• ঢাকা
  • রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
প্রকাশিত: নভেম্বর ৩, ২০১৯, ০২:০২ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : নভেম্বর ৩, ২০১৯, ০২:০২ পিএম

আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা

কলকাতার রবীন্দ্র সরোবরে ছট পুণ্যার্থীদের তাণ্ডব

কলকাতার রবীন্দ্র সরোবরে ছট পুণ্যার্থীদের তাণ্ডব
ভোট ব্যাংকের কথা ভেবে ঠুঁটো জগন্নাথ প্রশাসন

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে কলকাতার দক্ষিণ প্রান্তে রবীন্দ্র সরোবরকে বিশেষ জলাভূমির তকমা দিয়ে সুপ্রিম কোর্টের পরিবেশ বেঞ্চ বা গ্রিন বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছিল, সেখানে কোনো রকম ধর্মীয় উপাচার পালন করা যাবে না। রবীন্দ্র সরোবরের পরিবেশ দূষিত হয়, এমন কোনো কাজই করা যাবে না। কিন্তু শনিবার (২ নভেম্বর) ছট পূজা উপলক্ষে সেই নিষেধাজ্ঞা উড়িয়ে রীতিমতো তাণ্ডব চালিয়েছেন পুণ্যার্থীরা। 

আদালতের নির্দেশ মেনে ছট পূজার তিন–চার দিন আগে থেকেই কলকাতা পুলিশের তরফে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে রবীন্দ্র সরোবরের গেটে তালা দিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু ছট পূজার দিন সকালেই পুণ্যার্থীরা দল বেঁধে এসে সেই তালা ভেঙে সরোবরের ভেতরে ঢুকে পড়েন, পুজোর আচার পালন করেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকলেও চোখ-কান বন্ধ করে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে। ফলে প্রশ্ন উঠেছে পুলিশের ভূমিকা নিয়েই। 

প্রশাসনের তরফে এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করা হয়নি। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, রাজ্যে বিহারি সম্প্রদায়ের বিশাল ভোট ব্যাংকের কথা ভেবেই ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে থাকার পন্থা নিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। ভোট ব্যাংকের কথা ভেবে ঘুরপথে পরিবেশ আদালতের রায় অগ্রাহ্য করার এই চেষ্টা বলে ধারণা বিরোধী রাজনৈতিক মহলেও।

রবীন্দ্র সরোবরের পরিবেশ রক্ষা এবং সেখানে আসা-যাওয়ার ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করা হবে বলে গত ২৬ সেপ্টেম্বর জাতীয় পরিবেশ আদালতে রীতিমতো হলফনামা দিয়ে জানিয়েছিল কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি। হলফনামায় যা বলা হয়েছিল, তা নিজেই লঙ্ঘন করল রাজ্য সরকার। হলফনামায় বলা হয়- রবীন্দ্র সরোবারে ছট পূজা ঠেকাতে বিকল্প জলাশয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পুণ্যার্থীরাও নাকি আদালতের রায় মানার বাপারে সম্মতি জানিয়েছেন। কিন্তু পুণ্যার্থীরা গতকাল দাবি করেন, সরকার যে বিকল্প ব্যবস্থা করেছে তা পর্যাপ্ত নয়।

রবীন্দ্র সরোবারে এবার যেন কোনো মতেই ছট পূজা করা না হয়, সেজন্য রাজ্য সরকারকে বিশেষ ব্যবস্থা নিতে বলেছিল পরিবেশ আদালত। বলা হয়েছিল, আইনই শেষ কথা এবং আইনের শাসন যেন রক্ষা হয় তা দেখতে হবে সরকারকেই। কিন্তু সরকারের তরফে বিন্দুমাত্র উদ্যোগ নেয়া হল না এ ব্যাপারে। নিয়ম না মেনে ছট পূজার দিন কেউ ঘাটে চলে গেলে তিনি পুলিশ দিয়ে লাঠি-গুলি চালাতে পারবেন না বলে জানিয়েছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছট পূজার প্রথম দিনই মুখ্যমন্ত্রীর সেই কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে তার প্রতি প্রশ্নহীন আনুগত্যের প্রমাণ দিয়েছে কলকাতার পুলিশ।

নিয়ম ভাঙার যৌক্তিকতার সমর্থনে কার্যত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুরেই সুর মিলিয়েছে বিজেপিও। বিজেপির পশ্চিমবঙ্গ শাখার সভাপতি দিলীপ ঘোষ মন্তব্য করেছেন, পুলিশ দিয়ে মানুষকে আটকানো যায় না। পরিবেশ সচেতনতা তৈরি করতে হয়। এবার ছট পূজায় শুধু রবীন্দ্র সরোবরই নয়, কোনো জলাশয়কেই দূষিত করা যাবে না বলে পরিবেশ আদালত নির্দেশ দিয়েছিল। শাসক দল তৃণমূল রবীন্দ্র সরোবরে তালা ভেঙে তাণ্ডবের ঘটনায় কোনো প্রতিক্রিয়া তো দেয়ইনি, পাশাপাশি বিজেপি রাজ্য সভাপতির এহেন মন্তব্যও স্পষ্ট করে দিয়েছে, বিহারি ভোট ব্যাংকে নজর রয়েছে তাদেরও। ফলে পরিবেশ আদালতের রায় লঙ্ঘনের সমালোচনা বা নিন্দা না করে, পরিবেশ সচেনতার মতো দার্শনিক মন্তব্য করেই দায় সেরেছে।

সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, আদালতের রায়, রাজ্য সরকারের হলফনামা সত্ত্বেও গতকাল ঘটনার সময় রবীন্দ্র সরোবরের ধারেকাছে দেখা যায়নি কোনও পুলিশকর্মীকে। সকালে এক প্রস্থ তালা ভেঙে তাণ্ডবের পর বিকালের দিকেও আরেকটি দল রবীন্দ্র সরোবরের আরেকটি গেটের তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। দিনভর এই তাণ্ডবের পর রাতে ১৪ জনকে গ্রেফতার করে কলকাতার পুলিশ। কিন্তু দিনভর এই বিশৃঙ্খলা আটকানোর কোনো চেষ্টাই কেন করা হল না, সেই প্রশ্ন কিন্তু থেকেই গেল।

শনিবার দিনভর তালা ভেঙে আর যেসব জলাশয়ে ছট পূজার আচার পালন করা হয়েছে, এর মধ্যে রয়েছে- লেক গার্ডেন্সের জলাশয়, টালিগঞ্জ মাদার ডেয়ারির সামনের জলাশয়, কেআইটি স্টেডিয়াম, মেনকা সিনেমার কাছে জলাশয়, গোবিন্দপুর, বুদ্ধ মন্দিরের জলাশয় এবং গোলপার্কের জলাশয়।

এফসি

আরও পড়ুন