• ঢাকা
  • রবিবার, ০৫ মে, ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: নভেম্বর ২, ২০২০, ০২:১০ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : নভেম্বর ২, ২০২০, ০২:১০ পিএম

যে ইস্যুতে বেকায়দায় পড়তে পারেন ট্রাম্প

যে ইস্যুতে বেকায়দায় পড়তে পারেন ট্রাম্প
ডোনাল্ড ট্রাম্প - ফাইল ফটো

করোনাভাইরাস সংক্রমণ এবং মৃত্যুর সংখ্যা- দুদিক থেকেই যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের তালিকার এক নম্বরে। এখন পর্যন্ত দেশটিতে ৯০ লাখেরও বেশি মানুষ সংক্রমিত হয়েছে। মারা গেছে দুই লাখ ৩০ হাজারেরও বেশি। মহামারির ভয়াবহ এই চিত্র এখনও বিন্দুমাত্র মলিন হয়নি। বরং নির্বাচনের ঠিক আগে সংক্রমণের সংখ্যা আগের যে কোনও সময়ের চেয়ে বাড়ছে। প্রতিদিন এখন প্রায় ৮৯ হাজার আমেরিকান নতুন করে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হচ্ছে। ফলে দৃশ্যত এ ইস্যুতে বেকায়দায় পড়তে পারেন ট্রাম্প।

মার্কিন বিশ্লেষকদের মধ্যে বড় কোনও দ্বিমত নেই যে, এবারের নির্বাচনে এক নম্বর ইস্যু - করোনাভাইরাস। তাদের অনেকেই বলছেন, এবার রেকর্ড আগাম ভোটের অন্যতম কারণ এই কোভিড।

বিধিনিষেধের কারণে মঙ্গলবার কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে না পারার উদ্বেগ এই আগাম ভোটারদের মধ্যে কাজ করেছে। আবার অনেক পর্যবেক্ষকের মতে, কোভিড মোকাবিলায় সরকারের পারফরমেন্স নিয়ে তাদের মনোভাব ব্যালটের মাধ্যমে দেখাতে অনেকেই উন্মুখ।

রেকর্ড ৯ কোটি ভোটার আগাম ভোট দিয়েছেন যা ২০১৬ সালে দেওয়া মোট ভোটার উপস্থিতির ৬০ শতাংশ। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, গত সাত মাস ধরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই মহামারি সামাল দিতে যা করছেন বা বলছেন, ভোটের সিদ্ধান্তে তার প্রভাব কী হচ্ছে?

দুই দিন আগেও ওয়াশিংটনের রাস্তায় বিবিসি-র একজন সংবাদদাতা ভোটারদের কাছ থেকে মিশ্র প্রতিক্রিয়া শুনেছেন।

কৃষ্ণাঙ্গ এক তরুণীর কথা ছিল, ‘যেভাবে তিনি (প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প) পরিস্থিতি সামলাচ্ছেন তা খুবই দুর্বল।’ অন্যদিকে মাঝবয়সী শ্বেতাঙ্গ এক নারীর কথা ছিল এ রকম, ‘প্রেসিডেন্ট চাইছেন সবাই যেন আতঙ্কিত না হয়ে পড়ে। আমি সেটাই পছন্দ করছি।’

আরেক শ্বেতাঙ্গ তরুণীর বক্তব্য, ‘খুব ভালো কিছু তিনি করেননি, আবার যে খুব খারাপ কিছু করেছেন তা-ও আমি বলব না।’

ওয়াশিংটনে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক এবং বিশ্লেষক জো গার্সটেনসন বলছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প করোনাভাইরাসের মোকাবিলা যেভাবে করছেন অধিকাংশ আমেরিকান তাতে খুশি নন।

বিবিসি-কে তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট যা করছেন তা হলো প্রতিদিনের পরিস্থিতি আঁচ করার চেষ্টা করে সে অনুযায়ী তিনি সাড়া দিচ্ছেন।’

সর্বশেষ জনমত জরিপও বলছে যে, প্রতি ১০ জন আমেরিকানের সাত জনই মনে করছেন কোভিড-১৯ নিয়ে প্রেসিডেন্ট ‘ভুল বার্তা’ দিচ্ছেন। তবে রিপাবলিকান সমর্থকদের সিংহভাগই এ ব্যাপারে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে রয়েছেন।

অধ্যাপক গার্সটেনসন বলেন, ‘শুধু যে দলীয় আনুগত্যের ভিত্তিতে মতামতে ভিন্নতা রয়েছে তাই নয়, এলাকা ভিত্তিতেও জনমত ভিন্ন। যে এলাকার মানুষ এই মহামারিতে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তারা ক্ষিপ্ত।’

সমর্থনের নিক্তিতে ওঠানামা

বছরের শুরুর দিকে অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যে জনমত জরিপে জো বাইডেন খুব সামান্য এগিয়ে ছিলেন। কিন্তু গ্রীষ্মে ওই রাজ্যে কোভিড-১৯ ভয়ঙ্কর রূপ নেওয়ার পর বাইডেনের পক্ষে সমর্থন অনেক বেড়েছে। অ্যারিজোনায় এই মহামারিতে এখন পর্যন্ত মারা গেছে পাঁচ হাজা ৯২০ জন।

উইসকনসিন অঙ্গরাজ্যে ২০১৬ সালের ভোটে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামান্য ব্যবধানে জিতেছিলেন। এবারও বছরের অধিকাংশ সময়জুড়ে ট্রাম্পের সমর্থনে তেমন কোনও ভাটা দেখা যায়নি। কিন্তু অক্টোবর মাসে হঠাৎ সংক্রমণ হুহু করে বাড়তে থাকায় জনমত ঘুরে গেছে। সর্বশেষ জনমত জরিপে উইসকনসিনে জো বাইডেন ট্রাম্পের চেয়ে সাত থেকে ১৭ পয়েন্ট এগিয়ে গেছেন।

যে রাজ্যটি ঐতিহাসিকভাবে রিপাবলিকানদের অন্যতম একটি ঘাঁটি সেই টেক্সাসেও ভোটারদের মধ্যে ট্রাম্পকে নিয়ে বিরূপ মনোভাবে স্পষ্ট হচ্ছে। কারণ, দুই দফা সংক্রমণে টেক্সাস বিপর্যস্ত। কোভিডে এই রাজ্যে এখন পর্যন্ত ১০ হাজার ৪৪০ জন মারা গেছে।

টেক্সাসের চিত্রশিল্পী শেন রেইলি তার রাজ্যে কোভিডে এত লোকের মৃত্যুতে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ। বিবিসি-কে তিনি বলেন, জীবনে প্রথমবারের মতো এবার তিনি দল বদলেছেন।

শেন রেইলি ভাষায়, ‘আমি সবসময় রক্ষণশীলদের ভোট দিয়েছি। কিন্তু এই প্যানডেমিক মোকাবেলায় ক্ষমতাসীন রিপাবলিকানরা যা করছে তাতে জীবনে প্রথমবারের মতো আমি ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থীকে ভোট দেবো।’

কোভিড নিয়ে তামাশা

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অবশ্য কোভিড নিয়ে তার প্রশাসনের প্রতি মানুষের এমন ক্ষোভের তেমন তোয়াক্কা করছেন না। দুই দিন আগে শনিবার পেনসিলভানিয়ার নিউটন শহরে এক সভায় এ নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী জো বাইডেনকে উপহাসন করেন তিনি।

ট্রাম্প বলেন, ‘জো বাইডেন কি বলছেন আমি গতকাল তা দেখলাম। তার মুখে সেই একই বুলি-কোভিড, কোভিড আর কোভিড। বলার মতো তার কাছে আর কিছু নেই।’ ট্রাম্পের ওই প্রচারণা সভায় অনেকের মুখেই মাস্ক ছিল না।

শনিবার স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি একটি হিসাব প্রকাশ করেছে যে, জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ট্রাম্পের প্রচারণা সভা থেকে ৩০ হাজারেরও বেশি লোক কোভিডে আক্রান্ত হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৭০০ জনের।

সরেজমিনে তদন্ত নয়, বরং প্রচলিত একটি গাণিতিক মডেলের ওপর ভিত্তি করে তারা এই রিপোর্ট দিয়েছে।

এখন ৩ নভেম্বরের নির্বাচনে যদি আমেরিকায় রাজনৈতিক পট বদলে যায়, কোভিড নিয়ন্ত্রণে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পারফরমেন্সকেই তার প্রধান কারণ হিসেবে দেখা হবে। সূত্র: বিবিসি।

এসকে