• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ০২ মে, ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১, ২০১৯, ০২:০৪ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : ডিসেম্বর ১, ২০১৯, ০২:০৪ পিএম

দুর্নীতি কমছে পশ্চিমবঙ্গে, সমীক্ষায় উঠে এলো চাঞ্চল্যকর তথ্য 

দুর্নীতি কমছে পশ্চিমবঙ্গে, সমীক্ষায় উঠে এলো চাঞ্চল্যকর তথ্য 
পশ্চিমবঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি

দুর্নীতি কমছে ভারতবর্ষে। প্রায় ২০টি রাজ্যে দুর্নীতির প্রবণতা কমেছে প্রায় ১০ শতাংশ। তার মধ্যে অন্যতম পশ্চিমবঙ্গ। দিল্লির সরকারি এই জরিপের বক্তব্য পশ্চিমবঙ্গের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের কাছে কলার তুলে বলার মতো ঘটনা হলেও, বিস্মিত করেছে পশ্চিমবঙ্গের বেশির ভাগ মানুষকে। এমনকি তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়াগুলোতেও।

যে সরকারের এক ডজনেরও বেশি শীর্ষ নেতা এবং মন্ত্রী একাধিক কেলেঙ্কারিতে যুক্ত, এমনকি তাদের কয়েকজনকে রীতিমতো কারাবাসও করতে হয়েছে, সেই রাজ্যে দুর্নীতি কমছে, এই তথ্য সোজা কথায় হজম করতে পারছে না এই রাজ্যের বেশির ভাগ মানুষ। সারদা চিট ফান্ড কেলেঙ্কারি,রোজভ্যালি চিটফান্ড কেলেঙ্কারির তদন্ত দেশের শীর্ষ আদালতের নির্দেশে করছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। তদন্তের নির্দেশ দেয়ার সময় সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছিল, এই কেলেঙ্কারিগুলোয় ভুয়ো বাণিজ্যিক সংস্থাগুলো যুক্ত আছে ঠিকই। তবে এটাও দেখতে হবে এই কেলেঙ্কারিগুলো (যাতে তিন-চারটি রাজ্যের কয়েক কোটি মানুষ প্রতারিত হয়েছন, সবর্স্বান্ত হয়েছেন এমনকী আত্মহত্যা পর্যন্ত করতে বাধ্য হয়েছেন) থেকে বৃহত্তর সুবিধাভোগী কারা। অর্থাৎ এই ধরনের ভুয়ো সংস্থাগুলোকে বেলাগাম প্রতারণা করার যুযোগ করে দিয়ে কোন কোন প্রভাবশালী রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ব্যক্তি আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন। স্পষ্ট ইঙ্গিত ছিল পশ্চিমবঙ্গের শাসক দলের প্রভাবশালী রাঘববোয়ালদের দিকে। এর পরের পর্যায় রয়েছে নারদা কেলেঙ্কারি। একটি বেসরকারি সংস্থা নারদা ডট কম-এর স্টিং অপারেশনে পশ্চিমবঙ্গের একাধিক নেতা, মন্ত্রী এবং শীর্ষ পুলিশ অফিসারকে প্রকাশ্যে ঘুষ নিতে দেখা গিয়েছে। কেন্দ্রীয় পর্যায়ে তদন্ত চলছে সেই মামলারও। আর সেই রাজ্যেই কিনা দুর্নীতি কমেছে!

বছরের প্রায় শেষ লগ্নে ২০১৯ সালের দুর্নীতি জরিপ রিপোর্ট বলছে—২০১৮ সালে যেখানে ঘুষ নেওয়ার প্রবণতা ৫৮ শতাংশ ছিল, সেটা ২০১৯ সালে এক ধাক্কায় ৪৫ শতাংশ হয়ে গিয়েছে। জরিপে যে ২০টি রাজ্যের নাম করা হয়েছে তার মধ্যে ওপরের দিকেই আছে পশ্চিমবঙ্গ। এই রাজ্যে সার্বিকভাবে দুর্নীতি কমেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। জমি, সম্পত্তি, পুলিশ, প্রশাসন,পুরসভা, রাজ্য দফতর, পরিবহণ--- সব কিছুতেই কমেছে দুর্নীতির হার। এই তালিকায় পশিচমবঙ্গ ছাড়াও রয়েছে দিল্লি, হরিয়ানা, গুজরাত, কেরল, গোয়া এবং ওড়িশার নাম।
ভারতের ২০টি রাজ্যে দুর্নীতি কমলেও বিজেপি-শাসিত উত্তর প্রদেশ, কংগ্রেস-শাসিত রাজস্থান সহ বেশ কয়েকটি রাজ্যে আবার বেড়েছে দুর্নীতি। সেই তালিকায় এই দুটি রাজ্য ছাড়াও রয়েছে বিহার, তেলেঙ্গানা, কর্ণাটক, তামিলনাড়ু, ঝাড়খণ্ড ও পাঞ্জাব। এই রাজ্যগুলিতে সরকারি দফতরে ঘুষ নেওয়ার প্রবণতা বেশি। কারণ এই রাজ্যগুলির বাসিন্দারা মনে করেন, ধীর গতিতে চলা কাজ তরাণ্বিত করতেই তারা কর্মকর্তাদের ঘুষ দিয়ে থাকেন।

২৪৮টি জেলার ১ লাখ ৯০ হাজার বাসিন্দার ওপর চালানো হয়েছিল জরিপটি। তাতে দেখা গিয়েছে, যেসব সরকারি দফতরে কম্পিউটার পরিসেবা এবং সিসিটিভি নেই, সেখানেই দুর্নীতি বেশি হয়েছে। সিসিটিভি এবং কম্পিউটার ব্যবহার যে সব দফতরে রয়েছে, সেখানে আগের বছরের তুলনায় দুর্নীতি অনেকটাই কমানো সম্ভব হয়েছে। জরিপে বলা হয়েছে, নানা উপায় সরকারি দফতরে ঘুষ দেওয়া হয়। কখনও নগদ টাকা (৩৫ শতাংশ ক্ষেত্রে), কখনও দালালের মাধ্যমে টাকা দেয়া (৩০ শতাংশ ক্ষেত্রে) এবং কখনও উপহার হিসাবে (৬ শতাংশ ক্ষেত্রে) ঘুষ দেয়ার রেওয়াজ রয়েছে।

বিএস