• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: এপ্রিল ৪, ২০২০, ০৬:০০ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : এপ্রিল ৪, ২০২০, ০৬:০২ পিএম

যে শহরে রাস্তার মোড়ে মোড়ে পড়ে আছে মরদেহ

যে শহরে রাস্তার মোড়ে মোড়ে পড়ে আছে মরদেহ
ইকুয়েডরের গোয়াইয়াকিল শহরে কোভিড-১৯ এর কারণে ভয়াবহ জনস্বাস্থ্যের সঙ্কটের সৃষ্টি হয়েছে ● বিবিসি

ইকুয়েডরের সবচেয়ে জনবহুল শহর গুয়াইয়াকিলে করোনাভাইরাস মহামারির কারণে মানুষজন শুধু জনাকীর্ণ হাসপাতাল মারা যাচ্ছে তা নয়, এখানে মানুষকে রাস্তায় মরে পড়ে থাকতে দেখা গেছে।

কোভিড-১৯ এর কারণে বাড়িতে যাদের মৃত্যু হয়েছে তাদের মরদেহগুলো সরিয়ে নিতেও কয়েকদিন সময় লেগে যাচ্ছে। কারণ মরদেহ সরিয়ে নেয়ার তালিকা আর এর জন্য অপেক্ষা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে।

গুয়াইয়াস প্রদেশে করোনাভাইরাসের কারণে ১ এপ্রিল পর্যন্ত ৬০ জনের মৃত্যু হয়েছে। পুরো ল্যাটিন অ্যামেরিকার সবগুলো দেশ মিলিয়ওে এই পরিমাণ মানুষ মারা যায়নি করোনাভাইরাসে। ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ৯৩৭ জনের মধ্যে।

প্রদেশটির রাজধানী গুয়াইয়াকিলেই মোট আক্রান্তের ৭০ শতাংশ রোগীর বসবাস।

এটি বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় শহরগুলোর মধ্যে একটি যেখানে মাথাপিছু করোনাভাইরাস আক্রান্তের হার সবচেয়ে বেশি।

তারওপর, ভাইরাস পরীক্ষার আগেই যারা মারা গেছেন তাদের এই পরিসংখ্যানের বাইরে রাখা হয়েছে।

দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোর মধ্যে ইকুয়েডরে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা তৃতীয় সর্বোচ্চ- এর আগে রয়েছে ব্রাজিল এবং চিলি- তবে জনসংখ্যার অনুপাতে ইকুয়েডরে মৃত্যুর হার অন্যান্য দেশের চাইতে বেশি।

গুয়াইয়াকিলের শেষকৃত্য আয়োজকরাও এই পরিস্থিতি সামলে উঠতে পারছে না।

সঙ্কটের মাত্রা এমন যে প্রেসিডেন্ট লেনিন মোরেনো মৃতদেহ সরিয়ে নিতে এবং সমাহিত করতে বিশেষ টাস্কফোর্স তৈরি করেছেন।

আমার মামা সেগুন্দো ২৮  মার্চ মারা গেছেন এবং কেউই আমাদের সাহায্য করতে আসেনি- বলে জানালেন জেসিকা কাস্তেদা।

তিনি রাজধানী থেকে প্রায় ৬০০ কিলোমিটার দক্ষিণে ২৫ লাখ জন বসতির কুইটো শহরে বাস করেন।

হাসপাতালে বিছানা পাওয়া যায়নি এবং তিনি বাড়িতেই মারা যান। আমরা জরুরি সেবা সংস্থাগুলোয় খবর দিয়েছিলাম। কিন্তু তারা আমাদের বলেছে ধৈর্য্য ধরতে। তার মরদেহ এখনও বিছানায় পড়ে আছে, আমরা ছুঁয়েও দেখতে পারিনি।

কফিনের বাইরে দাড়িয়ে এক নারী।
মার্চের শেষ সপ্তাহে, বিভিন্ন বাড়িতে মারা যাওয়া ৩০০ জনেরও বেশি মৃতদেহ পুলিশ সংগ্রহ করেছে

জরুরি সেবা সংস্থাগুলোয় মানুষের অতিরিক্ত ফোনের কারণে যে কেবল কোভিড-১৯ রোগীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে তা নয়, এতে অন্য রোগে আক্রান্ত মানুষকেও ভুগতে হচ্ছে।

আমার প্রতিবেশী পড়ে গিয়ে তার মাথায় আঘাত পেয়েছিলেন, এবং আমি (জরুরি নম্বর) ৯১১ এ ফোন করেছিলাম, কিন্তু তারা আসেনি বলে জানান শহরের বাসিন্দা ওয়েন্ডি নোবোয়া।

তার ৯৬ বছর বয়সী প্রতিবেশী গোর্কি পাজমিনো ২৯ মার্চ দুর্ঘটনার কারণে মারা যান। তার মরদেহটি পুরোদিন মেঝেতে পড়ে ছিল। পরিবার এসে না তোলা পর্যন্ত তিনি ওভাবেই পরে ছিলেন। তবে তারা তাকে কবর দিতে পারেনি। কারণ তার মৃত্যুর সনদ সই করার মতো কোনও ডাক্তার উপস্থিত ছিলেন না।

যারা রাস্তায় পড়ে মারা যাচ্ছেন তাদের মৃত্যুর খবর রিপোর্ট করতে এবং মানুষকে সেটা জানাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করছেন স্থানীয়রা।

গত কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া কিছু ভিডিওতে দেখা গেছে, একজন ব্যক্তি একটি হাসপাতালের বাইরে পড়ে আছেন এবং একটি বাড়ি থেকে মরদেহ নিয়ে যাওয়ার জন্য টায়ার জ্বালিয়ে প্রতিবাদ করা হচ্ছে (যদিও বিবিসি স্বাধীনভাবে ফুটেজের সত্যতা নিশ্চিত করতে পারেনি)। 

একটি বন্ধ স্টোরের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা দু‍‍`জন নারী এবং তাদের পেছনে ফুটপাতে পড়ে থাকা একটি মরদেহ।
শহরের গৃহহীন মানুষ রাস্তায় পড়ে মারা যাচ্ছে

আমার বন্ধু বাজার করতে গিয়ে মোড়ের পাশে একজন মৃত ব্যক্তিকে পড়ে থাকতে দেখেন। রাস্তার ঠিক কয়েক মিটার দূরে আরও একটি মরদেহ রয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি-গুয়াইয়াকিলে প্রকাশিত দৈনিক এল তেলেগ্রাফো-র সাংবাদিক জেসিকা জাম্ব্রানো এই তথ্য জানিয়েছেন।

এখানে আমরা রাস্তায় মানুষকে ঘুমোতে দেখতে অভ্যস্ত। এখন আমরা দেখছি গৃহহীন মানুষরা শহরের কেন্দ্রে মারা যাচ্ছেন।

যারা বাড়িতে মারা যাচ্ছে তাদের সংখ্যা আরও অনেক বেশি। এবং তারা সরকারি সুযোগ-সুবিধার ওপর যথেষ্ট চাপ দিতে পারে।

জনাকীর্ণ হাসপাতালগুলো আর কোনও রোগীকে জায়গা দিতে পারছে না।

গুয়াইয়াকিলের মানুষরা হতাশ, কাউকে কাউকে মরদেহ নিয়ে যাওয়ার জন্য ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হচ্ছে বলে এক্সপ্রেসো পত্রিকার সাংবাদিক ব্লাঙ্কা মনকাদা এ কথা বলেন।

মার্চের শেষ সপ্তাহে বাড়িতে ৩০০ জনের বেশি মানুষ মারা গেছে (বিভিন্ন কারণে) এবং তাদের মরদেহ পুলিশ উদ্ধার করে।

নিউজ এজেন্সি ইএফই এর  একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অপেক্ষমান তালিকায় বর্তমানে ১১৫টি নাম রয়েছে। বিবিসি।

এসএমএম