• ঢাকা
  • রবিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুলাই ১৭, ২০১৯, ০৪:৪৬ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুলাই ১৭, ২০১৯, ০৪:৪৭ পিএম

মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় মিয়ানমার সেনাপ্রধানসহ শীর্ষ কর্মকর্তারা

মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় মিয়ানমার সেনাপ্রধানসহ শীর্ষ কর্মকর্তারা
মিয়ানমারের সেনাপ্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইং।

 

রোহিঙ্গা সংখ্যালঘুদের ‘জাতিগত নিধন’ অভিযানে মিয়ানমার সেনাপ্রধান ও ৩ উর্ধ্বতন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এর অর্থ হল, মিয়ানমারের ওই সেনা কর্মকর্তা এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অনুমতি পাবেন না। যুক্তরাষ্ট্রে তাদের কোনো সম্পত্তি থাকলে তা বাজেয়াপ্ত করা হবে। যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তারা কোনো ব্যবসায়িক লেনদেনও করতে পারবে না। এই চারজন হলেন- মিয়ানমারের সেনাপ্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইং, সেনাবাহিনীর উপ প্রধান ভাইস সিনিয়র জেনারেল সো উইন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল থান ও এবং ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অং অং।

রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর বর্বর নির্যাতনে দেশটির শীর্ষ সেনা কর্মকর্তাদের ভূমিকা নিয়ে জবাবদিহিতা জোরদার করতে আহ্বান জানায় যুক্তরাষ্ট্র। ২০১৭ সালে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর সহিংস অভিযান সম্পর্কে সেনাপ্রধান মিন অং লায়েং এবং অন্য সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ‘বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ’ থাকার কথা জানায় মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট। ওই অভিযানের ফলে সেই সময় প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।

মিয়ানমারের সাবেক নাম বার্মার কথা উল্লেখ করে মার্কিন পররাষ্ট্র সচিব মাইক পম্পেও বলেন, ‘এই ঘোষণার মাধ্যমে রাষ্ট্র হিসেবে সর্বপ্রথম বার্মিজ সামরিক বাহিনীর সর্বাধিক সিনিয়র নেতৃত্বের বিরুদ্ধে সম্মানের সহিত সরকারি পদক্ষেপ গ্রহণ করল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য বার্মিজ সরকার এখন পর্যন্ত দায়ী ওই সব সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করা সম্পর্কে আমরা অবগত ও উদ্বিগ্ন। বার্মিজ সামরিক বাহিনী দেশব্যাপী চলমান মানবাধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপারেও দেশটির সরকার উদাসীন।’ মঙ্গলবারের বিবৃতিতে তিনি আরো বলেন, রাখাইনে মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িত থাকার বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পাওয়ার পরই মিয়ানমারের ওই চার শীর্ষ সেনা কর্মকর্তারা বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

এ ছাড়াও মিয়ানমারের রোহিঙ্গা গ্রামবাসীদের হত্যা করার জন্য দোষী সাব্যস্ত হওয়া সাতজন সৈনিককে গত মে মাসেই মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। ২০১৭ সালে রাখাইনে সেনা অভিযানের সময় শিশুসহ ১০ রোহিঙ্গা মুসলিমকে হত্যার পর লাশ পুঁতে ফেলার ঘটনায় সাত সেনা সদস্যকে ১০ বছরের সাজা দেওয়া হয় সামরিক আদালতে। কিন্তু সাত মাস না যেতেই তাদের গোপনে ছেড়ে দেওয়া হয়। সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইং নিজেই ওই সাতজনকে মুক্তির ওই আদেশ দিয়েছিলেন বলে সম্প্রতি তথ্য প্রকাশ করেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী পম্পেও। যার অর্থ হলো, ওই সৈনিকরা বার্তা সংস্থা রয়টার্সের দুই সাংবাদিকের চেয়েও কম জেল খেটেছে, যারা হত্যাকাণ্ডের ঘটনা উন্মোচন করে ৫০০ দিনেরও বেশি সময় কারাভোগ করেছিল। জাতিসংঘ তদন্তকারীরা সহিংস ‘গণহত্যা’র জন্য শীর্ষ জেনারেলদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত এর বিরুদ্ধে একটি প্রাথমিক তদন্তও শুরু করেছে।

২০১৭ সালের ২৫ অগাস্ট রাখাইনে নিরাপত্তা বাহিনীর বেশ কিছু স্থাপনায় ‘বিদ্রোহীদের’ হামলার পর রোহিঙ্গাদের গ্রামে গ্রামে শুরু হয় সেনাবাহিনীর অভিযান। সেই সঙ্গে শুরু হয় বাংলাদেশ সীমান্তের দিকে রোহিঙ্গাদের ঢল। তাদের কথায় পাওয়া যায় নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ, জ্বালাও-পোড়াওয়ের ভয়াবহ বিবরণ। গতবছর সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ গঠিত স্বাধীন আন্তর্জাতিক ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ‘গণহত্যার অভিপ্রায়’ থেকেই রাখাইনের অভিযানে রোহিঙ্গা মুসলমানদের নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণের মত ঘটনা ঘটিয়েছে।   

গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য মিয়ানমারের সেনাপ্রধান এবং জ্যেষ্ঠ পাঁচ জেনারেলকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) বা বিশেষ ট্রাইব্যুনাল করে বিচারের মুখোমুখি করার সুপারিশও করা হয় ওই প্রতিবেদনে।  জাতিসংঘের ওই প্রতিবেদন আসার পর ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং অস্ট্রেলিয়া সরকার পাঁচ বর্মি জেনারেলের সম্পদ জব্দের আদেশ দেয়।

বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমারের বেশিরভাগ মুসলিম রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব বা মৌলিক অধিকার প্রদান করতে অস্বীকার করে এবং তাদেরকে 'বাঙালি' হিসাবে উল্লেখ করে বলছে, রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ থেকে আসা অবৈধ অভিবাসী। মিয়ানমার সরকারের নির্যাতনে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসে শরণার্থীর মর্যাদায় আশ্রয় নিয়েছে।

সূত্র : সিএনএন, রয়টার্স

এসজেড