• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৩ মে, ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৯, ০৯:৫৪ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৯, ০৯:৫৪ পিএম

চোরাই তেল বিক্রেতা থেকে কোটিপতি ক্যাসিনো সাঈদ

চোরাই তেল বিক্রেতা থেকে কোটিপতি ক্যাসিনো সাঈদ
কাউন্সিলর মমিনুল হক সাঈদ

নাম মমিনুল হক সাঈদ। সাঈদের গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে। মতিঝিল ফকিরেরপুল আরামবাগ ও দিলকুশার অধিকাংশ লোক তাতে ক্যাসিনো সাঈদ নামে চিনেন।

জানা গেছে, পারিবারিক সমস্যার কারণে ২০০২ সালে জীবিকা নির্বাহে তিনি ঢাকায় আসেন। ঢাকা এসে মতিঝিলের দিলকুশা সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের অফিসের মোড়ে টং দোকানে গ্যালনে ও প্লাষ্টিক ড্রামে ভরে গাড়ির পরিত্যাক্ত তেল কিনে বিক্রি করতেন সাঈদ। পাশাপাশি পান সিগারেট বিক্রি করতেন। চোরাই তেলের ব্যবসায় তখন তেমন লাভ ছিল না। এসময় পার্শ্ববর্তী বঙ্গভবনের চার নম্বর গেটের কোয়ার্টারের একটি রুমে থাকতেন সাঈদ। সেখানে তার মামা বঙ্গভবনের চতুর্থ শ্রেণির সরকারি কর্মচারি ছিলেন। চোরাই তেল বিক্রির পাশাপাশি মোহামেডান ক্লাবে হাউজি খেলা শুরু হলে সেখানে আলমগীর ও তাপসের ফুটফরমায়েশ খাটতেন। ২০০৭ সালের পর যুবলীগের এক প্রভাবশালী নেতার সঙ্গে তার সখ্য হয়। ওই যুবলীগের নেতার সুপারিশে সেখানে ক্যাসিনো খেলায় কাজ শুরু করে সাঈদ। তার সহযোগী হিসেবে  জামালকে নিয়ে কাজ শুরু করেন সাঈদ।
 
তখন থেকে ক্যাসিনো সাঈদের সেকেন্ড-ইন কমান্ড হিসেবে কাজ করেন জামাল। আরামবাগ ক্লাব, দিলকুশা ক্লাব, ভিক্টোরিয়া ক্লাবে ক্যাসিনো-জুয়ার আসর বসাতেন সাঈদ।এছাড়া বিআইডব্লিউটিএ ভবনে টেন্ডারের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণে জামালের পাশাপাশি কামরুল হাসান রিপন ছিল সাঈদের অংশীদার।
সেই নেতার হাত ধরেই সাঈদ ৯ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি হন। পরে যুবলীগ মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম সম্পাদক হন। এরপর ওয়ার্ড কমিটির সভাপতির পদ ছেড়ে দেন। ওয়ার্ডে তার পদে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয় হাসান উদ্দিন জামালকে।

সাঈদ যুবলীগ নেতা এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) কাউন্সিলর হওয়ার পর আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি। এলাকায় গড়েছেন একক আধিপত্য। জড়িয়ে পড়েছেন ক্যাসিনো– বাণিজ্যে। চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজির অভিযোগও রয়েছে প্রচুর। রাজনৈতিক নেতা হয়ে প্রভাব খাটিয়ে  বনে গেছেন আশপাশের অন্যান্য ক্লাবের নেতা।

ডিএসসিসির ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হলেও তিনি বোর্ড সভায় নিয়মিত যেতেন না। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়া অসংখ্যবার বিদেশে গেছেন। তাকে অপসারণ করতে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পুলিশকে চিঠি দিয়েছে ডিএসসিসি। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।

গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীর ফকিরাপুলে ইয়ংমেনস ক্লাব, ওয়ান্ডারার্স ক্লাব, গুলিস্তানের মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র ও বনানীর গোল্ডেন ঢাকা ক্লাবে অভিযান চালায় র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।

র‌্যাব সূত্র জানায়, এই চারটি ক্লাবের মধ্যে ওয়ান্ডারার্স ক্লাবটি চালাতেন যুবলীগের বিতর্কিত নেতা মমিনুল হক সাঈদ। এই ক্লাবে নিয়মিত ক্যাসিনো, জুয়া, মাদকের আসর বসতো।
র‌্যাবের অভিযানের পরপরই মমিনুল হক সাঈদ সিঙ্গাপুরে পালিয়ে যান। সিঙ্গাপুর-থাইল্যান্ডে মমিনুল হকের ক্যাসিনোর ব্যবসা আছে। মাসে দুই-তিনবার তিনি বিদেশে যাওয়া– আসা করেন। মতিঝিল ফকিরাপুল ও আরামবাগের অনেকেই তাঁকে ক্যাসিনো সাঈদ নামে চেনেন।

এইচ এম/বিএস 
 

আরও পড়ুন