• ঢাকা
  • শনিবার, ০৪ মে, ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: নভেম্বর ৪, ২০২০, ০৬:৫২ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : নভেম্বর ৪, ২০২০, ০৬:৫৩ পিএম

তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা, প্রতীক্ষা আর উৎকন্ঠার মার্কিন নির্বাচন

তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা, প্রতীক্ষা আর উৎকন্ঠার মার্কিন নির্বাচন

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন- ২০২০

শেষ হয়েছে মার্কিন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ পর্ব। এর মাঝেই দেশটির বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য থেকে আসতে শুরু করেছে ভোটের ফল। সর্বশেষ ভোট পরিসংখ্যান অনুসারে -প্রায় একদশক পরে জো বাইডেনের নেতৃত্বে হোয়াইট হাউজের পথে অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে ডেমোক্র্যাটরা। এদিকে পতনের আভাস পেতেই নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনে আদালতের স্মরণাপন্ন হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। এদিকে তার পাল্টা জবাব দিতে আইনি লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত রয়েছেন বলে জানিয়ে দিয়েছেন বাইডেনের আইনজীবীরা।

এখনও যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি রাজ্যের ভোট ডাকযোগে আসা বাকি রয়েছে । এই পরিস্থিতিতে প্রাথমিক প্রবণতার নিরিখে হাড্ডা হাড্ডি লড়াই হচ্ছে রিপাবলিকান এবং ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থীদের মধ্যে। যেখানে এখন পর্যন্ত এগিয়ে আছেন ডেমোক্রেট প্রার্থী এবং দেশটির সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২৩৮টি ইলেক্টোরাল ভোট পেয়েছেন বাইডেন। অন্য দিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প পেয়েছেন ২১৩টি ইলেক্টোরাল ভোট।
দেশটির ৫০টি অঙ্গরাজ্যের মধ্যে এখন পর্যন্ত ৪০টি রাজ্যের ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে প্রদত্ত ভোটের ৫০ শতাংশ (৬৮,৮৯৪,৩৭০ ৪৯) জমা পড়েছে বাইডেন ব্যালটে। বিপরীতে ৪৮ দশমিক ৪ শতাংশ (৬৬,৬৭১,৫৪৫) ভোট পেয়ে তার ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। শুরুতে বাইডেন বড় ব্যবধান গড়ে এগিয়ে গেলেও মার্কিন মধ্যাঞ্চলে অর্জিত বড় জয়ে লড়াই জমিয়ে তোলেন ট্রাম্প। এ অঞ্চলে রিপাবলিকানদের জয় নর্থ ডাকোটা, সাউথ ডাকোটা, নেব্রাস্কা, কানসাস, ওকলাহামা, আকরানসাস, মিসিসিপ্পি, টেনেসি, মুসোরি, লুজিয়ানা, অ্যালাবামা, ইন্ডিয়ানা, ওয়ায়োমিং রাজ্যগুলিতে প্রায় নিশ্চিত। এই রাজ্যগুলিতে রিপাবলিকানদের জয়ের ব্যবধানও বেশ ভালো। তবে যে স্টেটগুলি হাতছাড়া হয় ট্রাম্পের তার মাঝে রয়েছে নিউ মেক্সিকো এবং কোলারাডো। এছাড়া গত নির্বাচনে জেতা মন্ট্যানা, মিনেসোটা, অ্যারিজোনাতেও বাইডেনের কাছে পিছিয়ে গিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এছাড়া আফ্রিকান-আমেরিকানদের ভোটের প্রভাবের ফলে ইলনয়িসে হারতে হবে ট্রাম্পকে। গতবার এই রাজ্য ছিল রিপাবলিকানদের দখলে। পূর্ব উপকূলে বাইডেনের বড় জয় ২৯ ইলেকটোরাল কলেজ বিশিষ্ট নিউ ইয়র্কে জিতেছেন বাইডেন। এছাড়া পূর্ব উপকূলের আরও বেশ কয়েকটি রাজ্যে লিড নিয়েছেন জো বাইডেন। সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ডেমোক্র্যাট প্রার্থী বাইডেন এখনও পর্যন্ত জিতেছেন নিউ মেক্সিকো, নিউ হ্যাম্পশায়ার, নিউইয়র্ক, ম্যাচাচুসেটস, নিউ জার্সি, মেরিল্যান্ড, ভারমন্ট, কানেক্টিকাট, ডেলাওয়ার ও কলোরাডোতে। হাওয়াই, ওয়াশিংটন, ক্যালিফোর্নিয়া এবং ইলিনয়েসের মতো রাজ্যেও ডেমোক্র্যাটদের জয় হয়েছে বলে জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা এএনআই।

পক্ষান্তরে প্রতিপক্ষ রিপাবলিকানরা জিতেছেন সাউথ ক্যারোলিনা, আলাবামা, নর্থ ডাকোটা, আরকানসাস, টেনিসি, ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া ওকলাহামা, কেন্টাকি ও ইন্ডিয়ানাতে। এছাড়া এমনটাই জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা রয়টার্স। আইওয়ার ৩টি ইলেক্টরাল ভোটও গিয়েছে ট্রাম্পের পক্ষে। যদিও এ দিন ফল ঘোষণা শুরুর দিকে ট্রাম্প টুইটারে লিখেছেন, ‘সারা দেশেই সত্যিই খুব ভাল ভাবে এগোচ্ছি। সবাইকে ধন্যবাদ’।
এ রাজ্যগুলোতে ট্রাম্প এদিয়ে জর্জিয়া, টেক্সাস এবং ফ্লোরিডায় বাইডেনকে পিছনে ফেলে এগিয়ে গিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে পশ্চিম উপকূলের ওয়াশিংটন, অরেগন, ক্যালিফোর্নিয়ায় বড় ব্যবধানে জয় নিশ্চিত করতে চলেছেন ডেমোক্র্যাটদের তরফে রাষ্ট্রপতি পদ প্রার্থী জো বাইডেন। বাড়ছে ভোটগণনা নিয়ে চড়াই-উতরাই। সেদেশের মোট ২৪ কোটি ভোটারের মধ্যে ভোট দেয়ার জন্য নিবন্ধিত হয়েছেন ১৯ কোটি। নির্বাচনের রাতেই সব ভোট গণনা শেষ করা সম্ভব হয় না কোনও বার। তবে প্রতি নির্বাচনেই বিজয়ী ঘোষণার মতো সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট কে পেয়েছেন তার স্পষ্ট চিত্র ফুটে ওঠে নির্বাচনের রাতেই। তবে করোনা আবহে এবার তা সম্ভব হচ্ছে না।

‘ব্যাটলগ্রাউন্ড’ হিসেবে বিবেচিত রাজ্যগুলোর প্রাথমিক ফলাফলে যখন হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের চরম উত্তেজনা, তখনই জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে উদযাপনের প্রস্তুতি নেওয়ার কথা বললেন রিপাবলিকান প্রার্থী প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। হোয়াইট হাউজের ইস্ট রুম থেকে দেওয়া এই ভাষণের শুরুতেই নিজের পরিবার ও কোটি সমর্থককে তিনি ধন্যবাদ দিয়েছেন, যারা তাকে ভোট দিয়েছেন।
ট্রাম্প বলেন, “বিরাট উদযাপনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি আমরা। আমরা সবকিছু জিতে নিচ্ছি। গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য ফ্লোরিডায় জয়ের খবর সমর্থকদের দিয়ে খুশির সুরে তিনি বলেন, আমরা শুধু জিতিনি, বড় ব্যবধানে জিতেছি। পেনসিলভেইনিয়াতেও রিপাবলিকানদের এগিয়ে থাকার দাবি করেছেন ট্রাম্প, যদিও এর আগে তার প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেনও একই দাবি করেছেন। নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ এনে ট্রাম্প তার ভাষণে বলেছেন, আমেরিকার সাধারণ মানুষের সাথে একটা প্রতারণা হচ্ছে। এটা আমাদের দেশের জন্য লজ্জার।

তিনি বলেছেন, এই নির্বাচনে আমরাই জিতব। আমি যতদূর জানি, ইতোমধ্যে আমরা জিতেই গেছি। এখনও বহু ভোট গণনা বাকি থাকতে ট্রাম্পের এমন ঘোষণাকে ‘ভুয়া দাবি’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে। তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হুমকি দিয়েছেন, ভোটের ফলাফল নিয়ে লড়াই করতে তিনি প্রয়োজনে সুপ্রিম কোর্টে যাবেন। আইনি লড়াইয়ের জন্য আইনজীবীদের পরামর্শ নিচ্ছেন তিনি। একই সঙ্গে কারচুপির অভিযোগ তুলে ভোটগ্রহণ বন্ধের দাবিও জানিয়েছেন তিনি। অনেক জায়গাতেই নির্ধারিত সময়ের পরেও ভোট নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ ট্রাম্পের।

এদিকে ইতিহাসে এই প্রথমবারের মত নির্বাচনি সহিংসতার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রেক্ষাপটকে কেন্দ্র করে। বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার বার্তাসংস্থা এপি জানায়, বিশেষজ্ঞদের মতে গত এক শতকের মধ্যে অন্যতম সর্বোচ্চ ভোটদানের সাক্ষী থাকতে চলেছে আমেরিকা। কিন্তু পাশাপাশি এই ভোট মেরুকরণের মধ্যে দিয়ে তিক্তভাবে লড়া হচ্ছে। যার প্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের রাতে ভোট গণনার উত্তেজনার মধ্যেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে বিভিন্ন শহরে। বিবিসি জানিয়েছে, ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটলে মিছিলের কারণে যান চলাচল বিঘ্নিত হয়, কোথাও কোথাও আতশবাজিও পোড়ানো হয়। মিছিল থেকে স্লোগান ওঠে- আমরা যদি বিচার না পাই, তারাও শান্তিতে থাকতে পারবে না! হোয়াইট হাউজের বাইরে হাতাহাতির মত ঘটনারও খবর পাওয়া গেছে। সেখানে তিনজনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে বলে এনবিসির খবরে জানানো হয়েছ।
সিবিএস নিউজের প্রতিবেদক ক্রিস্টিনা রুফিনি একটি টুইট করে জানিয়েছেন, সেখানে ‘স্মোক বম্ব’ জাতীয় কিছু ফাটানো হয়েছে বিক্ষোভের মধ্যে।
সাম্প্রতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বলা যায়, বিলম্বিত নির্বাচনী ফলাফল প্রাপ্তি এবার একটি বড় ইস্যুই হয়ে উঠতে পারে যা হওয়ার সম্ভাবনাই দেখা যাচ্ছে বেশি। কারণ, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের লড়াই এখন চলে যাচ্ছে পোস্টাল ভোটের দিকে, যেসব ভোট এখনও মিশিগান, উইসকনসিন এবং পেনসিলভানিয়ার মত জায়গাগুলোতে গণনা করা বাকি। পাশপাশি ধোঁয়াশাচ্ছন্ন নির্বাচনী ফল যদি সুপ্রিম কোর্টে গড়ায় সেক্ষেত্রে পরিস্থিতি আরো জটিল হবে। কারণ এরইমধ্যে দুই প্রার্থীর পক্ষ থেকে আইনি লড়াইয়ের জোরদার ঘোষণাতেও লড়াকু আভাস মিলছে। সেজন্য আইনজীবীরা প্রস্তুতই আছেন বলেও জানান তারা। আর প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প আইনি চ্যালেঞ্জে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত যাওয়ার হুমকি আগেই দিয়েছেন। তেমন হলে ফল নির্ধারিত হতে লেগে যাবে আরও কয়েক সপ্তাহ। নির্বাচনের এ পর্যায়ে অনিশ্চয়তা অবশ্যম্ভাবী। আর এ অনিশ্চয়তা থেকে দেখা দিতে পারে অস্থিরতা। যার আভাস আরো আগেই দিয়েছিলেন দেশটির বিশেষজ্ঞরা।