• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০১৯, ০৮:৫৮ পিএম

ডাকসু নির্বাচন

সরগরম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

সরগরম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
সরগরম মধুর ক্যান্টিন -ছবি : কাশেম হারুন

 

----------------------------------------------
উৎসবমুখর পরিবেশে মনোনয়ন জমা # সকল পদে সর্বমোট জমা হয়েছে ৮৩১টি  

বিদ্রোহীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সমঝোতা # ফের অনশনে ওয়ালিদ আশরাফ
----------------------------------------------

আগামী ১১ মার্চ ডাকসু নির্বাচনে অংশ নিতে যাওয়া প্রার্থীরা নিজ নিজ হলে গিয়ে মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন। জমা দিতে আসা ছাত্র সংগঠনগুলোর সমন্বিত অবস্থানে সরগরম ছিলো মধুর ক্যান্টিন। স্বতন্ত্রসহ সকল প্যানেলের প্রার্থী ও সমর্থকদের ক্যাম্পাসে উপস্থিতির ব্যাপারটি ছিলো লক্ষ্য করার মতো। সব মিলিয়ে নির্বাচনকে ঘিরে পুরো ক্যাম্পাসে বিরাজ করছে উৎসবমুখর পরিবেশ। 

ডাকসু ও হল সংসদের জন্য মনোনীত প্রার্থীরা মঙ্গলবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল নয়টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট আবাসিক হলের রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন। সবমিলিয়ে মোট ৮৩১টি মনোনয়নপত্র জমা হয়েছে বলে জানান নির্বাচনের চিফ রিটার্নিং অফিসার অধ্যাপক ড. এস এম মাহফুজুর রহমান। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ডাকসুর জন্য সকল পদে ২৩৭টি এবং ১৮টি হল মিলিয়ে সকল পদে ৫৯৪টি মনোনয়ন জমা পড়েছে। সকল পদের সর্বমোট সংখ্যা ৮৩১।

দুপুর ২টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে মনোনয়নপত্র বাছাই হয়। মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের পর  বুধবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) হলের নোটিশ বোর্ড ও ওয়েবসাইটে প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করা হবে।

এ বিষয়ে ছাত্রলীগ প্যানেলের এজিএস প্রার্থী সাদ্দাম হোসাইন বলেন, ডাকসু নির্বাচন নিয়ে ক্যাম্পাসে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটি আনন্দময় উত্তেজনা কাজ করছে। যেহেতু দীর্ঘদিন পর ডাকসু নির্বাচন হচ্ছে, এর মাধ্যমে এতদিন প্রোপাগান্ডা ও মিথ্যার রাজনীতির প্রয়োগের অচেষ্টা ভুল বলে প্রমাণিত করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এখন সবাই মনোনয়পত্র জমা দিয়েছে। ছাত্র সংগঠনগুলো নিজেদের কার্যক্রম চালাচ্ছে। সবমিলিয়ে একটা সৃজনশীল পরিবেশ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিরাজ করছে। এর মাধ্যমে ছাত্রলীগের যে সঠিক অবস্থান ছিলো, সেটিও প্রমাণিত হয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের যে স্বপ্নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার প্রত্যয় মনোনয়ন জমা দেওয়ার মাধ্যমে আমরা আরো একধাপ এগিয়ে গেলাম। তবে আমাদের লড়াই এখনও শেষ হয়নি, এটি অসমাপ্ত। ১১ মার্চ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আমরা মনে করবো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রতি আমাদের দায়িত্ব কিছুটা হলেও পালন করতে পেরেছি।

ছাত্রদল প্যানেলের ভিপি প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, মনোনয়পত্র জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের কয়েজনের অভিযোগ এসেছে। হলে জমা দেওয়ার সময় বিভিন্ন হুমকি ধামকি দেওয়া হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে হল সংসদে কয়েকজন মনোনয়ন জমা দিতে পারেনি। মেয়েদের অনেকে দলীয় মনোনয়ন সংগ্রহ করেছিলো। হুমকি ধামকির কারণে বেশিরভাগ মেয়েই তা জমা দিতে পারেনি। তবে ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি এখন পর্যন্ত মোটামুটি সন্তেুাষজনক। পরিবেশটা উৎসবমুখরই ছিলো। তবে যখন থেকে প্রচার-প্রচারণা শুরু করবো, তখন থেকে বোঝা যাবে আসলে কতটা সহাবস্থান আমাদের হয়েছে।

বামজোটের ভিপি প্রার্থী লিটন নন্দী বলেন, ভালোভাবেই আমরা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছি। সময় স্বল্পতার কারণে তাড়াহুড়ো করে জমা দিতে হয়েছে। তবে ফজলুল হক হলে আমাদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে প্রশাসনিকভাবে বাধা দেওয়া হয়েছে বলে খবর পেয়েছি। এরকম কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া মনোনয়ন জমা নিয়ে কোনো অপ্রীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি। তিনি বলেন, নির্বাচনের পরিবেশ ঠিক রাখতে যা করা দরকার তা করাই এখন প্রশাসনের উচিত হবে। সর্বোপরি বলা যায়, আজ উৎসবমুখর পরিবেশেই আমরা মনোনয়ন জমা দিয়েছি।

কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী প্যানেলের ভিপি প্রার্থী নুরুল হক নুর বলেন, আজ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনসহ আমরা সকলে মিলে দলবদ্ধভাবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছি। ক্যাম্পাসে বিরাজ করছিলো উৎসবমুখর পরিবেশ। তফসিল ঘোষণার পর থেকে ক্যাম্পাসে ভালো একটি পরিবেশ বিরাজ করছে। মনোনয়নপত্র জমাদানকালে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার মুখোমুখি হইনি ও শুনিনি।

বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (বিসিএল, আম্বিয়া), জাসদ ছাত্রলীগ, বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রীসহ বেশ কয়েকটি সংগঠনের পৃথক প্যানেলের প্রার্থীরা গত সোমবার মনোনয়পত্র জমা দেন। জাতীয় কবিতা পরিষদের সদস্য আলীম হায়দার ভিপি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ছাত্র এ আর এম আসিফুর রহমান জিএস পদে স্বতন্ত্র প্যানেল গঠন করেন।

নির্বাচনি আড্ডায় ব্যস্ত প্রার্থী-সমর্থক-সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীরা। মধুর ক্যান্টিন থেকে ছবি তুলেছেন কাশেম হারুন

বিভিন্ন পদে প্রার্থী পরিবর্তন
বিভিন্ন কারণে ঘোষিত ডাকসু ও হল সংসদের কয়েকটি পদে প্রার্থীর পরিবর্তন এনেছে ছাত্রলীগ। এক্ষেত্রে সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে শামস ই নোমানের পরিবর্তে সার্জেন্ট জহুরুল হক হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসিফ তালুকদার, ছাত্র পরিবহন সম্পাদক পদে রাকিব হাওলাদারের পরিবর্তে শামস ই নোমান। প্যানেলের সদস্য পদে ইশাত কাশফিয়া ইরার পরিবর্তে কুয়েত মৈত্রী হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ফরিদা পারভীনকে আনা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল সংসদে ছাত্রত্ব না থাকা সত্ত্বেও আবদুল্লাহ সুবাইলকে ভিপি পদের মনোনয়ন দেওয়া হয়। কিন্তু অনেক চেষ্টা সত্ত্বেও সে সান্ধ্যকালীনে ভর্তি হতে না পারলে তার পরিবর্তে শাকিলকে ভিপি পদের জন্য মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এদিকেক ভোটার তালিকায় নাম না আসার কারণে বামজোটের প্যানেলে জিএস পদপ্রার্থী উম্মে হাবিবা বেনজিরের পরিবর্তে সাম্রজ্যবাদ বিরোধী ছাত্র ঐক্যের আহ্বায়ক ফয়সাল মাহমুদকে স্থলাভিষিক্ত করা হয়।

বিদ্রোহীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সমঝোতা
ডাকসু নির্বাচনে বিদ্রোহী প্যানেলের সঙ্গে সমঝোতায় এসেছে ছাত্রলীগ। এতে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছে ছাত্রলীগের এই বিদ্রোহী প্যানেলটি। সমঝোতার পর মঙ্গলবার দুপুরে মধুর ক্যান্টিনের সামনে সঙ্গে সেলফি তোলেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনসহ অন্যান্য নেতারা। এসময় শোভনকে বিদ্রোহী প্যানেলের নেতা আমিনুল ইসলাম ও আল মামুনের সঙ্গে হাস্যোজ্জ্বল বাক্যবিনিময় করতে দেখা গেছে।

বিদ্রোহী প্যানেলের আমিনুল ইসলাম বলেন, আমরা সবাই শেখ হাসিনার রাজনীতি করি। তাই ডাকসু নির্বাচনে সবাই একসঙ্গে কাজ করতে চাই। আমাদের মধ্যে কোনো বিভাজন নেই। আলাদা প্যানেল ঘোষণার বিষয়ে প্রশ্ন করলে আমিনুল বলেন, কাঙ্খিত মূল্যায়ন না পাওয়ায় আমাদের মধ্যে একটু অভিমান হয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর আমরা সন্তুষ্ট। পার্টিতে কাজ করলে আমাদের যথাযথ মূল্যায়ন করার আশ্বাস দিয়েছেন তারা।

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন বলেন, ছাত্রলীগে কোনো বিদ্রোহী গ্রুপ নেই। ছাত্রলীগের নেতাকর্মী অনেক, কিন্তু ডাকসুতে পদসংখ্যা অল্প। এর ফলে সবাইকে মনোনয়ন দেওয়া হয়তো সম্ভব হয়নি। এটা নিয়েই একটু মনোমালিন্য হয়েছিল। এখন কোনো সমস্যা নেই।

ফের অনশনে ওয়ালিদ আশরাফ 
ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোটকেন্দ্র হলের পরিবর্তে একাডেমিক ভবনে করা ও ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক সহাবস্থান নিশ্চিত করাসহ চার দফা দাবি পুনর্বিবেচনার দাবিতে আবারও অনশনে বসেছেন ওয়ালিদ আশরাফ। মঙ্গলবার বিকেল তিনটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মৃতি চিরন্তন চত্বরে অনশনে বসেন তিনি। ওয়ালিদ আশরাফ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সান্ধ্যকালীন কোর্সের ছাত্র। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অনশন করার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। তার চার দফা দাবির অন্য দুটি দাবি হলো- ডাকসু নির্বাচনে প্রার্থিতার বয়সসীমা ৪০ বছর করা এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণার স্বার্থে নির্বাচন দুই সপ্তাহ পিছিয়ে ২৫ ফেব্রুয়ারি করা। এর আগেও গত ১৪ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় একই দাবিতে একই জায়গায় অনশনে বসেন ওয়ালিদ আশরাফ। তবে রাত ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিম ‘নিরাপত্তাজনিত’ কারণ দেখিয়ে তাঁকে সেখান থেকে উঠিয়ে দেয়।

এসএমএম