• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুলাই ১৮, ২০১৯, ০৫:৪৮ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুলাই ১৮, ২০১৯, ০৫:৫৮ পিএম

আন্তর্জাতিক আদালতের রায়

পাকিস্তানকে অবশ্যই কুলভূষণের মৃত্যুদণ্ড পুনর্বিবেচনা করতে হবে

পাকিস্তানকে অবশ্যই কুলভূষণের মৃত্যুদণ্ড পুনর্বিবেচনা করতে হবে

ভারতের প্রাক্তন নৌসেনা কর্মকর্তা কুলভূষণ যাদবকে দেয়া মৃত্যুদণ্ড অতি অবশ্যই পুনর্বিবেচনা করতে হবে পাকিস্তানকে, বুধবার (১৭ জুলাই) এক রায়ে এমনটাই জানিয়েছে হেগের আন্তর্জাতিক আদালত। পাশাপাশি কুলভূষণকে কনস্যুলার অ্যাক্সেস বা ভারতীয় দূতাবাসের কর্মকর্তাদের যোগাযোগের অনুমতিও দিয়েছে তারা। আন্তর্জাতিক এই রায়ে অকার্যকর রাষ্ট্র পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কূটনৈতিক জয় পেল ভারত।

আন্তর্জাতিক আদালত তার রায়ে বলে, কুলভূষণ যাদবের মৃত্যুদণ্ড “ততক্ষণ পর্যন্ত স্থগিত থাকবে, যতক্ষণ পর্যন্ত না, পাকিস্তান তাদের রায়, পুনর্বার খতিয়ে দেখা এবং পুনর্বিবেচনা করবে”। ভারতের অভিযোগের সঙ্গে একমত হয়ে আন্তর্জাতিক আদালত জানায়, সামরিক আদালতে সাজাপ্রাপ্ত কুলভূষণকে কনস্যুলার অ্যাক্সেস না দিয়ে ভিয়েনা চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করেছে পাকিস্তান। আন্তর্জাতিক আদালত বলে, “সাজার ওপরে স্থগিতাদেশ, সাজা এবং দণ্ডাদেশ পুনর্বিবেচনা করার অত্যাবশকীয় শর্ত”। কুলভূষণের মৃত্যুদণ্ড রদ করে পুনর্বিচার করার নির্দেশও দিয়েছে আদালত। রায় পুনর্বিবেচনা না করা পর্যন্ত কুলভূষণ যাদবকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া যাবে না। একইসঙ্গে নির্দেশ দেওয়া হয় সামরিক আদালতের বদলে ফৌজদারি আদালতে নতুন করে বিচার প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে কুলভূষণ যাদবের।  

বুধবার ভারতীয় সময় সন্ধা সাড়ে ছ’টার সময় নেদারল্যান্ডের হেগে ‘পিস প্যালেস’-এ কুলভূষণ মামলার রায় দেয়া হয়। রায় ঘোষণা করেন ১০ বিচারপতিকে নিয়ে গড়া আন্তর্জাতিক আদালতের প্রধান বিচারপতি আবদুল কাওয়াই আহমেদ ইউসুফ। রায়দানের সময় আদালত বলে, তার অধিকার সম্পর্কে কুলভূষণ যাদবকে জানায়নি পাকিস্তান। রাষ্ট্রসংঘের আদালত বলে, “কুলভূষণ সুধীর যাদবের সঙ্গে যোগাযোগ করা, আটক আবস্থায় তাঁর সঙ্গে দেখা করা এবং তার জন্য আইনি পদক্ষেপ করার অধিকার থেকে ভারতকে বঞ্চিত করেছে পাকিস্তান”।

বিচারপতি আবদুলকাবি আহমেদ ইউসুফের বলেন, স্পষ্টই ভিয়েনা চুক্তি লঙ্ঘন করেছে পাকিস্তান। গ্রেপ্তারের পর ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগের অধিকার পাওয়া উচিত ছিল কুলভূষণের। একইসঙ্গে ভারতকে অবহিত করা উচিত ছিল। কিন্তু সেটা তারা করেনি। তিন সপ্তাহ পরে জানানো হয় নয়াদিল্লিকে। কুলভূষণের সঙ্গে ভারতীয় দূতাবাসের কর্তাদের যোগাযোগের জন্য পাকিস্তানকে আবেদন করেছিল ভারত। কিন্তু ভিয়েনা চুক্তি ভেঙে তাতে সাড়া দেয়নি পাকিস্তান।      

মোট ১৬ জনের রায়ের মধ্যে ১৫ জনের রায়ই ভারতের পক্ষে যায়। মাত্র একজন বিচারপতি ছিলেন পাকিস্তানের। এমনকী, চীনের বিচারপতিও ভারতের পক্ষেই রায় দেন। এই রায়কে “পরিপূর্ণ জয়” বলে মন্তব্য করেছে ভারত। প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেন, “কুলভূষণকে কনস্যুলার অ্যাক্সেস দেয়ার জন্য পাকিস্তানকে নির্দেশ দিয়েছে আন্তর্জাতিক আদালত। কোনও সন্দেহ নেই, এটা ভারতের বিশাল জয়”।

কুলভূষণ যাদবকে নিয়ে পাকিস্তানের “বিচারের নামে প্রহসন”কে চ্যালেঞ্জ করে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করে ভারত। আন্তর্জাতিক আদালতে ভারতের তরফে, কুলভূষণের মৃত্যুদণ্ড স্থগিত এবং ভারতের যাতে তিনি হাইকমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন, সেই রায় দেওয়ার আর্জি জানানো হয়।

২০১৬-এর মার্চে ৪৯ বছর বয়সী কুলভূষণ যাদবকে গ্রেপ্তার করে পাকিস্তান। তার বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ আনা তারা, যদিও তা খারিজ করে দেয় ভারত। একবছর পর, কুলভূষণ যাদবকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা দেয় পাকিস্তানের সামরিক আদালত। প্রাক্তন নৌসেনা আধিকারিকের মৃত্যুদণ্ডের সাজা ঘোষণার একমাস পরে, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করে ভারত। ইসলামাবাদের বিরুদ্ধে মূলত ৪টি অভিযোগ দায়ের করে ভারত। ১. নৌ বাহিনী থেকে অবসরের পর ইরানে ব্যক্তিগত কাজে যান কুলভূষণ, সেখান থেকে তাকে অপহরণ করা হয়। ২.ভিয়েনা চুক্তি লঙ্ঘন করে কুলভূষণকে ভারতীয় দূতাবাসের কর্মীদের সঙ্গে দেখা করতে দেয়নি ইসলামাবাদ। ৩. ভিয়েনা চুক্তির ৩৬ নম্বর ধারা অনুযায়ী, কুলভূষণকে গ্রেফতারের পরই দেরি না করে ভারতীয় দূতাবাসকে জানানোর কথা, কিন্তু  তা করা হয়নি। ৪. বেসামরিক নাগরিকের শুনানি সেনা আদালতে করে নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক চুক্তি বা ICCPR লঙ্ঘন করেছে পাকিস্তান।

পাকিস্তান দাবি করে, ২০১৬-এর ৩ মার্চ বেলুচিস্তান থেকে তাদের নিরাপত্তাবাহিনী কুলভূষণ যাদবকে গ্রেফতার করে। ভারতের তরফে বলা হয়, ভারতীয় নৌবাহিনী থেকে অবসরের পর, ইরানে ব্যবসার কাজে গিয়েছিলেন কুলভূষণ যাদব, সেখান থেকে তাকে অপরহরণ করা হয়।

ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক আদালতের চারদিনের শুনানিতে, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কুলভূষণ যাদবকে হাইকমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না দেওয়ার অভিযোগ তোলে ভারত, যা ভিয়েনা কনভেনশনের পরিপন্থী। শুনানি শুরুর দিনই আন্তর্জাতিক আদালত জানিয়ে দেয় মামলার রায় না দেওয়া পর্যন্ত কুলভূষণকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া যাবে না। আদালতের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে ইসলামাবাদ। তবে, তা খারিজ হয়ে যায়।