• ঢাকা
  • শনিবার, ০৪ মে, ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২০, ২০১৯, ০২:৩৭ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : ডিসেম্বর ২০, ২০১৯, ০২:৪৪ পিএম

গুলিতে নিহত ৩, গ্রেফতার তিন সহস্রাধিক  

নাগরিকত্ব আইন বিরোধী বিক্ষোভে ফুঁসছে ভারত

নাগরিকত্ব আইন বিরোধী বিক্ষোভে ফুঁসছে ভারত

বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের প্রতিবাদে ফুঁসছে ভারত। জনতার বিক্ষোভ কিছুতেই থামাতে পারছে না দেশটির সরকার। এই পরিস্থিতির মাঝেই বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) মেঙ্গালুরু ও লক্ষ্ণৌতে পুলিশের গুলিতে ৩ বিক্ষোভকারী নিহতের ঘটনায় তাঁতিয়ে উঠেছে চলমান পরিস্থিতি।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানায়, বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে চলমান বিক্ষোভে পুলিশের গুলিতে ৩ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া নিষিদ্ধ ঘোষিত হওয়ার পরও নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করায় হাজার হাজার বিক্ষোভকারীকে আটক করেছে পুলিশ।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া জানায়, বৃহস্পতিবার কর্ণাটকের মেঙ্গালুরুতে বিক্ষোভ চলছিল। সেখানে গুলি চালায় পুলিশ। এতে অন্তত ২ জন নিহত হন। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও অনেকে। এই অবস্থায় জেলার পাঁচটি থানায় শুক্রবার মধ্যরাত পর্যন্ত কারফিউ জারি করা হয়েছে।

অন্যদিকে লক্ষ্ণৌতে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন আরও একজন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার রাজ্যটিতে বিক্ষোভকারী ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। এতে ১২ জনেরও বেশি পুলিশ সদস্য আহত হয় এবং আটক করা হয় ১১২ জন বিক্ষোভকারীকে।

চলমান পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ ১০ তথ্য—

...  সংশোধিত নাগরিকত্ব বিলের প্রতিবাদে দেশের ১৩টি রাজ্যে অষ্টম দিনের মত বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। ধারনা করা হচ্ছে ২০১৪ সাল থেকে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতাসীন থাকা বিজিপি সরকারের জন্য এখন পর্যন্ত এটিই থেকে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। ২০১৪-এর আগে পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে ভারতে আসা অমুসলিম মানুষদের নাগরিকত্ব দেওয়ার পথ সহজ করা হয়েছে নতুন আইনে। সমালোচকদের দাবি, নাগরিকত্বের ক্ষেত্রে জাতপাতকে বিবেচনায় আনা ভারতের ধর্মনিরেপেক্ষ সংবিধানের ভিত্তিকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দেবে।  আনন্দবাজার

...   বৃহস্পতিবার মেঙ্গালুরু ও লক্ষ্ণৌতে পুলিশের গুলিতে ৩ বিক্ষোভকারী নিহত। স্থানীয় পুলিশ সূত্রে এর সত্যতা নিশ্চিত করা হয়েছে। শনিবার পর্যন্ত সেখানে কারফিউ ঘোষণা করা হয়েছে এবং পরবর্তী ৪৮ ঘন্টার জন্য মোবাইল ইন্টারনেট স্থগিত করার আদেশ দেওয়া হয়। 

এদিকে দিল্লিতে প্রতিবাদ প্রদর্শনকালে গ্রেফতার করা হয় দেশটির বরেণ্য ইতিহাসবিদ রামচন্দ্র গুহকে।দিনের বেলায় বিক্ষোভকারী ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষের সময় প্রকাশ্যে গুলি চালায় পুলিশ। এছাড়া দিল্লিতে, মাণ্ডি হাউজ এবং লালকেল্লার দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে বহু বিক্ষোভকারীকে আটক করে পুলিশ। আটকদের তালিকায় রয়েছেন বিরোধী নেতা ডি রাজা, সীতারাম ইয়েচুরি, নীলোৎপল বসু, বৃন্দা কারাত, অজয় মাকেন, সন্দীপ দীক্ষিত এবং শিক্ষাবিদ ও রাজনতিক যোগেন্দ্র যাদব ও উমর খালিদ।  এনডিটিভি

...   দিল্লির বিভিন্ন এলাকায় ভয়েস, ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, মাণ্ডি হাউজ, সিলমপুর, জাফরবাদ, মুস্তাফাবাদ, জামিয়ানগর, শহিন বাগ এবং বাওয়ানা ও আইটিও এলাকাতেও পরিষেবা ব্যহত হয়।
 
...   প্রতিবেশী রাজ্য হরিয়ানা থেকে দিল্লিতে ঢোকার চেষ্টা করে বিক্ষোভকারীরা, ফলে বন্ধ করে দেওয়া হয় সীমানা, ফলে ব্যাপক যানজট তৈরি হয়। আটকে পড়েন বিমানবন্দরগামী যাত্রীরা, এবং ১৫টিরও বেশী উড়ান দেরীতে চলে। ৮ ঘন্টা পর ব্যারিকেড তোলা হয়।
 
এদিন সকালে উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন জায়গায় বড় জমায়েত নিষিদ্ধ করা হয়, তবে সেখানেও বিক্ষোভ হিংসাত্মক আকার নেয়। বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ করে পুলিশ, প্রায় ১০টি গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। বারাণসীতেও ব্যাপক বিক্ষোভ হয়।
 
...   সাম্প্রতিক পরিস্থিতি প্রসঙ্গে ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় বলেছেন, "অন্যের কন্ঠস্বর না শুনলে গণতন্ত্র হেরে যাবে"।
 
...   মুম্বইয়ের বিক্ষোভে অংশ গ্রহণ করেন প্রায় ১৫,০০০ জন। চেন্নাইয়েও বিক্ষোভ হয়, বিক্ষোভের অনুমতি দেয়নি পুলিশ। “গণতন্ত্রের কণ্ঠরোধ না করার জন্য” পুলিশকে অনুরোধ করেন অভিনেতা রাজনীতিবিদ কমল হাসান।
 
...   কলকাতায়, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন এবং জাতীয় নাগরিকপঞ্জী নিয়ে রাষ্ট্রসংঘের নজরদারিতে গণভোটের দাবি তুলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রধানমন্ত্রী মোদি এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের উদ্দ্যেশে০ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “একটা ভোট করা হোক। কারণ আপনাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে, আপনারা যা কিছু করতে পারেন না। আপনারা সব কিছুতে ভয় দেখাচ্ছেন, সমাজের স্তম্ভকে”।
 
...   কংগ্রেসের দাবি, প্রত্যেক ভারতীয়ের অধিকার প্রতিবাদ করা, ফলে তাদের ওপর পুলিশের ওপর পদক্ষেপ নিয়ে বিজেপির লজ্জা হওয়া উচিত। রাহুল গান্ধি ট্যুইট করেন, “কলেজ, টেলিফোন এবং ইন্টারনেট বন্ধ করার কোনও অধিকার নেই সরকারের, শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ বন্ধ করতে এবং ভারতের কণ্ঠরোধ করতে ১৪৪ ধারা জারি করার কোনও অধিকার নেই সরকারের। এটি ভারতের আত্মার অপমান”।

...   সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করার ব্যাপারে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। বহু গাড়ি, বাসে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। তাদের অনেকেই প্রবীণ চককে টার্গেট করে। সম্ভলে বাসে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।

...  নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে চলমান প্রতিবাদকে সমর্থন জানিয়ে রাস্তায় নামতে শুরু করেছে দেশটির বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন। সে সঙ্গে সরব হতে শুরু করেছেন বলিউডের বিশিষ্ট তারকাবৃন্দ।

এসকে