• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৩ মে, ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুন ২৫, ২০১৯, ০৫:২৬ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুন ২৫, ২০১৯, ০৫:২৬ পিএম

কাটমানি ইস্যু খুঁচিয়ে তুলে আখেরে মমতার লাভ হচ্ছে? 

কাটমানি ইস্যু খুঁচিয়ে তুলে আখেরে মমতার লাভ হচ্ছে? 
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় - ফাইল ছবি

পশ্চিমবঙ্গের কাটমানি ইস্যু এবার ভারতীয় সংসদের আলোচনাতেও জায়গা করে নিল। মঙ্গলবার (২৫ জুন) এ রাজ্যের বিজেপি সাংসদ দিলীপ ঘোষ বিষয়টি উত্থাপন করে অভিযোগ করেন, পশ্চিমবঙ্গে সব কাজেই কাটমানি দিতে হয়। কাটমানির জন্য গ্রামের মানুষ কেন্দ্রের বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ দিলিপবাবুর।

পিছিয়ে নেই রাজ্য বিধানসভাও। সোমবার থেকে কাটমানি ইস্যুতে বিধানসভার অধিবেশন বয়কট করছেন বাম ও কংগ্রেস বিধায়করা। তাদের দাবি, কাটমানি নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশ করুক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

কাটমানি নিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্যের আইনসভায় এই যদি হয় বিরোধী দলের ভূমিকা, তাহলে রাজ্যের শাসক দলও এই ইস্যুতে আতান্তরে পড়েছে। ইতিমধ্যে তৃণমূলের পরিষদীয় নেতা পার্থ চট্টোপাধ্যায় দাবি করেছেন, দলের ৯৯.৯৯ শতাংশ সৎ। মানে ০.০১ শতাংশ কাটমানি নিয়েছেন। যা শুনে বিরোধীদের কটাক্ষ, তাহলে ওই ০.০১ শতাংশের নাম জানিয়ে দিক সরকার।
 
আবার, ইস্যু হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে সব জেলার পুলিশ সুপারদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে, কাটমানি খাওয়ার অভিযোগ এলে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা করুন। সব মিলিয়ে মমতার এক ঘোষণাতেই ছত্রখান দল ও সরকার। বিরোধীরাও যেন না চাইতেই হাতে চাঁদ পেয়েছেন।

রাজ্যের পরিষদীয় নেতা যে অবাস্তব দাবিই করুন, পশ্চিমবঙ্গে কোনো কাজই কাটমানি বা তোলা না দিয়ে হয় না, তা বোঝার জন্য কোনো পুরস্কার নেই। কাটমানি-তোলা-ঘুষ যেন হাত ধরাধরি করে চলছে। হাসপাতালে রোগীর ট্রলি ঠেলতে ঘুষ দিতে হয়। যেকোনো সরকারি প্রকল্পের প্রাপ্য টাকা পেতে কাটমানি দিতে হয়। আবার, কোনো কিছু চালু করতে বা নির্মাণ করতে তোলা দেয়া বাধ্যতামূলক। আপনি হাত বাড়ালেই টাকা চেয়ে অন্য হাত এসে পড়বে। বাম আমলে এই রোগ অল্প-বিস্তর ছিল। এখন সংক্রামক রোগের চেহারা নিয়েছে।

কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, কাটমানি, তোলা কি শুধুই কাউন্সিলর-পঞ্চায়েতের প্রতিনিধিরাই নিয়েছেন? গত কয়েক দিনের ছবিটা হল, জেলায় জেলায় কাটমানি নেয়ার অভিযোগে তৃণমূলের জনপ্রতিনিধি ও নেতারা গ্রামের মানুষের ক্ষোভের মুখে পড়ছেন। কিন্তু দলের জেলা ও রাজ্য স্তরের নেতা, মন্ত্রী, বিধায়ক, সাংসদদের কী হবে? তাদের আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ— অভিযোগ তেমনই।

প্রশ্ন হল, কাটমানি ফেরত দিতে হবে বলে কেন দলীয় সভায় বললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? সরকারে এসে গত ৮ বছরে তিনি এসব টের পাননি, তা নয়। আবার লোকসভায় খারাপ ফলের পর তিনি কাটমানি, তোলা আদায়ের বিষয়টি জেনেছেন, তা-ও নয়। বরং ঘটনা হল, গত ৮ বছরে দুর্নীতির অভিযোগে দলের একজনকেও শাস্তি পেতে হয়নি।
 
রাজনৈতিক মত হল, দলের মতো নিজের সততার প্রতীক ভাবমূর্তির পুনর্নির্মাণ জরুরি হয়ে পড়েছে মমতার কাছে। লোকসভার প্রচারে এসে তৃণমূলকে সিন্ডিকেটের দল বলে কটাক্ষ করেছিলেন নরেন্দ্র মোদী। এখন সেই কথা বলছেন মমতা। ভোটের ফল বুঝিয়ে দিয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর কথাকেই বিশ্বাস করেছেন মানুষ। তাই সততার প্রতীক ফিরিয়ে আনা জরুরি ছিল মমতার।

২০১১ সালে মমতার সততার প্রতীক কাটআউটে ছেয়ে গিয়েছিল রাজ্য। পরে সেই প্রচার বন্ধ হয়ে যায়। আবার একবার তা তুলে ধরার চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু গোটা দল বা প্রশাসনের গা থেকে কাটমানির তকমা মুছে দিয়ে সততার প্রতীক হিসেবে নিজেকে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলা কঠিন তো বটেই, অসম্ভবও।  

এফসি