• ঢাকা
  • শনিবার, ০৪ মে, ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: আগস্ট ৬, ২০১৯, ০৮:৪৩ এএম
সর্বশেষ আপডেট : আগস্ট ৬, ২০১৯, ০৮:৪৩ এএম

দেশে প্রাণঘাতী ডেঙ্গুর ভয়াবহতা, স্বস্তিতে কারা সেক্টর 

দেশে প্রাণঘাতী ডেঙ্গুর ভয়াবহতা, স্বস্তিতে কারা সেক্টর 
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার

রাজধানীসহ সারাদেশে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা থাকলেও বাংলাদেশ জেল সেক্টর রয়েছে স্বস্তিতে। ওই সেক্টরে কয়েকজন বন্দি ও কারারক্ষী ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, ডেঙ্গু আক্রান্ত বন্দি এবং কারারক্ষীদের অধিকাংশই সুস্থ হয়ে উঠেছেন। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার, গাজীপুরের কাশিমপুর ৪টি কেন্দ্রীয় কারাগারে গুরুতর অবস্থায় আক্রান্ত কোন ডেঙ্গু রোগী নেই। আমাদের ৮ বিভাগের মধ্যে ৬৮ কারাগারের কর্মকর্তাদের তথ্য মতে, আমরা ভাল আছি। আমাদের মধ্যে ডেঙ্গু নিয়ে কোনো পেরেশানী নেই।  

কারা সূত্র বলেছে, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর কলেজ গেট সংলগ্ন মানসিক স্বাস্থ্য ইনষ্টিটিউট ও হাসপাতালে একজন বন্দি আছেন। তার অবস্থা ভালো বলে জানান কারা কর্মকর্তা। এছাড়া টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে দুজন কারারক্ষী ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন তারা। তাদের অবস্থাও অনুকূলে বলে জানা গেছে। 

এছাড়া কক্সবাজার, চট্টগ্রামে ৩ জন কারাবন্দি ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। বর্তমানে তারা সুস্থ রয়েছেন। অপরদিকে ফরিদপুর  ও কিশোরগঞ্জে ৩জন কারারক্ষী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। তারা হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর একজন ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। বাকী দুজন সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরে গেছেন।

এবিষয়ে কারা অধিদফতরের ডিআইজি প্রিজন্স ( ঢাকা বিভাগ ) টিপু সুলতান বলেন, ডেঙ্গুর প্রকোপ থেকে আমাদের আল্লাহ অনেকটা দুরে রেখেছে।  আমাদের অধীনে প্রায় ৭২ হাজার বন্দি এবং প্রায় ১৩ হাজার কারারক্ষী রয়েছেন। তাদের মধ্যে মাত্র কয়েকজন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিলেন। তাদের অধিকাংশই সুস্থ হয়ে উঠেছেন। আমরা ( কারা সেক্টর) এবিষয়টি নিয়ে অনেকটা স্বস্তিতেই আছি। 

অপরদিকে কারা অধিদফতরের এআইজি  প্রিজন্স ( প্রশাসন ) আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, কয়েকজন কারারক্ষী ও কারাবন্দি ডেঙ্গুরোগে আক্রান্ত হয়েছেন। তারা সকলেই চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তবে তাদের অবস্থা ভালো। আমাদের সতর্কতার কারণে কারা সেক্টরে ডেঙ্গু বিস্তার লাভ করতে পারেনি।  আমরা নিজজেরাই জেলার ও জেল সুপারের মাধ্যমে নির্দেশনা দিয়ে কারা অভ্যন্তরের সকল আর্বজনা, গাছ গাছালি প্রতি সপ্তাহে একবার করে পরিস্কার করিয়ে থাকি। প্রতি সপ্তাহে একবার কাজ পরিদর্শন করা হয়ে থাকে। ফলে ডেঙ্গু ভয়াবহ ভাবে আক্রমণ করেনি আমাদের লোকজনের মধ্যে। 
  
সোমবার (০৫ আগস্ট)  ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে হাসান (১৩) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে সোমবার সারাদেশে ৩ জনের মৃত্যু হলো। পাশাপশি শুধু ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়ালো ১৩ জনে। দু’দিন একটু কম থাকার পর রোগীর সংখ্যা আবার বাড়ছে বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। 

এছাড়া ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে শারমিন আক্তার (২৪) নামের এক অন্তঃসত্ত্বা নারী মারা গেছেন।  সোমবার ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। শারমিন ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। তার বাড়ি জয়পুরহাটে। ঢাকার আবহাওয়াবিদ নাজমুল হোসেনের স্ত্রী শারমিন।

অন্যদিকে মাদারীপুরের শিবচরে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে আরও এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। তার নাম রিপন হাওলাদার (৩০)।  সোমবার ভোরে শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। রিপন রাজধানী ঢাকায় একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, ডেঙ্গু রোগীর ভিড়ের চাপে সরকারি বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিক কোথাও জায়গা নেই। মেঝেতে, সিঁড়ির তলে, বারান্দায়, করিডোরে গাদাগাদি করে রাখা হয়েছে ডেঙ্গু রোগী। রাজধানীর হাসপাতালগুলো ডেঙ্গু রোগীর চাপ  সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালগুলোতে বলতে গেলে ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। কারণ কোন স্থানেই বেড খালি নেই। সরকারি হাসপাতালে বারান্দায় অতিরিক্ত বেড দিয়ে, মেঝেতে পাটি বিছিয়ে  রোগীর চিকিৎনা চলছে। স্বজনদের ডাক চিৎকার সহ্য করেও ম্যানেজ করার চেষ্টা চলছে। 

অপরদিকে ডেঙ্গু শনাক্তে রক্ত পরীক্ষার ক্ষেত্রে প্রযোজনীয় কিট এবং রিএজেন্ট সংকট রয়েছে সরকারি একাধিক হাসপাতালে। তবে স্বাস্থ্য অধিদফতরের ডিজি ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেছেন, এটা সাময়িক। দ্রুতই সমস্যার সমাধান হচ্ছে। 

বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের সাবেক ডীন ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ জানান, এ মৌসুমে কয়েক হাজার ডেঙ্গু রোগীকে চিকিৎসা দিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, এ বছর তো অনেক রোগী দেখলাম, সেই জানুয়ারি থেকে শুরু করেছি। মে জুন থেকে তো ডেইলি প্রচুর রোগী দেখছি। প্রতিদিনই বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীরা ভিড় করছেন, অনেকেই সিটের অভাবে ভর্তি হতে পারছেন না। যেখানে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হওয়ার কথা না যেমন নিউরোলজি ওয়ার্ড, সিসিইউ ইত্যাদিতেও বেড দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে এক হাজার ৭১২ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজার ৫১৩ জন। এর আগে, গতকাল ২১ হাজার ১৮৩ জনের ডেঙ্গু আক্রান্তের খবর দিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম।

অপরদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য বলছে, এর আগে, ২৫ জুলাই ৫৪৭ জন, ২৬ জুলাই ৩৯০ জন, ২৭ জুলাই ৬৮৩ জন, ২৮ জুলাই ৮২৪ জন এবং ২৯ জুলাই ১০৯৬ জন, ৩০ জুলাই ১৩৩৫, ৩১ জুলাই ১৪৭৫ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়। ডেঙ্গু নিয়ে নতুন করে যারা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ২২২ জন রয়েছে ঢাকা মেডিকেলে। নতুন-পুরনো মিলিয়ে বর্তমানে এ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে ৭০৬ জন ডেঙ্গু রোগী। এছাড়া মিটফোর্ড হাসপাতালে ৩৩৭, ঢাকা শিশু হাসপাতালে ১৩২, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ৩২২, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ১৯৭, বারডেম হাসপাতালে ৫৭, বিএসএমএমইউতে ১২৭, পুলিশ হাসপাতালে ১৬৫, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২৮৭, বিজিবি হাসপাতালে ৩০, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ৩০৫ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে সর্বমোট চার হাজার ৩৩২ জন ভর্তি আছে, এর মধ্যে সরকারি হাসপাতালগুলোয় রোগীর সংখ্যা এক হাজার ৬২৪ জন।

এইচ এম/বিএস 

আরও পড়ুন