• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মে ১৫, ২০১৯, ০৭:০৫ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ১৫, ২০১৯, ০৭:০৫ পিএম

চীনে ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে শূকর, রপ্তানি হ্রাসের আশঙ্কা

চীনে ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে শূকর, রপ্তানি হ্রাসের আশঙ্কা

 

চীনের হেবেই প্রদেশের একটি খামারে গত বছরের ডিসেম্বর মাসে রহস্যময় ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় সান ডাউস প্রজাতির প্রায় ২০ হাজারের বেশি শূকর। যাদের মধ্যে ১৫ হাজার শূকরের মৃত্যুর কারণ সেই ভাইরাস। আর বাকি পাঁচ হাজারকে সাবধানতা হিসেবে হত্যা করা হয়। প্রদেশটির একজন কৃষি উদ্যোক্তা বলেন, ‘ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব প্রথমে কয়েকটি শূকরের মধ্যে দেখা দিলেও পরবর্তীতে তা শত শত শূকরকে অসুস্থ করে ফেলে। এতে শেষ পর্যন্ত এক দিনে অন্তত আট শতাধিক শূকরকেও মারা যেতে হয়।’

বিশ্বব্যাপী কৃষি খাতে ঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ডাচ রাবোব্যাংক জানায়, আফ্রিকার সোয়াইন জ্বর (এএসএফ) বিশ্বের সবচেয়ে বড় চীনের শূকর শিল্পকে হ্রাস করছে। প্রতিষ্ঠানটি এও অনুমান করে যে, দেশটিতে বর্তমানে শূকরের সংখ্যা প্রায় ২০ মিলিয়নের বেশি। যা রোগ ও সঙ্কোচনের মাধ্যমে খুব শিগগিরই এক-তৃতীয়াংশে সঙ্কুচিত হতে পারে। যদিও তা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের হিসেবে অনেক।

বিশ্লেষকদের দাবি, ভাইরাসটি মানুষের জন্য তেমন ক্ষতিকর না হলেও এতে গোটা শূকর প্রজাতির বিলুপ্তি হতে পারে। গত আগস্ট মাসে ভাইরাসটি চীনে দেখা দিলেও এর উৎপত্তি কিন্তু আফ্রিকায়। যা চীনে আসার পূর্বে প্রথম ইউরোপ ও রাশিয়াতেও দেখা দিয়েছিল। তাছাড়া রহস্যময় সেই ভাইরাসের প্রভাব ইতোমধ্যে ভিয়েতনাম এবং কম্বোডিয়াসহ এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলোতে পড়তে শুরু করেছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) মতে, চীনের কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ বর্তমানে ভাইরাসটিকে নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার জন্য সঠিক পদক্ষেপ নিয়েছে।

চীনের এফএও প্রতিনিধি ভিনসেন্ট মার্টিন বলেন, ‘আমরা সম্ভবত এই রোগ নিয়ন্ত্রণে যা করতে পারে তা-ই করেছি। আমাদের একটি পরিকল্পনা ছিল, সেই কৌশল মেনেই আমরা এখন খুব জোরালোভাবে এগিয়ে যাচ্ছি। যদিও এর প্রস্থানের মাত্রা আমাদের অনুমানের চেয়ে অনেক বড় হতে পারে। কারণ কিছু কৃষক আমাদের জানিয়েছেন যে এই রোগটি সর্বদা স্থানীয়ভাবে স্বীকৃত নয়।’

এফএও সূত্র জানায়, হেবেই প্রদেশের সেই ফার্মে প্রাদেশিক কর্মকর্তাদের প্রাথমিক পরীক্ষায় এএসএফের নেতিবাচক প্রভাব ছিল। যদিও মৃত সেই প্রাণীদের ছবি অনলাইনে পোস্ট করার পরে দেশের রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র তাদের পরীক্ষা করে নিশ্চিত করেছে যে, তারা প্রত্যেকেই শরীরে ভাইরাস বহন করেছে। তাছাড়া সেই ফার্মের সহকর্মী কৃষক ঝাং হ্যাক্সিয়া ছয় শতাধিক শূকরকে নিজের সামনে মারা যেতে দেখেছেন। পরবর্তীতে মৃত্যুর কারণ হিসেবে তিনি সিএনএনকে জানান, শূকরগুলোর নিয়মিত ইনফ্লুয়েঞ্জা ছিল। যে কারণে তার তত্ত্বাবধায়নে থাকা এসব প্রাণীর মৃত্যু হয়েছে।

যদিও স্থানীয় কর্মকর্তারা বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক মন্তব্য করতে রাজি নন। তাদের দাবি, প্রাদেশিক সরকার আমাদের হুমকি দিয়েছে যে আমরা যদি সরকারে উচ্চতর আপত্তি জানাই তাহলে এর ফল অন্যরকম হবে। কর্মকর্তাদের সেই মন্তব্যের জন্য সিএনএন হেবেই কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বারংবার যোগাযোগ করেছে। যদিও সেখান থেকে তারা কোনোই প্রতিক্রিয়া পায়নি।

এফএওর প্রতিনিধি ভিনসেন্ট মার্টিন এরই মধ্যে সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে, ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব সম্পূর্ণরূপে অন্তর্গত হওয়ার এটি কয়েক বছর সময় নিতে পারে। তাই এখনই ভাইরাসটি পুরোপুরি দমন হয়েছে বলা যাবে না। তিনি বলেন, ‘আমি নিশ্চিত নই যে এটি আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে; কারণ আমরা জানি রোগটি কতটা জটিল। আমাদের এই রোগগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ পেতে আরও কয়েক বছর সময় লাগতে পারে। তা আমি অন্যান্য দেশের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি।’

এএসএফ ধারণকারী চীনের প্রধান সমস্যাগুলোর মধ্যে একটি হল, বর্তমানে এই ভাইরাসের আঘাতে দেশটির এই শূকর শিল্পটি পুরোপুরি ভেঙে গেছে। মার্টিন বলেন, ‘হাজার হাজার ক্ষুদ্র খামার রয়েছে যা রোগের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে সঠিক জৈব-নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিতে পাড়ছে না। আরেকটি জটিলতা হলো যে ভাইরাস কয়েক মাস ধরে শূকরের মাংসের মধ্যে বেঁচে থাকতে পারে। অর্থাৎ ভাইরাসটি প্রাণীটির মাংসের মধ্যে পুনঃ প্রবর্তিত হতে পারে।’

চীনের সরকারি পূর্বাভাস অনুযায়ী, দেশটিতে বর্তমানে ১.৪ বিলিয়ন ভোক্তা রয়েছে। যাদের মধ্যে এই প্রাণীটির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ২০১৯ সালে শূকরের সরবরাহ কমার কারণে বছরের দ্বিতীয়ার্ধে বাজারে এর চাহিদা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে।

সূত্র : সিএনএন

এসজেড