• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৭, ২০১৯, ০৪:২৯ পিএম

শিক্ষকদের ব্যর্থতার কারণেই কোচিং বাণিজ্য

শিক্ষকদের ব্যর্থতার কারণেই কোচিং বাণিজ্য

কোচিং বাণিজ্যকে একটি নতুন ধরনের অপরাধ বলে মত দিয়েছেন হাইকোর্ট। কোচিং বাণিজ্য বন্ধে করা এক রিটের শুনানিতে আজ রোববার (২৭ জানুয়ারি) হাইকোর্ট এ কথা বলেন। 

রিটের শুনানিতে হাইকোর্ট বলেন, ক্লাস রুমে পড়ানোর ব্যর্থতার কারণেই  কোচিং বাণিজ্য হচ্ছে। এটি একটি নতুন মাত্রার অপরাধ। শুনানি শেষে কোচিং বাণিজ্য বন্ধের বিষয়ে রায় পিছিয়ে আগামী ৭  ফেব্রুয়ারি ধার্য করা হয়েছে।  আজ রোববার বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও রাজীব আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ দিন ধার্য করে আদেশ দেন। 

আদালতে রিটকারীদের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন, ব্যারিস্টার আমীর-উল-ইসলাম এবং দুদকের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন অ্যাডভোকেট খুরশিদ আলম খান। 

আদালতে এদিন অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে বক্তব্য উপস্থাপন করেন ব্যারিস্টার ফিদা এম কামাল।

অপরদিকে চট্টগ্রাম মহানগরীর অধিকাংশ বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা নিয়মিত স্কুলে আসেন না, এমন অভিযোগের ভিত্তিতে আজ রোববার (২৭ জানুয়ারি) সকালে সেখানকার কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আকস্মিক হানা দেন দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান (দুদক) ইকবাল মাহমুদ। আর এ সফরে স্কুলগুলোতে বেশিরভাগ শিক্ষককেই অনুপস্থিত পেয়েছেন তিনি। আজ রোববার সকালে সেখানকার কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে আকস্মিক পরিদর্শনে যান তিনি। এ সময় স্কুলগুলোতে বেশিরভাগ শিক্ষককেই অনুপস্থিত পেয়েছেন দুদক চেয়ারম্যান।

সকাল সোয়া ৯টার দিকে প্রথমে নগরীর কাট্টলী নুরুল হক চৌধুরী প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন করেন দুদক চেয়ারম্যান। এ সময় স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবকদের স্কুলের বাইরে অবস্থান করতে দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেন দুদক চেয়ারম্যান। এরপর তিনি স্কুলে ঢুকে সরেজমিনে দেখেন আটজন শিক্ষকের মধ্যে একমাত্র ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক উপস্থিত রয়েছেন। বাকি সাতজন শিক্ষকই অনুপস্থিত। ছাত্র-ছাত্রীরা বিদ্যালয় প্রাঙ্গণের আশপাশে আচার-চানাচুর খেয়ে অলস সময় পার করছে।

এ সময় দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, আমাদের সন্তানদের শিক্ষা নিয়ে কাউকেই ছিনিমিনি খেলতে দেয়া হবে না। যেকোনো মূল্যে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষা নিশ্চিত করা হবে। প্রয়োজনে দুদক দণ্ডবিধির ১৬৬ ধারা প্রয়োগ করবে। তারপরও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ক্ষতিসাধন করবেন বা করার চেষ্টা করবেন এমন কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না।

এর পরপরই দুদক চেয়ারম্যান যান নগরীর ভাটিয়ারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। সেখানে ১১ জন শিক্ষকের মধ্যে ২ জন শিক্ষককে অনুপস্থিত দেখতে পান। তাদের অনুপস্থিতির কারণ দুদক চেয়ারম্যানকে জানাতে পারেননি স্কুল কর্তৃপক্ষ।

দুদক চেয়ারম্যান ছাত্র-ছাত্রীদের উপস্থিতি শিট পরীক্ষা করে দেখেন, শনিবার যে সকল শিক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল তাদের অনেককেই উপস্থিত দেখানো হয়েছে। আবার আজ রোববার বেলা ১০টা পর্যন্ত ছাত্র-ছাত্রীদের রোল কল করা হয়নি। এ বিষয়েও স্কুল কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারেননি। 

এরপর দুদক চেয়ারম্যান আকস্মিক পরিদর্শনের যান নগরীর শীতলপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে। সেখানে গিয়ে তিনি জানতে পারেন, টেস্ট পরীক্ষায় ফেল করা কোনো শিক্ষার্থীকে এবার এসএসসি পরীক্ষায় সুযোগ দেয়নি স্কুল কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি অবহিত হয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন দুদক চেয়ারম্যান।

তবে নবম  শ্রেণিতে এক বা একাধিক বিষয়ে ফেল করা ছাত্র-ছাত্রীদের ২ হাজার টাকার বিনিময়ে দশম শ্রেণিতে  প্রোমোশন দেয়ার অভিযোগ আসে। এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, এটা অনৈতিক। শিক্ষা ক্ষেত্রে অনৈতিকতার কোনো স্থান থাকতে পারে না।

অন্যদিকে শিক্ষা খাতে অনৈতিকতার কারণে ১২ শিক্ষককে শোকজ করেছে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর। পদের প্রাপ্যতা না থাকা সত্ত্বেও এমপিওভুক্তির অভিযোগে অধিদপ্তর থেকে ইতিমধ্যে এসব শিক্ষককে শোকজ নোটিস পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

সূত্র জানায়, এইচএসসি ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা শিক্ষাক্রমের এমপিও নীতিমালা-১৯৯৫ অনুযায়ী সহকারী অধ্যাপক পদের প্রাপ্যতা ছিল না। তাই ২০১০ সালের এমপিও নীতিমালা ও জনবল কাঠামো জারি করার আগে তাদের সহকারী অধ্যাপক পদে এমপিওভুক্তির সুযোগ নেই। কিন্তু ২০১০ খ্রিস্টাব্দের পূর্বে পদের প্রাপ্যতা হওয়ার আগেই সহকারী অধ্যাপক পদে এ ১২ শিক্ষক এমপিওভুক্ত হয়েছেন। এ পরপ্রেক্ষিতে তাদের শোকজ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্র।

১২ শিক্ষককে পাঠানো শোকজ নোটিসে বলা হয়েছে, পদের প্রাপ্যতা না থাকা সত্ত্বেও ২০১০ সালের জনবল কাঠামো জারির পূর্বে বিধি বহির্ভূতভাবে সহকারী অধ্যাপক পদে এমপিওভুক্ত হয়ে বেতনভাতা গ্রহণ করায় কেন তাদের এমপিও বাতিল করা হবে না। যথাযথ প্রমাণসহ তার ব্যাখ্যা ১০ কর্মদিবসের মধ্যে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরে পাঠাতে বলা হয়েছে।

এইচ এম/আরআই