• ঢাকা
  • রবিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: নভেম্বর ৬, ২০১৯, ০৬:১৩ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : নভেম্বর ৬, ২০১৯, ০৬:১৫ পিএম

১১ হাজার বিজ্ঞানীর স্বীকৃতি

জলবায়ু বিপর্যয় : জরুরি অবস্থার মুখোমুখি পৃথিবী

জলবায়ু বিপর্যয় : জরুরি অবস্থার মুখোমুখি পৃথিবী

বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুপ প্রতিক্রিয়া সারা পৃথিবীকে জরুরি অবস্থার মুখোমুখি দাড় করিয়ে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্বের প্রায় ১১ হাজার বিজ্ঞানী।

বুধবার (৬ নভেম্বর) আমেরিকান ইনিস্টিটিউট অব বায়োলোজিকাল সায়েন্সেস (এইবিএস)-এর ওয়েব সাইটে প্রকাশিত খবরের তথ্য মতে, এই প্রসঙ্গে একটি বিশেষ গবেষণা প্রতিবেদনকে স্বীকৃতি দিয়েছেন বিশ্বের ১৫৩টি দেশের প্রায় ১১ হাজার বিজ্ঞানী।

এদিকে আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা ইউএনবি নিউজ প্রকাশিত খবরে বলা হয়, বিভিন্ন ক্ষেত্রের ৪০ বছরের তথ্য-উপাত্ত নিয়ে করা ওই গবেষণায় জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সংকট চিহ্নিত করতে বিশ্বব্যাপী সরকারগুলো ব্যর্থ হচ্ছে বলেও মন্তব্য করা হয়েছে।

সংকট মোকাবিলায় আমূল ও টেকসই পরিবর্তন ছাড়া বিশ্ব ‘অবর্ণনীয় দুর্ভোগের’ পথেই এগিয়ে যাচ্ছে বলেও এতে সতর্ক করা হয়েছে, জানিয়েছে সংস্থাটি।

গবেষকরা বলছেন, নৈতিক বাধ্যবাধকতার কারণেই তারা এই ভয়াবহ হুমকির মাত্রা নিয়ে সতর্ক করছেন। রেকর্ড রাখা শুরু হওয়ার পর থেকে গত মাসই ছিল বিশ্বের সবচেয়ে উষ্ণ অক্টোবর, উপগ্রহের তথ্যের বরাতে এমন প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার দিনই জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে নতুন ওই গবেষণার ফল প্রকাশিত হয়।

গবেষক দলের প্রধান সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. থমাস নিউসাম- ছবি: নিউজ.কম.এইউ

এতে আরও বলা হয়, কেবল ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা থেকেই  বৈশ্বিক উষ্ণতার সত্যিকারের বিপদের মাত্রা বোঝা যাবে না, দরকার আরও কিছু বিষয়ের দিকে নজর দেওয়া। সংকটের প্রকৃত স্বরূপ দেখাতে তারা বিভিন্ন ক্ষেত্রের তথ্য-উপাত্তও হাজির করেছেন, যা ‘গত ৪০ বছরের জলবায়ু পরিবর্তনের গুরুত্বপূর্ণ চিহ্নগুলোর সচিত্র সংকলন’।

গবেষকদের দেওয়া এ সূচকগুলোর মধ্যে আছে, মানুষ ও প্রাণীকূলের সংখ্যা বৃদ্ধি, মাথাপিছু মাংস উৎপাদন, বিশ্বজুড়ে বৃক্ষ আচ্ছাদিত স্থান হ্রাস এবং জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার।

গবেষণা প্রতিবেদনে গত কয়েক দশকে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধির ইতিবাচক দিকের কথাও এসেছে। বলা হয়েছে, প্রতি দশকে বায়ু ও সৌর ব্যবস্থাপনা ৩৭৩ শতাংশ হারে বাড়লেও ২০১৮ সালেও জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার এগুলোর চেয়ে ২৮ গুণ বেশি ছিল।

বিজ্ঞানীরা বলেন, “জরুরি অবস্থার অর্থ হচ্ছে যদি আমরা কার্বন নিঃসরণ না কমাই, গবাদিপশু উৎপাদন না কমাই, ভূমির বিনাশ ও জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার না কমাই, তাহলে পরিস্থিতি এখনকার চেয়েও ভয়াবহ আকার নেবে,” বলেছেন গবেষক দলের প্রধান সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. থমাস নিউসাম।

ক্যালিফোর্নিয়ার দাবানল- ফাইল ফটো

সংকট মোকাবিলায় বিজ্ঞানীরা এখনই জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহারে উচ্চহারে কার্বন ফি নির্ধারণ, জীবাশ্ম জ্বালানি নিয়ে কাজ করা কোম্পানিগুলোকে ভর্তুকি দেওয়া বন্ধ, তেল ও গ্যাসের স্থানে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহারবৃদ্ধি , মিথেন, হাইড্রোফ্লুরোকার্বনের ব্যবহার কমিয়ে আনা, জমির বিনাশ ঠেকানো, বন, তৃণভূমি ও ম্যানগ্রোভ বন যেগুলো বিপুল পরিমান কার্বন শোষণ করে তার পরিমাণ বাড়ানো, মানুষের খাদ্যভ্যাস বদলে ফেলা- বিশেষ করে মাংসে আসক্তি কমানো, খাদ্য অপচয় কমানো, কার্বন নিঃসৃত জ্বালানি নির্ভর অর্থনীতি ও প্রবৃদ্ধি থেকে সরে আসা এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার নিয়ন্ত্রণে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন।

 এ প্রসঙ্গে গবেষক দলের অন্যতম সদস্য ড. নিউসাম বলেন, “আমরা কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ বাড়িয়েছি, তাপমাত্রা বাড়িয়েছি; ৪০ বছর ধরে আমরা এটি জানি এবং ঠেকানোরও কোনো ব্যবস্থাও নিচ্ছি না; আমরা যে ভয়াবহ সমস্যায় পড়তে যাচ্ছি তা বুঝতে রকেট বিজ্ঞানী হওয়ার প্রয়োজন নেই।”

এসকে