• ঢাকা
  • রবিবার, ০৫ মে, ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মার্চ ১৮, ২০১৯, ০৫:১৫ পিএম

নির্বাচন পদ্ধতির সংস্কার চান মাহবুব তালুকদার

নির্বাচন পদ্ধতির সংস্কার চান মাহবুব তালুকদার
নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার -ফাইল ছবি

 

বিদ্যমান নির্বাচন ব্যবস্থার পরিবর্তন চেয়ে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেছেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেমন হয়েছে এর উত্তর প্রতিটি বিবেকমান মানুষের কাছে আছে। নির্বাচনকে অর্থবহ করার জন্য ও গণতন্ত্রকে অবারিত করার স্বার্থে নির্বাচন পদ্ধতির সংস্কার প্রয়োজন। তবে নির্বাচন পদ্ধতির সংস্কার নির্বাচন কমিশনের কাজ নয়। রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়।

দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা নির্বাচনের দিন আজ সোমবার (১৮ মার্চ) রাজধানীর নির্বাচন ভবনে প্রেসবিফ্রিংয়ে তিনি একথা বলেন। 

মাহবুব তালুকদার বলেন, বিগত কয়েকদিন যাবত কয়েকজন সাংবাদিক জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচন সম্পর্কে আমার কাছে প্রশ্ন রাখছেন। জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আমার নতুন করে বলার কিছু নেই। একাদশ জাতীয় নির্বাচন কেমন হয়েছে, প্রতিটি বিবেকবান মানুষের কাছে এ প্রশ্নের উত্তর আছে। জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে যাদের স্বার্থ জড়িত,  তারা কখনো এর সঠিক উত্তর দিতে পারবেন না, বা দেবেন না। জাতীয় নির্বাচন কেবল রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাবদল নয়, এতে গণতন্ত্র কি সমুন্নত হলো তা-ও বিবেচনাযোগ্য। 

তিনি বলেন, এবারের উপজেলা নির্বাচনকে আমি অপরূপ নির্বাচন বলতে চাই।  আইনে থাকলেও বাস্তবে এর মাথাটা নির্বাচিত হচ্ছে দলীয় প্রতীকে এবং দেহটুকু নির্বাচিত হচ্ছে নির্দলীয়ভাবে। এই নির্বাচনের স্বরূপ তাহলে কেমন দাঁড়ায়? অন্যদিকে এই নির্বাচনে অধিকাংশ বিরোধী রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করেনি। এজন্য উপজেলা নির্বাচনে জৌলুস নেই। এই একতরফা নির্বাচনের কারণে ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার বিষয়ে আগ্রহী নয়। এহেন নির্বাচন বিমুখতায় গণতন্ত্র বিমুখ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এই অবস্থা গণতন্ত্রের জন্য অশনি সংকেত।

তিনি বলেন, আজকাল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত কথাটা বেশ চালু হয়েছে। আমি এর অর্থ বুঝি না। আমার মতে নির্বাচন মানেই হচ্ছে একাধিকের মধ্যে বাছাই। তাই যা প্রতিযোগিতা নয় তা নির্বাচন হয় কী করে? ইংরেজিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীনদের  ‘ইলেকটেড’ না বলে ‘সিলেকটেট’ বলা যেতে পারে কি? এবারের উপজেলা নির্বাচনে চারটি ধাপে শতাধিক ব্যক্তি চেয়ারম্যান পদে আসীন হয়েছেন। পরবর্তীতে আরো ৫ জন সম্ভবত বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পদে আসীন হবেন। প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীনভাবে জনপ্রতিনিধিদের পদে আসীন হওয়ার রেওয়াজ গণতন্ত্রের জন্য সুসংবাদ নয়। 

তিনি বলেন, কিছুদিন পূর্বে একজন মাননীয় সংসদ সদস্য, তিনি সদ্য প্রাক্তন একজন মন্ত্রীও বটে, সংসদে বলেছেন ‘নির্বাচনকে যথাযথ মর্যাদায় ফিরিয়ে আনতে হবে’। তার ভাষ্যমতে প্রশ্ন থেকে যায়, এই নির্বাচন মর্যাদা হারালো কবে? জাতীয় নির্বাচনের সময়? না উপজেলা নির্বাচনের সময়? এজন্য কে বা কারা দায়ী- তা তিনি সুনির্দিষ্টভাবে বলেননি। তবে তার এই বোধোদয় নিশ্চয়ই নির্বাচনসংশ্লিষ্ট সকলকে অনুপ্রাণিত করবে। মর্যাদাহীন নির্বাচন করে কেউ খুশি হতে পারে না।

তিনি বলেন, স্থানীয় নির্বাচন কি পদ্ধতিতে কতখানি উন্মুক্ত হবে সেটা বর্তমানে সরকার ঠিক করে দেয়। ভবিষ্যতে অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য, আইনানুগ ও উন্মুক্ত নির্বাচন হলে এবং সকল প্রার্থীর সমান সুযোগ নিশ্চিত হলে, সকল দল তাতে অংশগ্রহণ করবে বলে আশা করা যায়। নির্বাচন ব্যবস্থার পদ্ধতি পরিবর্তন করে নির্বাচন কখন হবে, কীভাবে হবে, এই সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ নির্বাচন কমিশনের কাছে ন্যস্ত হলে ভোটার উপস্থিতির জন্য আর হা-হুতাশ করতে হবে না। বিষয়টি ভেবে দেখা প্রয়োজন।

হাশা/ এফসি