• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: এপ্রিল ১৫, ২০১৯, ০৮:১১ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : এপ্রিল ১৬, ২০১৯, ০২:১৫ এএম

মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত হত্যা মামলা

পিবিআইয়ের হেফাজতে সেই শম্পা

পিবিআইয়ের হেফাজতে সেই শম্পা
নুসরাত জাহান রাফি- সংগৃহীত

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের স্পর্শকাতর ওয়ার্ডে (এইচডিইউ) মৃত্যুযন্ত্রনায় কাতরাচ্ছিলেন ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী দগ্ধ নুসরাত জাহান রাফি। এ সময় ডাইং ডিক্লারেশন ( মৃত্যুজনিত জবানবন্দি)-এ নুসরাত বলছিলেন, “আড়ঁ গাত যে তারা আগুন লাগাইছে। তাগো মাঝে শম্পা আছিল। শম্পা বোরকা হরি, আঁতো মুজা লাগাই আঁরে কেরাছি তেল দি হুরি দিচ্ছে। শম্পারে ধরি হালাইছিলাম। হেতি ঝিক্কুইর দিলে গলার আবাজে আঁই বুঝি, কইছি, তুই শম্পা আঁড়ে মারস কিল্লাই, আঁই তাগো বিছার ছাই। আঁই যদি মরি যাই, আন্নেরা আছেন, এই বিচার আন্নেরা কইরবেন”। তারপরেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন নুসরাত।

জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রাফির দেয়া ডাইং ডিক্লারেশনের সূত্র ধরে সেই শম্পাকে গ্রেফতার দেখিয়েছে পিবিআই। 

সোমবার (১৫ এপ্রিল) উম্মে সুলতানা পপি ওরফে শম্পাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে বলে জানায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

তারা বলছেন, এই পপি ওরফে শম্পাই আগুন লাগানোর বোরকা এনে দিয়েছিল। ফেনী পিবিআইয়ের অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার মনিরুজ্জামান বলেন, উম্মে সুলতানা পপি ওরফে শম্পাকে আগেই গ্রেফতার হয়েছে। সে রিমান্ডের আদেশপ্রাপ্ত। তাকে এখনও রিমান্ডে আনা হয়নি। পিবিআইয়ের হেফাজতেই ছিলেন শম্পা।

পিবিআই কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান আরও জানান, নুসরাতের মতো পপিও এবার সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা থেকে আলিম পরীক্ষা দিচ্ছিলেন। ঘটনার দিন পপি নুসরাতের কাছে এসে খবর দেয় ছাদে তার বান্ধবী নিশাতকে মারধর করা হচ্ছে। এ খবর পেয়েই নুসরাত দ্রুত ছাদে ছুটে যায় এবং সেখানে আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার অনুসারীরা নুসরাতের ওপর হামলা করে এবং তার গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় হামলাকারীরা পপিকেই শম্পা নামে ডেকেছিল। শম্পা ঘাতকদের সাহায্য করেছিল। পিবিআইয়ের ওই কর্মকর্তা আর জানান, নুসরাত মৃত্যুর আগে দেওয়ার জবানবন্দিতে (ডাইং ডিক্লারেশন) শম্পার নাম বলেছিলেন। যে চারজন বোরকা পরা নারী বা পুরুষ তার শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় শম্পা তাদের একজন বলে জানিয়েছিলেন দগ্ধ নুসরাত।

ঘটনার পরপরই এজাহারভুক্ত সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়। এ ছাড়া সন্দেহভাজন যে ছয়জনকে আটক করা হয় তার মধ্যে উম্মে সুলতানা পপি ছিল। তবে পপিই যে শম্পা তা নিয়ে ধোঁয়াশা ছিল। ফেনীর সোনাগাজীর ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত আক্তার রাফিকে যৌন হয়রানি করেছিল ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা। এ ঘটনায় নুসরাত থানায় অভিযোগ করলে অধ্যক্ষকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তারপর থেকেই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে নুসরাতের যৌন হয়রানির মামলা তুলে না নেয়ায় তাকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়।

গত ৬ এপ্রিল সকালে আলিম পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসায় যান নুসরাত জাহান রাফি। মাদ্রাসার এক ছাত্রী সহপাঠী নিশাতকে ছাদের ওপর কেউ মারধর করেছে এমন সংবাদ দিলে তিনি ওই ভবনের তিনতলায় যান। সেখানে মুখোশধারী বোরকা পরিহিত ৪/৫ জন তাকে অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার বিরুদ্ধে মামলা ও অভিযোগ তুলে নিতে চাপ দেয়। সে অস্বীকৃতি জানালে তারা গায়ে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। গত ১০ এপ্রিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

এইচএম/এসএমএম