• ঢাকা
  • বুধবার, ০১ মে, ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১১, ২০১৯, ০৪:১৫ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : ডিসেম্বর ১১, ২০১৯, ০৪:৩৮ পিএম

হেগের আদালতে সু চি

সশস্ত্র গোষ্ঠীর আধিপত্যের কারণেই রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে

সশস্ত্র গোষ্ঠীর আধিপত্যের কারণেই রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে
দ্য হেগের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে বক্তব্য রাখেন অং সাং সু চি - ছবি : বিবিসি বাংলা

‘‘আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ মামলার রায় আসতে আসতে কয়েক বছর লেগে যেতে পারে’

.........‘’.........

গণহত্যার অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি হয়েছেন মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চি।

বুধবার (১১ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ সময় দুপুর ৩টায় মিয়ানমারের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরতে নেদারল্যান্ডসের হেগে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) উপস্থিত হন তিনি।

এ সময় মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অভিযান সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে বলে দাবি করেন সু চি।

রাখাইন গণহত্যার বিষয়টি আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে পর্যন্ত আনার সমালোচনা করে তিনি বলেন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর গণহত্যার অভিযোগে মামলাটি অসম্পূর্ণ ও বিভ্রান্তিকর।

কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে সু চি বলেন, জাতিগত সংঘাতে নয়, সশস্ত্র গোষ্ঠীর আধিপত্যের কারণে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আসতে বাধ্য হয়েছে।

তিনি বলেন, আরাকান আর্মির সংঘর্ষের কারণে রাখাইনে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব শুরু হয়। ২০১৬ সালে ক্রমাগত আক্রমণ চালায় আরসা। ২০১৭ সালের আগস্টে আরসা একটি সামরিক চৌকি ধ্বংস করে ও ৩০ জন পুলিশকে হত্যা করে। এভাবে তারা ১২টি হত্যাযজ্ঞ চালায়। এরপর মিয়ানমার সেনাবাহিনী সশস্ত্র হামলা চালায়।

সু চি অভিযোগ করে বলেন, মিয়ানমারের ক্লিয়ারেন্স অপারেশনকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করেছে গাম্বিয়া।

সু চি বলেন, সেনাবাহিনী কোনও জেনোসাইড করলে সংবিধান অনুযায়ী মিয়ানমারের স্বাধীন তদন্ত ব্যবস্থা কোর্ট মার্শাল করে। তারই ধারবাহিকতায় ২৯ জন সেনা সদস্যসহ এক হাজার ৩২ জনকে জিজ্ঞাসাবদ করা হয়। আরও গভীর অনুসন্ধানের অনুরোধ করছি গাম্বিয়াকে। মানবাধিকার লঙ্ঘন হলে মিয়ানমার সরকার মেনে নেবে না। আন্তর্জাতিক আইনের চেয়ে অভ্যন্তরীণ বিচার ব্যবস্থা অনেক দ্রুত।

সু চি বলেন, যদি দেশের অভ্যন্তরে গণহত্যার উদ্দেশে এ ধরনের কোনও ঘটনা ঘটে তবে যথাযথ তদন্ত সাপেক্ষে জড়িত সেনা সদস্য, কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

তিনি বলেন, এর বাইরে আমি এ বিষয়েও নিশ্চিত করছি, আমাদের সবার নজর সেনা সদস্যদের দিকে। একইসঙ্গে অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধেও উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সু চি বলেন, রাখাইনে প্রদেশে আরসার বিচ্ছিন্নতাবাদী কর্মকাণ্ড থামাতেই মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সাথে যুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এর কারণে মুসলিম রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয় বলেও জানান সু চি।

রো হি ঙ্গা  ই স্যু 

.......

তার দাবি, গাম্বিয়া শুধুই খণ্ডচিত্র তুলে ধরেছে বিশ্ববাসীর সামনে। ২০১৬ সাল ও ২০১৭ সালের বেশ কিছু গ্রামে আরসার হামলার কারণে বেশ ক্ষয়-ক্ষতির উদাহরণ টেনে সু চি বলেন, মিয়ানমার সেনাবাহিনী সেটিই থামাতে চেষ্টা করেছে। আর তখনই যুদ্ধাবস্থা তৈরি হয়।

সু চি বলেন, মিয়ানমারের সকল নাগরিকের অধিকার রক্ষায় কাজ করছে তার সরকার। বিশেষ করে রাখাইন ও অন্যান্য প্রদেশে জন্ম নেয়া প্রতিটি শিশুও জন্ম সনদ পায়। তাই বিশ্ববাসী ও আদালতকে তিনি অনুরোধ করেন, অভ্যন্তরীণ বিচার ব্যবস্থার ওপর আস্থা রাখতে।

মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) শুনানির প্রথম দিনে নিজেদের যুক্তি উপস্থাপন করে রোহিঙ্গা গণহত্যা বন্ধের দাবি জানান গাম্বিয়ার আইনমন্ত্রী। এ সময় রোহিঙ্গা গণহত্যাকে বৈশ্বিক ইস্যু হিসেবে উল্লেখ করে বিশ্ব কেন এ ধরনের বর্বরতা ঘটে যাওয়ার অনুমোদন দিচ্ছে সে প্রশ্ন তোলে দেশটি।

এদিন মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে শুনানিতে রোহিঙ্গাদের ওপর সে দেশের সামরিক বাহিনীর একের পর এক নৃশংসতার ঘটনা তুলে ধরা হয়। তখন সেখানে পাথরের মতো মুখ করে বসেছিলেন নোবেল অং সান সু চি।

আদালতে মিয়ানমারের পক্ষে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিজ দেশে সু চির অবস্থান আরও দৃঢ় করেছে বলে মত বিশ্লেকদের। আগামী বছর দেশটিতে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

সু চির চিন্তাভাবনার সঙ্গে পরিচিতরা বলছেন, মিয়ানমারের স্থানীয় পর্যায়ের পরিস্থিতির কারণেই সু চি শুনানিতে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এর মধ্যে অন্যতম হলো তার ব্যক্তিগত ও দলের সমর্থন জোরদার করা এবং সেনাবাহিনীকে হাতে রাখা। মিয়ানমারে গণতান্ত্রিক সরকার থাকলেও সেনাবাহিনীই ক্ষমতা অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করে।

আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ মামলার রায় আসতে আসতে কয়েক বছর লেগে যেতে পারে।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনের কয়েকটি তল্লাশি চৌকিতে বিদ্রোহীদের হামলার পর রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত নিধন অভিযান শুরু করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। ব্যাপক হত্যাকাণ্ড, ধর্ষণ ও নির্যাতনের মুখে ৭ লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। ওই ঘটনার দুই বছরের বেশি সময় পর গত ১১ নভেম্বর অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কোঅপারেশনের (ওআইসি) সমর্থনে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ দায়ের করে গাম্বিয়া।

এসএমএম

আরও পড়ুন