একটি ওভার ব্রিজ স্থাপন করা এবং সার্বিক নিরাপত্তা একান্ত প্রয়োজন। তাহলে একদিকে যেমনি এর সৌন্দর্য ও গুরুত্ব বাড়বে তেমনি অপরদিক এখান থেকে সরকারের লাখ লাখ টাকা রাজস্ব আয় হবে। উত্তরাঞ্চলের অন্যতম দীঘিটিকে নতুন পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার প্রয়োজনীয় উপাদান রয়েছে। অন্যান্য ঐতিহাসিক স্থানের মূল্যায়ন হলেও দীর্ঘদিন যাবৎ এই দীঘিটি প্রায় অবহেলিত রয়েছে। বিগত সরকারের আমলে একাধিকবার দীঘিটিকে পর্যটন অধিদপ্তরের আওতায় নেওয়ার ঘোষণা থাকলেও অদ্যাবধি তা দৃশ্যমান নয়। শিক্ষক, চিকিৎসক, সমাজ সেবক ও সচেতন মহলের আশঙ্কা, সরকারিভাবে আশু প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে হয়তো এই ঐতিহাসিক স্থানটি একদিন বিলীন হয়ে যাবে। 

এলাকাবাসীর প্রাণের দাবি, ঐতিহাসিক দীঘির চারধারের এখনো যে কয়েকটি উঁচু টিলা রয়েছে- তা কেটে এর সৌন্দর্যহানী না করা হয় সে বিষয়ে প্রশাসন তৎপর হবেন। সেই সাথে অনতি বিলম্বে এ দীঘিটিকে পর্যটন অধিদপ্তরের অন্তর্ভুক্ত করে একে আধুনিক পর্যটন কেন্দ্রে হিসেবে ঘোষণা দেয়ার পদক্ষেপ নেবেন।

জয়পুরহাট জেলা কালাই উপজেলার নান্দাইল দীঘি ঘীরে পর্যটন সম্ভাবনাময় চিন্তা ভাবনা করা যায় কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে অত্র উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোবারক হোসেন বলেন, দীঘিটি নিঃসন্দেহে পর্যটন সম্ভাবনাময় একটি স্পট। এলাকার সৌন্দর্য বর্ধনে এবং ভ্রমণ বিলাশী পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে দীঘিটি ঘিরে রয়েছে বড় ধরনের চিন্তা ভাবনা। বিষয়টি কালাই, ক্ষেতলাল এবং আক্কেলপুর নিয়ে জয়পুরহাট-২ আসনের সাংসদ এবং জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনও জানেন উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, দীঘিটি অত্র এলাকার এবং ঐতিহাসিক গুরুত্ব বহন করে। সুতরাং শীত মৌসুম যেহেতু এসে পড়েছে আমরা চেষ্টা করছি ক্ষুদ্রাকারে হলেও একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া ও বাস্তবায়ন করা যাতে করে দীঘিটি আধুনকি পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলা সম্ভব হয়।  

কেএসটি

আরও পড়ুন