• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: নভেম্বর ১৬, ২০১৯, ০৯:০৬ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : নভেম্বর ১৬, ২০১৯, ০৯:০৬ পিএম

রাফায়েল রায়ের ‘বিরুদ্ধ মত’ ঘিরে ভারতে কংগ্রেস-বিজেপি সংঘর্ষ 

রাফায়েল রায়ের ‘বিরুদ্ধ মত’ ঘিরে ভারতে কংগ্রেস-বিজেপি সংঘর্ষ 

রাজধানী দিল্লিতে কংগ্রেসের কার্যালয়ের সামনে শুক্রবার থেকে সারাদিন দফায় দফায় বিক্ষোভ দেখিয়েছে বিজেপি যুবমোর্চার সদস্যরা। শনিবার (১৬ নভেম্বর) তা ছড়িয়ে পড়েছে গোটা ভারতজুড়ে। 

ওইদিন কলকাতার এন্টালি অঞ্চলে কংগ্রেসের সদর দফতর বিধান ভবনে হামলা চালায় বিজেপি’র যুব মোর্চা। দুপুর সাড়ে ১২টার সময় হাতে লাঠি ও বিজেপির পতাকা নিয়ে কংগ্রেস অফিসের ওপর হামলা শুরু হয়। কলকাতা পুলিশের ব্যারিকেড টপকে বিজেপির সদস্যরা বন্ধ বিধান ভবনের গেট খুলে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করে। বিধান ভবনের দীর্ঘদিনের কর্মী সত্তরোর্ধ আব্দুল জব্বারকে (চাচা) সামনে পেয়ে তার ওপরেই চড়াও হয় বিজেপির লেঠেল বাহিনী। তাকে লাঠি দিয়ে পিটিয়েছে। এরপর বিধান ভবন প্রাঙ্গনে বেশ সময় তারা অবস্থান নেয়। পুলিশের সামনেই বিজেপি’র কর্মীরা কংগ্রেস ভবনের একের পর এক পোস্টার ছিঁড়তে থাকে। পুলিশ বাধা দিতে এলে তাদের পোশাকেও কালি ছিটিয়ে দেওয়া হয়েছে। ঢিল ছোঁড়া হয়েছে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিধান চন্দ্র রায়ের মূর্তিতেও। 

কংগ্রেস ভবনের সামনে রাহুল গান্ধীর কুশপুতুল ও তার ছবি সম্বলিত পোস্টার পুড়িয়ে শেষ হয় বিজেপি যুব মোর্চার অভিযান। 

এ বিষয়ে শনিবার সন্ধ্যায় প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র বলেছেন, বিজেপি সারা দেশে যা করে চলেছে, তাকে কোনওভাবেই গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি বলা যায় না। পশ্চিমবঙ্গও তার বাইরে নয়। আজ ফাঁকা বিধানভবনে যেভাবে বিজেপি দাপিয়ে বেড়ালো, তার নিন্দা করার কোনও ভাষা নেই।

বিকেল গড়াতেই অবশ্য পাল্টা প্রতিরোধে নেমে পড়ে কংগ্রেসও। বিজেপি’কে এক ইঞ্চি জমিও বিনা যুদ্ধে ছাড়া হবে না, এই মনোভাব নিয়ে কলকাতার ব্যস্ত সেন্ট্রাল এভিনিউ অবরোধ করে কংগ্রেস। 

উল্লেখ্য, এই সেন্ট্রাল এভিনিউতেই বিজেপি’র রাজ্য সদর দফতর। সেখানে আবার পুলিশের অন্য রূপ দেখা গেছে। কংগ্রেসের বিক্ষোভকারীদের ঠেকাতে অতি তৎপর হয়ে ওঠে পুলিশ, যার জেরে
রীতিমতো খণ্ডযুদ্ধ বেঁধে যায় অফিস টাইমের ব্যস্ত জনবহুল সেন্ট্রাল এভিনিউতে। এমনকি যুব কংগ্রেসের চার কর্মীকে তাৎক্ষণিকভাবে আটকও করে পুলিশ।

কংগ্রেসের তরফ থেকে অভিযোগ করা হয়, এই ঘটনায় আবার প্রমাণ হয়ে গেল ওপর ওপর যতই কুস্তি করুক, তলায় তলায় গভীর দোস্তি রয়েছে বিজেপি এবং তৃণমূলের এবং রাজ্য ও দেশীয় রাজনীতিতে একে অপরের পরিপুরক হিসাবে কাজ করে চলেছে। একই অভিযোগ করেছেন সিপিআই(এম) নেতা শমীক লাহিড়িও। 

তিনি বলেন,যে পুলিশ বিজেপি যুব মোর্চার তাণ্ডবের সময় হাত গুটিয়ে রইলো, সেই পুলিশই আবার কংগ্রেস কর্মীদের ওপর লাঠি হাতে ঝাঁপিয়ে পড়লো। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজত্বে একেক জায়গায় পুলিশের একেক ভূমিকা দেখতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মানুষ। শনিবারের এই ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী রাজনৈতিক শিবিরের নেতারা। 

কিন্তু কেন বিজেপির এই অভিযান?
গত বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের সদ্য প্রাক্তন বিচারপতি রঞ্জন গগৈ-র বিশেষ বেঞ্চ রাফায়েল যুদ্ধবিমান কেনা সংক্রান্ত কেলেঙ্কারির সিবিআই তদন্তের দাবি খারিজ করে দেয়। তবে বেঞ্চের সংখ্যালঘু অংশ মূল রায়ের সঙ্গে সহমত পোষণ করেও একটি ভিন্ন মত দিয়ে বলেছে, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা চাইলে স্বাধীনভাবে রাফায়েল অভিযোগের তদন্ত করতে পারে। এরপরেই কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী জেপিসি, অর্থাৎ যৌথ সংসদীয় কমিটির তদন্ত দবি করেন। সে কারণেই এখন বিজেপি’র নিশানায় কংগ্রেস, তথা রাহুল গান্ধী। দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত মতোই তারা গোটা ভারতে নেমে পড়েছে রাহুলের মুণ্ডপাত করতে। তাদের দাবি, সুপ্রিম কোর্ট ক্লিন চিট দিয়ে দেওয়ার পরে আর কোনও রকম তদন্তের প্রয়োজন নেই। জেপিসি তদন্ত তো নয়ই। উল্টে রাফায়েল কেলেঙ্কারি নিয়ে ভুল বোঝানোর জন্য রাহুল গান্ধীকে ক্ষমা চাইতে হবে দেশবাসীর সামনে।

রাফায়েল নিয়ে অভিযোগ কী?
কংগ্রেস, বিশেষ করে রাহুল গান্ধীর অভিযোগ ছিল, লাগামছাড়া দুর্নীতি করেছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ফ্রান্সের দাসাউ কোম্পানির সঙ্গে যুদ্ধ বিমান কেনা সংক্রান্ত মূল চুক্তিটি হয়েছিল প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংয়ের আমলে। নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর ফ্রান্সে গিয়ে
সেই চুক্তিতে বিস্তর পরিবর্তন করেন। যে দামে আগে রাফায়েল কেনা হবে বলে চুক্তি হয়েছিল তার চেয়ে অনেক বেশি দামে রাফায়েল যুদ্ধবিমান আরও কম সংখ্যায় কেনার ব্যাপারে নতুন ভাবে চুক্তি করে মোদি সরকার। সেই চুক্তিতে যু্ক্ত করা হয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঘনিষ্ঠ বন্ধু শিল্পপতি অনিল আম্বানিকেও।

অভিযোগ, চুক্তি পরিবর্তন করার গোটা প্রক্রিয়ায় অন্ধকারে রাখা হয়েছিল প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে।এই অভিযোগ তুলে লোকসভা নির্বাচনের আগে মোদি,তথা বিজেপি বিরোধী প্রচারকে তুঙ্গে তুলে নিয়ে গিয়েছিলেন রাহুল। এমনকি নির্বাচনি প্রচারে নরেন্দ্র মোদিকে ‘চোর’ পর্যন্ত বলতে দিধা করেননি তিনি।

সুপ্রিম কোর্টের ‘মিশ্র’ রায়ের পর এবার বিজেপি উঠে পড়ে লেগেছে রাহুলের ক্ষমা চাওয়ার দাবি নিয়ে।

বিএস