• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: এপ্রিল ১৮, ২০১৯, ১২:০২ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : এপ্রিল ১৮, ২০১৯, ০৬:১২ পিএম

ভোটার তালিকা হালনাগাদ

‘রোহিঙ্গা’ ঠেকাতে ৩২ উপজেলায় বিশেষ সতর্কতা

‘রোহিঙ্গা’ ঠেকাতে ৩২ উপজেলায় বিশেষ সতর্কতা
নির্বাচন কমিশন (ইসি) ভবন -ছবি

সারাদেশে এক যোগে আগামী ২৩ এপ্রিল থেকে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কাজ শুরু করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কার্যক্রম শুরুর প্রাক্কালে ভোটার তালিকায় রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে ১০ দফা বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছে সাংবিধানিক সংস্থাটি।   

জানা গেছে, চট্টগ্রাম, বান্দরবান, রাঙামাটি ও কক্সবাজার জেলার ৩২টি উপজেলাকে ‘বিশেষ এলাকা’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এসব এলাকায় ভোটার করতে বিশেষ কমিটিও গঠন করা হয়েছে।

রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়ার বিষয়ে যদি কেউ সহযোগিতা করেন বা মিথ্যা তথ্য দেন অথবা মিথ্যা/জাল কাগজপত্র সরবরাহ করেন অথবা সংশ্লিষ্ট কারো গাফিলতি পরিলক্ষিত হলে তাদের বিরুদ্ধে ভোটার তালিকা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারিও দেয়া হয়েছে।

সূত্র জানায়, রোহিঙ্গা অধ্যুষিত দেশের ৪ জেলা- চট্টগ্রাম, বান্দরবান, রাঙামাটি ও কক্সবাজারের ৩২টি উপজেলার উপর বিশেষ নজর রয়েছে ইসির। এর মধ্যে কক্সবাজার জেলার ৮টি, বান্দরবানের ৭টি, রাঙামাটির ৮ এবং চট্টগ্রামের ৯টি উপজেলা রয়েছে। উপজেলাগুলো হলো- কক্সবাজারের সদর উপজেলা, চকোরিয়া, টেকনাফ, রামু, পেকুয়া, উখিয়া, মহেশখালী ও কুতুবদিয়া। বান্দরবানের সদর, রুমা, থানচি, বোয়াংছড়ি, আলীকদম, লামা ও নাইক্ষ্যংছড়ি। রাঙামাটির সদর, লংগদু, রাজস্থলী, বিলাইছড়ি, কাপ্তাই, বাঘাইছড়ি, জুরাছড়ি ও বরকল এবং চট্টগ্রামের বোয়ালখালী, পটিয়া, আনোয়ারা, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, লোহাগড়া,  বাঁশখালী, রাঙ্গুনিয়া ও কর্ণফুলী উপজেলা।

ইসির সহকারি সচিব মো. মোশাররফ হোসেন জানিয়েছেন, দ্বৈত ভোটার হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কেউ দ্বৈত ভোটার হলে বা মিথ্যা তথ্য দিলে তার জাতীয় পরিচয়পত্র লক করে রাখা হবে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে ভোটার তালিকা আইন অনুযায়ী মামলাও হতে পারে।

উল্লেখিত এলাকায় ভোটার করতে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) আহ্বায়ক ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে সদস্য সচিব করে ১৫ সদস্যের  কমিটির কার্যপরিধিতে ১০টি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। ইসির সহকারি সচিব মো. মোশাররফ হোসেন স্বাক্ষরিত বিশেষ কমিটির কার্যপরিধি হলো- এক. বিশেষ তথ্য ফরমে প্রদত্ত সকল জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বরসমূহ অনলাইনে যাচাই করবেন। যাচাইকালে নিম্নলিখিত বিষয়াদি পর্যবেক্ষণ করবেন: (ক) ভাই/বোনের ডাটাবেইজে পিতা/মাতার নামের সরঙ্গ আবেদনকারীর ফরম-১ এ উল্লিখিত পিতা/মাতার নামের মিল থাকতে হবে। (খ) চাচা/ফুফুর ডাটাবেজে তাদের পিতার নাম ও ঠিকানার সাথে আবেদনকারীর বিশেষ তথ্য ফরমে প্রদত্ত পিতামহের নাম ও ঠিকানার মিল থাকতে হবে। (গ) প্রয়োজনে নিকট আত্মীয়ের মোবাইল নম্বরে কথা বলে তাদের পরিচিতি/তথ্য সম্পর্কিত বিষয়ে নিশ্চিত হতে হবে।

দুই. ভোটার তালিকা আইন,২০০৯ অনুযায়ী ভোটার হতে ইচ্ছুক উপযুক্ত ব্যক্তিকে বাংলাদেশের কোথাও ‘সচরাচর নিবাসী’ হতে হবে। নির্বাচন কমিশন কর্তৃক জারিকৃত পরিপত্রে উল্লিখিত জেলাসমূহে যদি কেউ সচরাচর নিবাসের দাবি করে তবে সেই দাবির যথার্থতা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে অনুসন্ধান করতে হবে। শুধু একটি নিবাসের ঠিকানাই এজন্য যথেষ্ট হবে না। নিবাসের প্রমাণস্বরূপ তাকে এ সংক্রান্ত প্রণীত অতিরিক্ত তথ্য সংগ্রহ ফরম অনুযায়ী চাহিত সব তথ্য দিতে হবে।

তিন. যদি বর্ণিত জেলাসমূহে এই সমস্ত ব্যক্তি নিজস্ব সম্পত্তির সূত্রে তালিকাভুক্তির দাবি করে তবে তাদের সম্পত্তির মালিকানা ও এতদসংক্রান্ত অন্যান্য তথ্য সংশ্লিষ্ট দলিলাদির তথ্য সংগ্রহকারীকে দিতে হবে।

চার. যারা বাংলাদেশি কোনো নাগরিকের সাথে বৈবাহিক সূত্রে ভোটার তালিকাভুক্তির দাবি করবেন তাদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারিকৃত নাগরিক সনদপত্রসহ দলিলাদির তথ্য সংগ্রকারীকে দিতে হবে।

পাঁচ. অন্য কোনো সূত্রে কেউ ভোটার হওয়ার উপযুক্ত দাবি করলে তাদের এ সম্পর্কিত প্রমাণাদি তথ্য সংগ্রহকারীকে দিতে হবে।

ছয়. তথ্য সংগ্রহকারীরা প্রতিটি বাড়ি বাড়ি গিয়ে ফরম-২ এর সঙ্গে এ কার্যক্রমের আওতায় অতিরিক্ত তথ্য ফরম এর মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে প্রয়োজনীয় দালিলিক কাগজপত্রসহ প্রতিটি কেস উপজেলা নির্বাচন অফিসারের নিকট জমা দেবেন। পরবর্তীতে উপজেলা নির্বাচন অফিসার উল্লিখিত কাগজপত্রাদি উপজেলা বিশেষ কমিটির নিকট উপস্থাপন করবেন।

সাত. উপজেলা বিশেষ কমিটি প্রতিটি ফরম পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই-বাছাইপূর্বক সিদ্ধান্ত দেবেন। গ্রহণযোগ্য কেসগুলোতে উপজেলা বিশেষ কমিটির ইতিবাচক সিদ্ধান্ত সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাচন অফিসারকে অবহিত করার পর তিনি ওই সমস্ত নাগরিকদের ভোটার তালিকাভুক্ত করার জন্য দিনক্ষণ নির্ধারণ করে তাদের নিবন্ধন কেন্দ্রে আসার জন্য নোটিশ জারি করবেন। যাদের কেস গ্রহণ করা হবে না, কি কারণে তা গ্রহণ করা হল না, প্রতিটি কেসের জন্য নোটশিটে জেলা কমিটির সদস্যদের স্বাক্ষরে তা লিপিবদ্ধ করতে হবে। এছাড়া উপজেলা নির্বাচন অফিসার নিষ্পত্তির বিষয়টি প্রতিটি বিশেষ তথ্য ফরম (ফরম-২ এর অতিরিক্ত তথ্য)- এর ১৬নং ক্রমিকে বিশেষ কমিটির সিদ্ধান্ত লিপিবদ্ধ করবেন।

আট. যারা ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দেয়ার জন্য ২০০৭-২০০৮ সালে ভোটার তালিকাভুক্ত হয়েছেন কিংবা যাদের অনুকূলে বাংলাদেশের পাসপোর্ট জারি করা হয়েছে তাদের জন্য ৪নং অনুচ্ছেদে বর্ণিত বিধান প্রযোজ্য হবে না।

নয়. উপজেলা বিশেষ কমিটি যাদের আবেদন বাতিল করবে, সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি খসড়া তালিকা প্রকাশের পর উক্ত বিষয়ে বিশেষ কমিটির সিদ্ধান্তের অনুলিপি নিয়ে সংশোধনকারী কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করতে পারবেন।

দশ. রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়ার বিষয়ে যদি কেউ তাদের স্বপক্ষে সহযোগিতা অথবা মিথ্যা তথ্য দেন অথবা মিথ্য/জাল কাগজপত্র সরবরাহ করেন অথবা সংশ্লিষ্ট কারো গাফিলতি পরিলক্ষিত হলে তাদের বিরুদ্ধে ভোটার তালিকা আইন, ২০০৯- এর ১৮ ধারা অনুযায়ী ফৌজদারি মামলা দায়ের করতে হবে।

নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব হেলালু্দ্দীন আহমদ জানান, এবার ৮০ লাখ নাগরিকের তথ্য সংগহের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে কমিশন। ২৩ এপ্রিল থেকে ১৩ মে পর্যন্ত বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার যোগ্যদের তথ্য সংগ্রহ করা হবে। ২৫ মে থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে এই রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম। 

ইসির সংরক্ষিত তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে দেশে ১০ কোটি ৪৩ লাখ ভোটার রয়েছে।

প্রসঙ্গত, ভোটার তালিকা আইন, ২০০৯ এর ১৮ ধারা অনুযায়ী- যদি কোন ব্যক্তি-
(ক) কোনো ভোটার তালিকা প্রণয়ন, পুনঃপরীক্ষণ, সংশোধন বা হালনাগাদকরণ সম্পর্কে; বা
(খ) কোনো ভোটার তালিকাতে কোনো অন্তর্ভূক্তি বা উহা হইতে কোনো অন্তর্ভূক্তি কর্তন সম্পর্কে;

এমন কোনো লিখিত বর্ণনা বা ঘোষণা প্রদান করেন যাহা মিথ্যা এবং যাহা তিনি মিথ্যা বলিয়া জানেন বা বিশ্বাস করেন বা সত্য বলিয়া বিশ্বাস করেন না, তাহা হইলে তিনি অনধিক ৬মাস কারাদণ্ড বা অনধিক ২ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।’

এইচ এস/একেএস