• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: অক্টোবর ৩১, ২০১৯, ১২:৩৮ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : অক্টোবর ৩১, ২০১৯, ১২:৩৮ পিএম

সিলিন্ডার বিস্ফোরণে চিকিৎসাধীন আরও ২ শিশুর মৃত্যু

সিলিন্ডার বিস্ফোরণে চিকিৎসাধীন আরও ২ শিশুর মৃত্যু
এক শিশুর মরদেহ নিয়ে যাচ্ছে স্বজনরা-ছবি : সংগৃহীত

রূপনগরে গ্যাস বেলুনের সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও দুই শিশু মারা গেছে। শিশু দুজন হলো- রিয়া ও নিহার। এ নিয়ে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো সাতে। 

ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন আরও দু’জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

বুধবার (৩০ অক্টোবর) বিকেলে রাজধানীর মিরপুর রাজধানীর মিরপুরের ১১ নং রোডের মনিপুর স্কুলের পাশে একটি আবাসিক ভবনের সামনে এ দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই ৫ জন মারা যায়। এ ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে, থামছে না স্বজনদের আহাজারি।

সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিহতদের ময়না তদন্ত শেষে আজই পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হবে। গ্রামের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে মরদেহ দাফনের সামর্থ্য নেই এসব নিম্ন আয়ের অনেক পরিবারের। সরকারের কাছে সহায়তা চেয়েছেন তারা।

একই ঘটনায় চোখে মারাত্মক আঘাত পেয়েছে আট বছরের নিহাদ। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, পুরোপুরিভাবে অন্ধও হয়ে যেতে পারে নিহাদ। এরই মধ্যে ডান চোখে আলো না ফেরার কথা জানিয়ে দিয়েছেন চিকিৎসকরা। তাকে ঢাকা মেডিকেল থেকে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে স্থানান্তর করা হয়েছে।

মামলা দায়ের, গ্রেফতার বেলুন বিক্রেতা

বিস্ফোরণের ঘটনায় বেলুন বিক্রেতা আবু সাঈদকে (৩০) পঙ্গু হাসপাতাল থেকে আটক করেছে পুলিশ। আটকের কয়েক ঘন্টা পর তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। বুধবার (৩০ অক্টোবর) দিবাগত রাত ৩টায় পুলিশ বাদী হয়ে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে।  বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রূপনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ।

জানা যায়, সিলিন্ডারে নিজেই গ্যাস তৈরি করতো আবু সাঈদ। ভেতর পানি এবং কেমিক্যালের মিশ্রণ ঘটিয়ে গ্যাস তৈরি করত সে। ঘটনাস্থলের পাশের দোকান কর্মচারী রায়হান জানায়, আবু সাঈদ সিলিন্ডারে কেমিক্যাল দিয়ে লাঠি দিয়ে নাড়ছিলেন। এ সময় ধোঁয়া বের এবং সিলিন্ডারটি প্রচণ্ড গরম হয়ে বিস্ফোরণ ঘটে। এ সময় তাকে ঘিরে অনেকগুলো শিশু দাঁড়িয়ে থাকা সব শিশুই কমবেশি আহত হয়। দেখি ঘটনাস্থলে হতাহত অবস্থায় ৭ জন পড়ে আছে। এর মধ্যে ৪ জনই মৃত। একজন নারীর হাত ছিটকে এসে আমার সামনে পড়ে। ওই নারী ছিল অজ্ঞান অবস্থায়। একজন শিশু ছিন্ন ভিন্ন অবস্থায় লাফাচ্ছিল। একজন মাদ্রাসা ছাত্রকে নারী-ভুরি বের হয়ে গেছে।

সোহেল নামে আরেক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, রূপনগর ১১ নম্বর সড়কে দুই-তিন দিন পরপরই গ্যাস বেলুন বিক্রি করতে আসতেন এক ব্যক্তি। আসা মাত্রই তাকে ঘিরে ধরত ফজর মাতবরের বস্তির শিশুরা। বরাবরের মতো বুধবারও বেলুন বিক্রেতার গাড়িটিকে ঘিরে দাঁড়িয়েছিল শিশুরা। সেটিই কাল হলো তাদের। গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে মুহূর্তেই ঝরে গেছে পাঁচ শিশুর তাজা প্রাণ। পরে মারা গেল আরও ২ জন।

তিনি জানান, একটি ভ্যান গাড়িতে করে ওই ব্যক্তি মিরপুরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে গ্যাস বেলুন বিক্রি করতেন। বুধবার বিকেলে রূপনগর ১১ নম্বর সড়কের শেষ মাথায় ফজর মাতবরের বস্তির সামনে বেলুন বিক্রি করতে আসেন তিনি। তাকে দেখামাত্রই বস্তির শিশুরা তাকে ঘিরে ধরে। এ সময় সিলিন্ডারে পাউডার জাতীয় কিছু একটা ভরছিলেন ওই বেলুন বিক্রেতা। এর পরপরই হঠাৎ বিকট শব্দে সিলিন্ডারটি বিস্ফোরিত হয়। বিস্ফোরণের সঙ্গে সঙ্গে আশপাশে থাকা ১০-১২ জন ছিটকে পড়েন। পেটে আঘাত পাওয়া আরেক শিশু দৌড়ে সেখান থেকে পালানোর চেষ্টা করে। কিন্তু কিছু দূর যাওয়ার পরই সে লুটিয়ে পড়ে। পরে সেখানেই তার মৃত্যু হয়। স্থানীয় ঝালমুড়ি বিক্রেতা মোহাম্মদ হোসেন বলেন, বিস্ফোরণের স্থান থেকে কিছুটা দূরে আমি ঝালমুড়ি বিক্রি করি। বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে ওই বেলুন বিক্রেতা ভ্যান নিয়ে আমার সামনে এসে দাঁড়ালে আমি তাকে চলে যেতে বলি। এরপর একটু সামনে এগিয়ে গিয়ে তিনি একটি টিনশেডের ঘরের সামনে গিয়ে দাঁড়ান। কিছুক্ষণ পর বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পাই। বিস্ফোরণে আহত নারী জান্নাত বেগমের স্বামী নজরুল ইসলাম বলেন, বিকেলে বাজার করে ফেরার সময় ১১ নম্বরের সড়কের মাথায় আসতেই বিস্ফোরণ হয়। বিস্ফোরণে তার স্ত্রীর ডান হাতের একটি অংশ শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। জান্নাত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

এইচএম/এসএমএম

আরও পড়ুন