• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুলাই ৭, ২০১৯, ০৫:০৫ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুলাই ৭, ২০১৯, ০৫:১৩ পিএম

ওয়ারীতে শিশু সায়মা হত্যা

ধর্ষণের পর গলায় রশি বেঁধে টেনে নেয় ঘাতক হারুন 

ধর্ষণের পর গলায় রশি বেঁধে টেনে নেয় ঘাতক হারুন 
সংবাদ সম্মেলনে শিশু সায়মা হত্যার ঘটনায় বর্ণনা দিচ্ছেন অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) আব্দুল বাতেন- ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর ওয়ারীর বনগ্রামের স্কুলছাত্রী সামিয়া আফরিন সায়মাকে (৭) ধর্ষণ ও শ্বাসরোধ করে রান্নাঘরে লাশ ফেলে পালিয়ে যায় ঘাতক হারুন। এর আগে ছাদ ঘুরিয়ে দেখানোর কথা বলে আট তলার লিফট থেকে ছাদে নিয়ে যায় শিশু সায়মাকে। সেখানে নবনির্মিত নবম তলার ফ্ল্যাটে সায়মাকে ধর্ষণ করে সে। এক পর্যায়ে সায়মা নিস্তেজ অবস্থায় পড়ে থাকে সায়মা। তাকে গলায় রশি দিয়ে টেনে নেয়ার সময় মারা যায় সায়মা। এরপরই সায়মার নিথর দেহ টেনে রান্নাঘরের বেসিনের নিচে রেখে পালিয়ে যায় ঘাতক হারুন।

রোববার (৭ জুলাই) দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শিশু সায়মা হত্যার ঘটনায় এভাবেই লোমহর্ষক বর্ণনা দেন অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) আব্দুল বাতেন।

ডিএমপির এ কর্মকর্তা বলেন, এ ধরনের ঘটনা অত্যন্ত কুরুচির পরিচয়। মানবতাবিরোধী অপরাধ। এ ধরনের অপরাধীরা সাধারণত ধর্ষণের পর যখন ভাবে এ অপকর্মের কারণে সে বাঁচতে পারবে না তখনই হত্যার মতো ঘটনা ঘটায়। এক্ষেত্রেও তাই ঘটিয়েছে ঘাতক হারুন।

 ঘাতক হারুন- ছবি: জাগরণ

ঘটনার পূর্বাপর বিবরণ দিতে গিয়ে আব্দুল বাতেন বলেন, গত শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে সাড়ে ৬টার মধ্যে এ ঘটনা ঘটে। ওই দিন মাকে বলে শিশু সায়মা আট তলায় যায়। ফ্ল্যাট মালিক পারভেজের একটি বাচ্চা আছে তার সঙ্গে খেলা করতে। সেখানে গেলে পারভেজের স্ত্রী জানায় তার মেয়ে ঘুমাচ্ছে। সেখান থেকে বাসায় ফেরার উদ্দেশে লিফটে ওঠে সায়মা। লিফটেই সায়মার সঙ্গে দেখা হয় পারভেজের খালাতো ভাই হারুনের। হারুন সায়মাকে লিফট থেকে ছাদ দেখানোর প্রলোভন দেখিয়ে ছাদে নিয়ে যায়। সেখানে সায়মাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। সায়মা চিৎকার করলে মুখ চেপে ধর্ষণ করে। সায়মাকে নিস্তেজ দেখে গলায় রশি লাগিয়ে টেনে নিয়ে যায় রান্নাঘরে। সেখানে বেসিনের পাশে সিঙ্কের নিচে রাখে। এরপর পারভেজের বাসায় না ফিরে গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার তিতাস থানার ডাবরডাঙ্গা এলাকায় পালিয়ে যায় হারুন।

আব্দুল বাতেন বলেন, হারুন পারভেজের খালাতো ভাই। পারভেজের বাসায় দুই মাস ধরে থেকে তার রঙের দোকানে কাজ করে আসছিল। তাকে মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আজই আদালতে সোপর্দ করে রিমান্ড চাওয়া হবে।

এদিকে রাজধানীর ওয়ারীতে ধর্ষণের পর হত্যার শিকার শিশু সায়মার বাবা আব্দুস সালাম বলেছেন, আমি হয়তো আমার কন্যাকে রক্ষা করতে পারিনি। এটা আমার ব্যর্থতা। কিন্তু আমি চাই না, আর কারও বাবার বুক এভাবে খালি হোক। এ রকম নির্মমভাবে দুই ধরনের নির্যাতনে কোনো কন্যার জীবন যাক-সেটা আমি চাই না। শিশু সায়মা হত্যার ঘটনায় জড়িত হারুনকে নিয়ে আজ দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলন করে পুলিশ। সেখানে উপস্থিত ছিলেন- আব্দুস সালামও। সংবাদ সম্মেলন শেষে তিনি এসব কথা বলেন।

সামিয়া আফরিন সায়মা

তিনি বলেন, আমার মেয়ে হত্যার খবর যেভাবে দেশবাসী আপনাদের মাধ্যমে জানতে পারলো, তা আশা করি নাই। কোনো পরিবারই তা প্রত্যাশা করে না। আপনাদের নিউজের কারণে মেয়ের হত্যাকারী দ্রুতই গ্রেফতার হয়েছে। আমি দ্রুত সময়ের মধ্যে তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ফাঁসি চাই। অন্তত ৬ মাসের মধ্যে যেন তার ফাঁসি কার্যকর হয়।

গত শুক্রবার (৫ জুলাই) সন্ধ্যার পর থেকে শিশু সায়মার খোঁজ পাচ্ছিল না তার পরিবার। আনুমানিক সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে নবনির্মিত ভবনটির নবম তলার ফাঁকা ফ্ল্যাটের ভেতরে সায়মাকে মৃত অবস্থায় দেখতে পান পরিবারের সদস্যরা। খবর পেয়ে রাত ৮টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ওই ভবনের ছয়তলায় পরিবারের সঙ্গে থাকত সায়মা। বাবা আব্দুস সালাম নবাবপুরের একজন ব্যবসায়ী। দুই ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে সবার ছোট সায়মা। ওয়ারী সিলভারডেল স্কুলের নার্সারিতে পড়ত সায়মা। 

এইচ এম/টিএফ

আরও পড়ুন