• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুলাই ১৪, ২০২০, ০৫:২৫ এএম
সর্বশেষ আপডেট : জুলাই ১৪, ২০২০, ০৫:২৫ এএম

বেপরোয়া ভারতীয় মিডিয়া-সীমান্ত ফোর্স

বিজিবির বিরুদ্ধে এবার বিএসএফের মিথ্যাচার!

বিজিবির বিরুদ্ধে এবার বিএসএফের মিথ্যাচার!

লাদাখ সীমান্তে ভারত-চীন দ্বন্দ্ব শুরুর পর থেকে বাংলাদেশ সম্পর্কে একের পর এক নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশ করে যাচ্ছে ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যম। বিশেষ করে সম্প্রতি চীন কর্তৃক বাংলাদেশি পণ্যে শুল্ক সুবিধা দেওয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশ-চীন বাণিজ্যিক সম্পর্কে নতুন মাত্রা যোগ হওয়ার প্রেক্ষিতে ভারতীয় মিডিয়ায় বাংলাদেশকে হেয় করে প্রতিবেদন প্রকাশ হচ্ছে।

মাত্র কয়েকদিন আগেই বেশ আলোচনা সৃষ্টি হয় বাংলাদেশকে দেয়া চীনের শুল্ক সুবিধার বিষয়টিকে ‘খয়রাতি’ হিসেবে উল্লেখ করে দেশটির শীর্ষ স্থানীয় একাধিক সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশকে কেন্দ্র করে। তবে ভারতীয় মিডিয়ার এমন নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশের জেরে দেশব্যাপী তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। পাশাপাশি দেশীয় গণমাধ্যমে একের পর সংবাদ প্রকাশে শুরু হয় কঠোর সমালোচনা। যার এক পর্যায়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনের জন্য আনন্দবাজার পত্রিকা ক্ষমা প্রার্থনা করে।

তবে সে প্রতিবেদনের জন্য আনন্দবাজার ক্ষমা চাইলেও সম্প্রতি বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিবি)-কে টার্গেট করে শুরু হয়েছে দেশটির মিডিয়া কারসাজি। আর তাতে রসদ যোগাতে এবার যোগ দিয়েছে ভারতের বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ)। 

সোমবার (১৩ জুলাই) ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস প্রকাশিত খবরে জানা যায়, বিজিবির বিরুদ্ধে ভারতের বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ) একটি বিবৃতি দিয়েছে।

বিবৃতির বরাতে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস প্রকাশিত সংবাদের মূল বিষয়বস্তু উপস্থাপন করা হয় “ভারত থেকে গরুপাচারে সায় দেয় বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনী, ‘এই গরুর মাংস ক্ষতিকর’ বিস্ফোরক দাবি বিএসএফ-এর” শিরোনামে। 
সোমবার দুপুরে প্রকাশিত খবরে দাবি করেছে, বিএসএফ এর পক্ষ থেকে এই প্রথম ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে গবাদিপশু পাচার নিয়ে সরকারি বক্তব্য দেওয়া হল। এই পশুপাচারকে ‘অমানবিক, নির্দয় এবং রাষ্ট্রদ্রোহী’ কার্যকলাপ বলেও উল্লেখ করেছে বিএসএফ। তবে বিএসএফের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ দাবি, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এই পাচারকে সম্পূর্ণভাবে সমর্থন জানায়।

সামনে কুরবানির ঈদ। এজন্য গরু পাচার বাড়তে পারে। এমন আশঙ্কা প্রকাশ করে বিএসএফ গত ৬ জুলাই দেশটির বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমকে হিন্দি ভাষায় বিবৃতিটি দিয়েছে বলে খবরে উল্লেখ করা হয়েছে।

বিবৃতির উদ্ধৃতি দিয়ে সংবাদ মাধ্যমটি বলছে, পাচার হওয়া প্রাণীদের চোখ বেঁধে দেওয়া হয় প্রথমে। এরপর তাদের কলাগাছের গুড়ির সঙ্গে বেঁধে নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। ভাসতে ভাসতে তারা বাংলাদেশ সীমান্তে পৌঁছলে সেখানে কয়েকশো গবাদিপশু পাচারকারীরা দাঁড়িয়ে থাকে। পানি থেকে প্রাণীদের উঠিয়ে স্পিডবোটে করে নিয়ে চলে যায়। এই কাজটি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সেনাদের (সদস্য) সঙ্গে চুক্তির ভিত্তিতেই করা হয়।

বিএসএফ এর সাউথ বেঙ্গল ফ্রন্টেয়িয়ার-এর ডিআইজি এস এস গুলেরিয়ার স্বাক্ষরে বিবৃতিটি প্রকাশ করা হয়েছে বলে উল্লেখ করে বলা হয়েছে,  প্রাণীগুলোকে পরম যত্নের সঙ্গে লালন-পালন করা হয়। কিন্তু কোরবানি ঈদের নামে উৎসর্গ করে জবাই করার অর্থ হল নির্যাতন করা।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, শারীরিক এবং মানসিকভাবে গবাদি পশুদের যেভাবে নির্যাতন করা, তাতে সেই মাংস খাওয়া উচিত নয় কখনই। কারণ ততক্ষণে প্রাণিটির দেহে ল্যাকটিক অ্যাসিডের মাত্রা কমতে শুরু করে। ফলে এদের মাংসে অনেক ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়াও জন্মায়। এজন্য যাঁরা এই মাংস খান তাঁদের অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

শুধু তাই নয়, বিএসএফ এর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ভারতে যে গরুর দাম ৫০ হাজার টাকা, ঈদের সময় বাংলাদেশে সেই গরু বিক্রি হয় দেড় লক্ষ টাকায়। প্রতিটি গরুর জন্য চোরাচালানকারীরা ১০ হাজার টাকা পেয়ে থাকেন বলেও দাবি করা হয়েছে, বিএসএফ এর এই বিবৃতিতে।

আর আগে ৭ জুলাইয়ের সেই প্রতিবেদনে আনন্দবাজার দাবি করে, ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফ নাকি স্থানীয় আবাদি মানুষদের চাষাবাদ করতে না দেয়ায় বাংলাদেশিরা  বিনা বাধায় জমি দখল করে চলেছে। তাদের অভিযোগ ভারতীয় চাষিদের ওই জমিতে চাষ করাই লাটে উঠেছে। অনেক সময়ে মাঠ থেকে ভারতীয় চাষীদের তুলে নিয়ে গিয়ে বিজিবি নাকি আটকে রাখছে।

তবে শুক্রবার (১০ জুলাই) গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদটিকে সম্পূর্ণ ‘ভিত্তিহীন, বানোয়াট এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ উল্লেখ করে কড়া প্রতিবাদ জানায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।

দেশের কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সীমান্তে বিজিবিকে উস্কে দিয়ে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার পায়তারা চলছে। কোনভাবে একবার যদি সেটা সম্ভব হয় তাহলে যে কথিত আত্মরক্ষার নামে সীমান্তে বাংলাদেশিদের হত্যা করছিলো বিএসএফ, তার সাফাই গাওয়ার একটা ইস্যু পাওয়া যাবে। যার প্রেক্ষিতে এই পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে। এ সময়, বিষয়টি নিয়ে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য সরকারের নিরব ভূমিকা নিয়ে রীতিমত বিস্ময় প্রকাশ করেন তারা।

এসকে