• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ০২ মে, ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৮, ২০১৯, ০৪:২২ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : ডিসেম্বর ২৮, ২০১৯, ০৪:২৮ পিএম

ফিরে দেখা - ২০১৯

অপকর্মের খেসারতে নিজেরাই কারাগারে

অপকর্মের খেসারতে নিজেরাই কারাগারে
(বাঁ থেকে) মিজানুর রহমান, পার্থ গোপাল বণিক ও বজলুর রশীদ - ফাইল ছবি

আর মাত্র তিনদিন। বিদায় নিতে চলেছে ২০১৯ সাল। বছরজুড়ে আলোচনায় ছিলেন ৩ ডিআইজি ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এক কর্মকর্তা। এরা হলেন- পুলিশের ডিআইজি মিজানুর রহমান, কারা সেক্টরের ডিআইজি প্রিজন্স পার্থ শংকর বণিক ও ডিআইজি প্রিজন্স বজলুর রশীদ এবং দুদক কর্মকর্তা খন্দকার এনামুল বাছির। 

এছাড়া অপকর্মের তালিকায় রয়েছেন একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা- সোনাগাজী থানার ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন, গোয়ালন্দ থানার ওসি সাইফুল ইসলাম, পুলিশ পরিদর্শক মাহমুদ সাইফুল করিম ও ওসি ওয়াজেদ আলী। এদের বিরুদ্ধে অপকর্মের গুরুতর অভিযোগের তদন্ত চলমান রয়েছে। একমাত্র ডিএমপির সূত্রাপুর থানার ওসি কাজী ওয়াজেদ আলী আইনি লড়াই করে তার কর্মস্থলে বহাল রয়েছেন। তবে  সোনাগাজী থানার ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন, গোয়ালন্দ থানার ওসি সাইফুল ইসলাম, পুলিশ পরিদর্শক মাহমুদ সাইফুল করিম অপকর্মের কারণে কারাগারে আটক রয়েছেন।  

তিন ডিআইজি দুর্নীতি, ঘুষ কেলেঙ্কারিও অপকর্মের কারণে বর্তমানে কারান্তরীণ রয়েছেন। প্রত্যেকের বিরুদ্ধে দুদকের তদন্তে গুরুতর অভিযোগ প্রমাণিত  হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছেন সরকারপক্ষের আইনজীবী আবদুল্লাহ আবু।   

দুদক প্রধান কার্যালয়ের একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, আইনের রক্ষক হয়েও বেআইনি কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়ায় ২০১৯ সালে বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা ও কারা কর্মকর্তার নামে মামলা হয়। তাদের মধ্যে বর্তমানে কয়েকজন কারাগারে বন্দি রয়েছেন। বন্দিদের মধ্যে দুই কর্মকর্তার বিভিন্ন মেয়াদে সাজাও হয়েছে। বাকিদের মামলা তদন্ত চলমান রয়েছে। 

মিজানুর রহমান :
জোর করে এক নারীকে বিয়ে করে তা গোপন রাখতে ক্ষমতার অপব্যবহার এবং এক সংবাদ পাঠিকাকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়ার মতো ঘটনায় দেশজুড়ে আলোচিত হন পুলিশের ডিআইজি মিজানুর রহমান। এরইমধ্যে তার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তদন্তে নামে দুদক। দুদক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ তুলে নতুন করে বিতর্কে আসেন এই ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা। গত ২৪ জুন তার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের দায়ে মামলা করে দুদক। এর পরও ধরাছোঁয়ার বাইরেই ছিলেন তিনি। এক সপ্তাহ পর ১ জুলাই হাইকোর্টে যান জামিন নিতে। কিন্তু হাইকোর্ট তার জামিন আবেদন খারিজ করে পুলিশের হাতে সোপর্দ করে গ্রেফতারের নির্দেশ দেন। পরদিন তাকে ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালত জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এরপর থেকে তিনি কারাগারেই আছেন। ওই মামলায় ডিআইজি মিজানের ভাগ্নে কোতোয়ালি থানার এসআই মাহমুদুল হাসানের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠান আদালত। মাহমুদুল হাসান গত ১ জুলাই ডিআইজি মিজানের সঙ্গে হাইকোর্টে আগাম জামিনের আবেদন করেন। কিন্তু হাইকোর্ট তার জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করতে নির্দেশ দেন। ৪ জুলাই তিনি আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

এদিকে ডিআইজি মিজানের কাছ থেকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ গ্রহণের মামলায় ২২ জুলাই দুদকের সাময়িক বরখাস্ত পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরকে গ্রেফতার করে দুদক। পরে তাকে আদালতে হাজির করা হয়। আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এরপর থেকে তিনিও কারাগারে আছেন।

পার্থ গোপাল বণিক :
ডিআইজি প্রিজন্স পার্থ গোপাল বণিক সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে দায়িত্ব পালনের আগে দায়িত্ব পালন করেছেন চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে। চট্টগ্রাম কারাগারের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে ২৮ জুলাই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। পরে ঘুষ ও দুর্নীতির কয়েক লাখ নগদ টাকা বাসায় রয়েছে, এমন তথ্যের ভিত্তিতে তাকে নিয়ে দুদকের একটি দল রাজধানীতে তার ধানমণ্ডির ভূতেরগলি বাসায় অভিযান চালায়। পার্থ গোপাল বণিকের ফ্ল্যাট থেকে ৮০ লাখ টাকা উদ্ধার করে দুদক। এর পরেই তাকে আটক করা হয়। পরদিন দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ মামলা দায়ের করা হয়। মামলা দায়েরের পর তাকে আদালতে হাজির করা হয়। আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এরপর থেকে তিনি কারাগারেই আছেন।

বজলুর রশীদ :
কারা অধিদফতরের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজনস) বজলুর রশীদের বিরুদ্ধে অবৈধ উপায়ে উপার্জিত টাকা কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে স্ত্রীকে পাঠানোর বিষয়ে অনুসন্ধানে নামে দুদক। এরই অংশ হিসেবে বজলুর রশীদ ও তার স্ত্রীকে গত ২০ অক্টোবর জিজ্ঞাসাবাদে ডাকে দুদক। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে গ্রেফতার করে দুদক টিম। গ্রেফতারের আগে তার বিরুদ্ধে দুদক কমিশনের সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ মামলা দায়ের করা হয়। পরে তাকে আদালতে হাজির করা হলে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। বর্তমানে তিনি কারাগারে আছেন।

মোয়াজ্জেম হোসেন :
মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন হয়রানির বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের ভিডিও ছড়ানোর অভিযোগ ওঠে ফেনীর সোনাগাজী থানার সাবেক অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে। এ অভিযোগে চলতি বছরের ১৫ এপ্রিল মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেনের আদালতে মামলা করেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। আদালত মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেন। পিবিআইয়ের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার রীমা সুলতানা মামলাটি তদন্ত করে মাত্র এক মাস ৮ দিনের মাথায় ২৩ মে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। ওই প্রতিবেদন আমলে নিয়ে মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। পরোয়ানা জারির ২০ দিন পর ১৬ জুন মোয়াজ্জেম হোসেনকে ঢাকা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরদিন তাকে একই ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হলে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন একই বিচারক। এরপর থেকে তিনি কারাগারেই আছেন। কারাগারে থাকা অবস্থায় গত ২৮ নভেম্বর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৬ ধারায় ৫ বছর কারাদণ্ড ও ৫ লাখ টাকা জরিমানা এবং ২৯ ধারায় তিন বছর কারাদণ্ড ও ৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয় ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে।

সাইফুল ইসলাম :
অবৈধ সম্পদ অর্জন ও তথ্য গোপনের দুটি মামলায় রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলামকে গত ২১ আগস্ট ৭ বছর করে ১৪ বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত। অবৈধ সম্পদ অর্জনে স্বামীকে সহায়তার অভিযোগে অন্য এক মামলায় সাইফুল ইসলামের সঙ্গে তার স্ত্রী জাকিয়া ইসলাম অনুকে দুই বছর কারাদণ্ডাদেশ দেয়া হয়। রায় ঘোষণার সময় আসামিরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন। পরে সাজা পরোয়ানা দিয়ে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়। বর্তমানে কারাগারে আছেন সাইফুল ও তার স্ত্রী জাকিয়া ইসলাম। 

সাদেকুল ইসলাম :
দুই মেয়ের পাসপোর্ট ভেরিফিকেশনের জন্য উচ্চ আদালতের এক বিচারপতির স্ত্রীর কাছে ২০১৬ সালের ৩০ আগস্ট ২ হাজার টাকা ঘুষ দাবির মামলায় পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) এএসআই সাদেকুল ইসলামকে দুই বছর কারাদণ্ড দেন আদালত। ২১ মার্চ এই রায় ঘোষণার পর সাদেকুলকে কারাগারে পাঠানো হয়।

ডিএমপির যাত্রাবাড়ী থানার ওসি কাজী ওয়াজেদ আলী মিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে অপহরণ ও গণধর্ষণের অভিযোগে গত ৪ এপ্রিল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন এক নারী (২৭)। আদালত মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেন। আসামিদের মধ্যে আরও রয়েছেন যাত্রাবাড়ী থানার এসআই আ স ম মাহমুদুল হাসান ও মোছা. লাইজু।

এইচ এম/ এফসি

আরও পড়ুন