• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মে ৮, ২০১৯, ০৯:১৬ এএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ৮, ২০১৯, ১০:৪১ পিএম

বাহিনী থাকলেও পশ্চিমবঙ্গে ছাপ্পা ভোট আটকানো সম্ভব?

বাহিনী থাকলেও পশ্চিমবঙ্গে ছাপ্পা ভোট আটকানো সম্ভব?


পশ্চিমবঙ্গে ভোট যত এগোচ্ছে, ধাপে ধাপে কেন্দ্রীয় বাহিনীর সংখ্যা তত বাড়ছে। ১১ এপ্রিল প্রথম দফার ভোট যেখানে ৬০ শতাংশ বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী ছিল, সেখানে ৬ মে সোমবার পঞ্চম দফার ভোটে ১০০ শতাংশ বুথেই ছিল আধাসেনা। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, রাজ্যে বাকি দু-দফার ভোটেও সব বুথে বাহিনী থাকবে। কিন্তু নিরাপত্তার এই বজ্র আঁটুনি সত্ত্বেও ফস্কা গেরো থেকে যাচ্ছে কি না, সেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

গত বছর পঞ্চায়েত ভোটে সীমাহীন সন্ত্রাসের মাথায় রেখে রাজ্যে লোকসভা ভোট ১০০ শতাংশ বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী রাখার দাবি জানিয়ে ছিল সব কটি বিরোধী দল। সন্দেহ নেই, গোটা দেশের মধ্যে একমাত্র এই রাজ্যেই এমন দাবি ওঠে। ভারতে একমাত্র জম্মু-কাশ্মির বাদ দিলে কোনও রাজ্যে এত আধাসেনা থাকে না। তবু এই দাবি উঠেছে পশ্চিমবঙ্গ থেকে। বাম আমলে এই দাবি তুলতেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এখন তুলছেন তাঁর সরকারের বিরোধীরা।
ভোটের বাজারে আধুনিক অস্ত্র হাতে জওয়ানদের চোখের সামনে দেখলে সাধারণ ভোটাররা যে ভরসা পান, তাতে সন্দেহ নেই। নিরাপদে ভোটপর্ব মেটানোর পাশাপাশি ভোটারদের আস্থা ফেরাতে আধাসেনা যে টনিকের মত কাজ করে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু পাঁচ দফা ভোটের শেষে এই বাহিনীর বিরুদ্ধেই অভিযোগের আঙুল তুলেছে দু-পক্ষ। তৃণমূলের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় বাহিনী অতি সক্রিয়তা দেখাচ্ছে। আর বিরোধীরা বলছে বাহিনী নিষ্ক্রিয়।

খোলা চোখে দেখা যাচ্ছে, পাঁচ দফা ভোটে বিক্ষিপ্ত হলেও হিংসা থেমে নেই. গুলি-বোমা-হামলা, রক্তপাত, বুথে ঢুকে ভোটের ইভিএম মেশিন ভেঙ্গে ফেলা—সবই হয়েছে কেন্দ্রীয় ভারতের কোনও বাহিনীর সামনে। বাহিনীর পাহারায় থাকা বুথে অবাধে রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের প্রবেশ, একের ভোট অন্যের দিয়ে দেওয়া—বাহিনীর সামনেই এসবও হচ্ছে। দেশের কোনও রাজ্যে যেখানে প্রায় উত্সবের মেজাজে ভোট চলছে, সেখানে পশ্চিমবঙ্গে ভোটের সকাল থেকেই টানটান উত্তেজনার ছবি! 

প্রশ্ন উঠেছে, এত কেন্দ্রীয় বাহিনী সত্ত্বেও পশ্চিমবঙ্গের ভোট কি অবাধ হচ্ছে? উত্তরটা এক কথায়, না। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এ রাজ্যে ছাপ্পা ভোটকে প্রায় শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গেছে শাসক-বিরোধী দু-পক্ষই। বাহিনীর কঠিন চোখের সামনে তা কি ভাবে সম্ভব হচ্ছে? বিশেষজ্ঞরা মোটামুটি ছাপ্পা ভোট বা ভোট প্রভাবিত করার কারণ দেখিয়েছেন.
এক), ভোটের তিন দিন আগে থেকে বিভিন্ন মহল্লায় গিয়ে ভোটাদের সন্ত্রস্ত করা, যাতে তাঁরা ভোট দিতে না যান. দুই), রাজ্য সরকারি কর্মচারী ভোটের কর্মীদের সবক শিখিয়ে বুথের মধ্যে অবাধে ভোট দেওয়া। বুথে থাকা কেউ এতে বাধা দিলে পরে বিপদে পড়তে পারেন বলে সব দেখেও হজম করে নিতে হয়। তিন), নির্দল প্রার্থীদের নামে বুথে একাধিক পোলিং এজেন্ট ঢুকিয়ে রাজনৈতিক দলগুলি শক্তি বাড়ে, যাতে সমস্বরে সোচ্চার হয়ে চাপ তৈরি করতে পারেন।

ঘটনা হল, যে পাঁচ দফা ভোট হয়েছে, তাতে এই ভোট-কারচুপি শিল্প ফের সামনে এসেছে। কোথাও শাসক তৃণমূল। কোথাও বিজেপির বিরুদ্ধে ছাপ্পা ভোটের একাধিক অভিযোগ উঠেছে।

বলাই বাহুল্য, এর কোনওটাই কেন্দ্রীয় বাহিনীর আটকানো কম্ম নয়। কারণ, এসব হয় ভোটের আগে পাড়ায়, পাড়ায় আর বুথের মধ্যে। দুটি ক্ষেত্রেই পরিস্থিতি সামাল দিতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর কোনও ভূমিকা থাকে না। থাকার কথাও নয়।

অতএব, কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকুক অথবা না থাকুক, পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলির এই ভোট-কারচুপির ট্রাডিশন চলছে, চলবে। কোনও শক্তি তাকে দাবিয়ে রাখতে পারবে না।

আরআই