• ঢাকা
  • শনিবার, ০৪ মে, ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: অক্টোবর ১১, ২০১৯, ০৩:৩৫ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : অক্টোবর ১১, ২০১৯, ০৩:৩৫ পিএম

ভারতে চাঞ্চল্যকর ৬ খুনের আসামি জলিকে দেখতে মানুষের ভিড়

ভারতে চাঞ্চল্যকর ৬ খুনের আসামি জলিকে দেখতে মানুষের ভিড়
জলি পোন্নামাট্টম- ছবি সংগৃহিত

অর্থ-সম্পত্তির লোভে স্বামীসহ পরিবারের ৬ জনকে খুন করার কথা স্বীকার করেছেন ভারতের জলি পোন্নামাট্টম নামক এক নারী। বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) তাকে দেখতেই কেরালার কোঝিকোড়ের আদালত চত্বরে ভিড় জমান সাধারণ মানুষ। বিগত ১৪ বছরে ৬ জনকে নির্মম্ভাবে খুনের ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত ৪৭ বছর বয়সী জলিকে ৬ দিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠানো হয়। এ সকল হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত বাকি দুই অভিযুক্তরা হলেন এমএস ম্যাথু এবং প্রাজি কুমার।

শুক্রবার (১১ অক্টোবর) ভারতীয় গণমধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে জানা যায়, আগামী বুধবার জলিকে ফের আদালতে হাজির করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। রাজ্য পুলিশের ডিজি লোককান্ত বেহরার বরাতে খবরে বলা হয়, দেশ এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সবচেয়ে দক্ষ বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে যোগাযোগ করে মাটির নীচ থেকে উদ্ধার করা এ মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের শিকার ব্যক্তিদের লাশ পরীক্ষা করবে কেরেলা পুলিশ।

সূত্রের তথ্য মতে, বাণিজ্যে স্নাতক ডিগ্রীধারী জলি একজন ধার্মিক এবং ভাল মানুষ হিসেবে পরিচিত। প্রতিবেশী এবং বন্ধুরা, পুলিশের মতে হতবাক, যে আদতে জলি একজন ঠাণ্ডা মাথার খুনি, যার হাত থেকে রক্ষা পায়নি একজন শিশুও।

তদন্তকারী কর্মকর্তা কেজি সাইমন জানান, অর্থ ও সম্পত্তির কারণে ৬ জনকেই সে বিষ খাইয়ে খুন করেছে বলে স্বীকার করেছে জলি। তিনি বলেন, আন্নাম্মা থমাস ছিলেন তার শাশুড়ি, তিনি পরিবারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হওয়ায় প্রথমেই তাকে খুন করা হয়। দ্বিতীয় ব্যক্তি, যাকে খুন করা হয়, তিনি হলেন, টম থমাস, জলির শ্বশুর। সম্পত্তির কারণে তাঁকে খুন করা হয়। তৃতীয়  ব্যক্তি ছিলেন তার স্বামী রায় থমাস। এরপর খুন করে ম্যাথু থমাসকে, ম্যাথু ছিলেন আন্নাম্মার ভাই। অর্থাৎ জলির মামা শ্বশুড়। রায় থমাসের মৃত্যুর পর, ময়নাতদন্তের ব্যবস্থা করতে উদ্যোগী হয়েছিলেন ম্যাথু থমাস।

পঞ্চম খুনের শিকার, একবছরের শিশু আলফাইন শাজু, তার বর্তমান স্বামীর আগের পক্ষের মেয়ে। পুলিশ জানিয়েছে, তাদের বলা হয়েছিল, খাবার খাওয়ার সময় বিষম খেয়ে মৃত্যু হয়েছিল শিশুটির। কেজি সাইমন বলেন, “তবে সেটা আসল কারণ নয়। এই মামলায় আলামত ভালভাবে বিশ্লেষণ করে, চিকিৎসক, গবেষকদের সঙ্গে পরামর্শ করে এবং আমরা জানতে পারি সমস্ত মামলাগুলিতেই সায়নাইড ব্যবহারের লক্ষণ রয়েছে।

ষষ্ঠ খুনের শিকার ফিলি, তিনি ছিলেন জলির বর্তমান স্বামীর প্রথমপক্ষের স্ত্রী ও আলফাইন শাজুর মা  জানা গিয়েছে, পুলিশকে  জলি জানায়, সে ফিলিকে জল দিয়েছিল এবং জলপানের পরেই তাঁর মৃত্যু হয়। তবে সেটায় বিষ মেশানোর অভিযোগ রয়েছে। শাজু সম্পর্কে জলির প্রথম স্বামীর চাচাতো ভাই এবং জলির দ্বিতীয় স্বামী।

প্রসঙ্গত, ২০০২ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে এ হত্যাকাণ্ডগুলি সংগঠিত হয়। এরপর শাজুর সঙ্গে দ্বিতীয় বার বিয়ে হয় জলির। শ্বশুরের শেষ উইল অনুযায়ী সমস্ত সম্পত্তির উপর নিজের মালিকানা দাবি করেন জলি। কিন্তু এই নিয়ে প্রবাসে বসবাসকারী দেবর মোজো টমাসের সঙ্গে ঝামেলা চরমে পৌঁছায়। এমন পরিস্থিতিতে মোজো পরিবারের ঘটে যাওয়া একাধিক রহস্যজনক মৃত্যুর নতুন করে তদন্ত করার অনুরোধ নিয়ে পুলিশের অপরাধ দমন শাখায় আবেদন করেন। এরপরই সমস্ত ঘটনা সামনে আসে।

আবারও মৃতদেহগুলোর ফরেন্সিক পরীক্ষা হয়। তাতে দেখা যায়, মৃত্যুর আগে প্রত্যেকেই কিছু না কিছু খেয়েছিলেন। প্রত্যেকের শরীরে সায়ানাইডের অস্তিত্ব মেলে। সায়ানাইড খাইয়ে দেহে ধীর বিষক্রিয়া সৃষ্টির মাধ্যমে তাদের খুন করা হয় বলে প্রাথমিকা ভাবে সন্দেহ করে পুলিশের গোয়েন্দ বিভাগ।

প্রতিটি খুনের সময় জলি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। প্রত্যেকবারই দফায় দফায় জলি ও শাজুকে জেরা করা হলেও কখনোও অভিযোগ প্রমাণ হয়নি। তবে এবার ধরা পড়লেন সাজু ও জলি। তাদের বয়ানে বিস্তর অসঙ্গতি ধরা পড়ে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এমনকি ঘটনার সময় জলি ও শাজু ফোনে একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিলেন বলেও তদন্তে জানা যায়। এর পরই জলিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। আটক করা হয় শাজুকেও।

পরে জলিকে সায়ানাইড পৌঁছে দেওয়ার অভিযোগে এমএস ম্যাথু এবং প্রাজিকুমার নামে আরও দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে জলি ও সাজুকে সায়ানাইড সরবরাহের অভিযোগ রয়েছে।