• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: এপ্রিল ৫, ২০২০, ০৬:১৬ এএম
সর্বশেষ আপডেট : এপ্রিল ৫, ২০২০, ০৬:২১ এএম

ইঁদুরে সফল প্রয়োগ, করোনায় কার্যকর ‍‍`সোবেটিরম‍‍`!

ইঁদুরে সফল প্রয়োগ, করোনায় কার্যকর ‍‍`সোবেটিরম‍‍`!

চীন থেকে বিশ্বের প্রায় সব দেশে ছড়িয়ে ভয়াবহ তাণ্ডব চালাচ্ছে করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯। প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের গ্রাসে যেন ভেঙেচুরে যাচ্ছে পৃথিবী। এই মধ্যে মহামারিতে রূপ নেওয়া এই ভাইরাসের ছোবলে বিশ্বজুড়ে মৃত্যুসংখ্যা ছাড়িয়েছে ৬১ হাজার। এছাড়া আক্রান্ত রয়েছে আরও প্রায় ১২ লাখ মানুষ।

সম্প্রতি বাংলাদেশেও থাবা বসিয়েছে এই ভাইরাস। এখন পর্যন্ত এই ভাইরাসের গ্রাসে বাংলাদেশে ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু এর শেষ কোথায়? এমন প্রশ্ন এখন ভাবিয়ে তুলেছে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বিশ্বের বাঘা বাঘা বিজ্ঞানীদেরও।

প্রাণঘাতী এই ভাইরাস সাধারণ কোনো ফ্লু ভাইরাস নয়, জিনের গঠন বদলে প্রতিনিয়ত এই ভাইরাস নিজের চরিত্রই বদলে ফেলছে। তাই সংক্রমণ ঠেকানোর ভ্যাকসিন তৈরির প্রক্রিয়াও বিলম্বিত হচ্ছে। আপাতত কিভাবে এটার সংক্রমণ রোধ করা যায় সেটার সন্ধান করতেই ব্যস্ত চিকিৎসকরা। এ জন্য বিভিন্ন রকম ওষুধ দিয়েও চলছে করোনাকে ঘায়েল করার চেষ্টা।

এরই মধ্যে জানা গেছে নতুন তথ্য, কয়েক বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল ইউনিভার্সিটির ফুসফুস বিশেষজ্ঞ ডা. নাফতলি কামিনস্কি ফুসফুসের ফাইব্রোসিসের জন্য একটি ড্রাগ তৈরি শুরু করেছিলেন। যা এখন কোভিড-১৯ এর নির্দিষ্ট জীবন-হুমকির প্রভাবগুলির বিরুদ্ধে কার্যকর বলে ধারণা করা হচ্ছে। সোবেটিরোম নামক ওষুধটি ক্ষতচিহ্নকে নিরাময় করে এবং ফুসফুসে কোষের কার্যকারিতা উন্নত করে।

সম্প্রতি একটি নতুন গবেষণায় বিজ্ঞানীরা দেখেছেন যে, সোবেটিরোম তীব্র শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ সিনড্রোম (এআরডিএস) প্রতিরোধ ও চিকিৎসা করার ক্ষেত্রেও কার্যকর। প্রাণঘাতী কোভিড-১৯ ভাইরাস ফুসফুসে ফুটো করে দেয়, ফলে তরল বেরিয়ে আসে। আর এ কারণে রোগীদের শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়, বিশেষত কোভিড-১৯ আক্রান্ত বয়স্ক রোগীদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়।

ডা. নাফতালি কামিনস্কি বলেন, ‘ইঁদুরের ওপর চালানো পরীক্ষায় সোবেটিরোম কার্যকারিতা অবাক করার মতো ছিল। ইঁদুরগুলির মধ্যে আমরা উল্লেখযোগ্য উন্নতি দেখেছি। ওষুধটি এখনও মানুষের এআরডিএসের জন্য পরীক্ষা করা হয়নি। তবে প্রয়োজনীয় তহবিল পেলে দ্রুত এটিকে মানুষের ওপর ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল করা হবে। ইয়েল-নিউ হ্যাভেন হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটে ২০ থেকে ৩০ জন রোগী রয়েছে, যে কোনো দিন তাদের ওপর পরীক্ষা চালানো হতে পারে।’

তিনি বলেন, রোগীদের শ্বাসকষ্ট, অক্সিজেনের মাত্রা হ্রাস এবং শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যর্থতা অনুভব করা শুরু করার আগে কোভিড -১৯ এর একটি লুকানো সময়কাল থাকে। অভ্যন্তরীণভাবে, শরীরে যা ঘটছে তা ‘সাইটোকাইন ঝড়’ হিসাবে পরিচিত। বিজ্ঞানীরা শরীরের প্রাকৃতিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা প্রচুর পরিমাণে বাড়াতে পরামর্শ দিয়েছেন। যা ফুসফুসে প্রতিরোধক কোষ এবং তরল বৃদ্ধি করে কোভিড-১৯ ভাইরাসকে পরাজিত করতে পারে। সোবেটিরোম ফুসফুসের ক্ষত সারিয়ে সেই তরল বৃদ্ধিতে কাজ করে। ফলে রোগী সুস্থ হয়ে ওঠে।

কামিনস্কি বলেন, ‘আমরা যদি কোভিড-১৯ এর প্রাথমিক উপসর্গ নিয়ে লুকোচুরি না করি তাহলে সহজেই এই প্রাণঘাতী রোগের হাত থেকে বাঁচতে পারি। প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করা সম্ভব হলে ফুসফুসের ক্ষতিড়গ্রস্ত কোষ মেরামত করে করোনা প্রতিরোধ করতে পারি। সেবোটিরোম এরই মধ্যে মানুষের ওপর পরীক্ষা করা হয়েছে এবং সম্পূর্ণ নিরাপদ হিসাবে প্রমাণিত হয়েছে।’

কামিনস্কির মতে, এটি কোভিড-১৯ চিকিৎসার জন্য ড্রাগ হিসাবে অনুমোদন পেলে অনেক মানুষের প্রাণ বাঁচাতে পারবে।

এসকে