• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: এপ্রিল ১৯, ২০১৯, ০৮:০৩ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : এপ্রিল ২০, ২০১৯, ০২:১১ এএম

নির্বাচনি ব্যয়ের হিসাব দেননি বেশির ভাগ এমপি ও রাজনৈতিক দল

নির্বাচনি ব্যয়ের হিসাব দেননি বেশির ভাগ এমপি ও রাজনৈতিক দল

 

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর নির্ধারিত সময় শেষ হয়ে প্রায় মাস পেরিয়ে গেছে। এরপরও বিধি মেনে নির্বাচনের ব্যয়ের হিসাব নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়নি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়া দলগুলো। নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার পর কয়েকটি রাজনৈতিক দল খণ্ডিত আকারে ব্যয়ের হিসাব দাখিল করলেও তা প্রকাশে লুকোচুরি করছেন কমিশন সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

জানা গেছে, বিধি অনুযায়ী গত ৩১ মার্চের মধ্যে নির্বাচনি ব্যয়ের হিসাব দেয়ার কথা ছিল একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়া রাজনৈতিক দলগুলোর। তবে নির্ধারিত এ সময়ের মধ্যে একটি দলও হিসাব জমা দেয়নি। নির্ধিারিত সময় পার হওয়ার পর কিছু দল তাদের প্রার্থীর ব্যয়ের হিসাব জমা দিলেও তা প্রকাশ করেনি ইসি সচিবালয়।

জানতে চাইলে ইসির যুগ্মসচিব আবুল কাশেম দৈনিক জাগরণকে বলেন, ৩১ মার্চের আগে নির্বাচনি ব্যয়ের হিসাব বেশির ভাগ প্রার্থীই জমা দেননি। তবে এখন বেশকয়েকটি দল ও প্রার্থীর ব্যয়ের তথ্য ইসিতে এসেছে।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও)-এর ৪৪ সিসিসি ধারায় বলা আছে, প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে নির্বাচন শেষ হওয়ার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে তাদের নির্বাচনী ব্যয়ের হিসাব ইসিতে জমা দিতে হবে। ৪৪ ডি ধারায় বলা আছে, কোনো দল ৯০ দিনের মধ্যে ব্যয়ের হিসাব জমা দিতে না পারলে ইসি তাদের সতর্ক করে নোটিশ দিয়ে পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে হিসাব জমা দেয়ার নির্দেশ দিতে পারবে। এ সময়ের মধ্যে কোনো দল হিসাব জমা দিতে ব্যর্থ হলে ইসি তাদের ১০ লাখ টাকা জরিমানা করে পরবর্তী ১৫ দিনের মধ্যে হিসাব জমা দেয়ার নির্দেশ দিতে পারবে। এ ধাপেও কোনো দল হিসাব দিতে ব্যর্থ হলে ইসি সেই দলের নিবন্ধন বাতিল করতে পারবে।

একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর। আইনের বিধান অনুযায়ী, গত ৩১ মার্চ ছিল ইসিতে হিসাব জমা দেয়ার শেষ সময়। তবে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টিসহ নিবন্ধিত ৪০টি রাজনৈতিক দলের কোনোটিই এ সময়ের মধ্যে ইসিতে হিসাব জমা দেয়নি। সাধারণত এ ধরনের ক্ষেত্রে নির্ধারিত সময়সীমা শেষ হওয়ার আগেই ইসি সচিবালয় থেকে দলগুলোকে তাগিদপত্র দেয়া হয়। কিন্তু এবার দলগুলোকে ইসি সচিবালয় থেকে সে ধরনের কোনো তাগিদপত্র দেয়া হয়নি।

সূত্র জানায়, কমিশনের গত একটি বৈঠকে একজন নির্বাচন কমিশনার এ বিষয়ে ইসি সচিবালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বিষয়টি তাদের গোচরে আসে। যে কারণে ইসি সচিবালয় এখন দলগুলোকে ৩১ মার্চের পরে একটি তাগিদপত্র দিয়েছে। সূত্র জানায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একজন প্রার্থী সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা আর রাজনৈতিক দল দলীয়ভাবে সর্বোচ্চ সাড়ে ৪ কোটি টাকা ব্যয় করার সুযোগ ছিল। আইন অনুযায়ী দু’-ধরনের ব্যয়ই নির্ধারিত ব্যয়সীমার মধ্যে প্রার্থী ও দলকে ইসিকে জানাতে হয়। অন্যথায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে জেল-জরিমানা হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

আরপিও অনুযায়ী, কোনো দল থেকে সর্বোচ্চ ৫০ জন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিলে, সে দল সর্বোচ্চ ৭৫ লাখ টাকা ব্যয় করতে পারে। সর্বোচ্চ ১০০ প্রার্থীর জন্য দেড় কোটি টাকা ব্যয় করা যায়। সর্বোচ্চ ২০০ প্রার্থীর জন্য তিন কোটি টাকা এবং ২০০’র বেশি প্রার্থী দিলে সংশ্লিষ্ট দল সর্বোচ্চ সাড়ে ৪ কোটি টাকা ব্যয় করতে পারে। এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সাড়ে ৪ কোটি টাকা পর্যন্ত ব্যয়ের সুযোগ ছিল। কারণ, এই তিনটি দলের প্রার্থী ছিল ২ শতাধিক, যথাক্রমে ২৫৮, ২৪২ ও ২৯০। আর জাতীয় পার্টির ব্যয়ের সীমা ছিল ৩ কোটি টাকার মধ্যে। তবে নির্বাচনে এ অর্থ ব্যয় করতে হয় নির্ধারিত খাতে। এগুলো হলো- দলীয় প্রধানের ভ্রমণ, পোস্টার এবং প্রচারণা সংশ্লিষ্ট অন্যান্য খাত।

এদিকে, আরপিওর ৪৪সি ধারা অনুযায়ী, সংসদ নির্বাচনের বিজয়ী প্রার্থীদের নাম গেজেট প্রকাশের পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে প্রার্থীদের ব্যক্তিগতভাবে নির্বাচনি ব্যয়ের হিসাববিবরণী রিটার্নিং অফিসারের কাছে জমা দিতে হয়। একই সময়ে হিসাব বিবরণীর একটি অনুলিপি সত্যায়িত করিয়ে ডাকযোগে (রেজিস্টার্ড) ইসিতে পাঠাতে হয়।একাদশ সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত প্রার্থীদের নাম গেজেটে প্রকাশ হয়েছিল  ১ জানুয়ারি। এই হিসেবে প্রার্থীদের নির্বাচনি ব্যয়ের হিসাব ৩১ জানুয়ারির মধ্যে রিটার্নিং অফিসারের কাছে জমা দেয়ার কথা ছিল। আর এই হিসাব বিবরণী ইসিতে যে তারিখেই এসে পৌঁছাক না কেন, তা ৩১ জানুয়ারির মধ্যেই ডাকঘরে গিয়ে রেজিস্টার্ড করার কথা। ইসি সচিবালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, প্রার্থীদের অনেকেই ব্যয়ের হিসাব ইসিতে পাঠিয়েছেন। তবে সেই প্রার্থী কারা এবং কতজন, এ বিষয়ে কোনো সার-সংক্ষেপ তৈরি করেনি ইসি সচিবালয়।

প্রসঙ্গত, ২০০৮ ও ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচন শেষেও প্রার্থীদের অনেকে নির্বাচনী ব্যয়ের হিসাব ইসিতে জমা দেননি। তবে এসব প্রার্থীর বিরুদ্ধে সে সময় জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের মাধ্যমে আদালতে মামলা করে ইসি।

এইচ এস/এসজেড