• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জানুয়ারি ২২, ২০২১, ১০:১০ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জানুয়ারি ২৩, ২০২১, ০৪:১৬ পিএম

যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের যত অর্জন

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের যত অর্জন

নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ক্ষমতা গ্রহণের সঙ্গেই শেষ হয়েছে ট্রাম্প অধ্যায়। চার বছরের শাসনে নানা সমালোচনার জন্ম দিলেও যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্প প্রশাসনের অর্জনগুলোও কিন্তু প্রশংসার যোগ্য। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, জ্বালানীর দাম কমানো,সীমান্তে নিরাপত্তা, মধ্যপ্রাচ্যের আধিপত্যসহ বিশ্বের প্রথম স্পেস ফোর্স গঠনেরও দাবিদার ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক ৪৫তম মার্কিন প্রেসিডেন্টের অর্জনের খাতায় কি কি আছে।

নতুন কোন যুদ্ধে না জড়ানো: 
ক্ষমতাগ্রহণের পর থেকেই মেক্সিকো, চীন, ইরান, উত্তর কোরিয়াসহ বেশ কিছু দেশের সঙ্গে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ইস্যুতে বিরোধে জড়ান ডোনাল্ড ট্রাম্প। সামরিক হামলার পর পারমাণবিক হামলা কিংবা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ সৃষ্টির আশংকা তৈরি হলেও কোন দেশের সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে জড়াতে হয়নি যুক্তরাষ্ট্রকে। অন্যদিকে প্রথমবার উত্তর-দক্ষিণ কোরিয়া এবং ইসরায়েল-সংযুক্ত আরব আমিরাতকে নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্মেলন করে ইতিহাস গড়েছেন ট্রাম্প। আর তাই যুদ্ধ এড়িয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার এই কৃতিত্বকে নিজের বড় অর্জন বলে মনে করেন স্বয়ং ট্রাম্প নিজেই।

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চীনের আধিপত্য কমানো: 
এশিয়ার প্রধান পরাশক্তি চীনের ওপর একের পর এক বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা দিয়ে তাদের যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে কোণঠাসা করে রাখেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। হুয়াওয়ের মতো বড় বড় চীনা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানও আধিপত্য বিস্তার করতে পারেনি দেশটিতে। অন্যদিকে অ্যাপল, গুগলসহ দেশীয় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো একচেটিয়া বাজার ধরে রাখতে সফল হয়েছে ট্রাম্পের চীনবিরোধী অবস্থানের কারণে।

অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা জোরদার: 
মেক্সিকো সীমান্তে প্রাচীর গড়ে বিশ্বজুড়ে সমালোচিত ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে এর মাধ্যমে সীমান্তে নিরাপত্তা যেমন জোরদার হয়েছে তেমনি পাচারও রোধ করা গেছে অনেকাংশে। একইসঙ্গে অবৈধ অভিবাসীদের দেশে প্রবেশে বাধা দিতেও কার্যকর ভূমিকা রেখেছে ট্রাম্প প্রশাসন।

মধ্যপ্রাচ্যে আইএস দমন: 
ইরাক-সিরিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যে আইএস দমনে বারাক ওবামা প্রশাসনের চাইতেও সফলতার দাবীদার ট্রাম্প প্রশাসন। এছাড়াও ২০১৯ সালের ২৬ অক্টোবরে সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমে সন্ত্রাসীগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট, আইএস এর গোপন আস্তানায় অভিযান চালায় মার্কিন সেনারা। এ সময় নিহত হয় আইএস নেতা আবু বকর আল বাগদাদি। দেশের বাইরের সামরিক অভিযানগুলোর মধ্যে এটিও ট্রাম্পের অন্যতম অর্জন।

ইসরাইল ও আরব দেশগুলোর মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন: 
ফিলিস্তিন ইস্যু নিয়ে ইসরাইলের সঙ্গে আরব দেশগুলোর বিরোধ দীর্ঘনের। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পরই আরব দেশগুলো সফরের মাধ্যমে দুপক্ষের সম্পর্কে উষ্ণতা বাড়ে। জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী স্বীকৃতি দিয়ে বিশ্বজুড়ে সমালোচিত হলেও এর মাধ্যমে এ অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব বেড়ে যায়। একইসঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরাতকে নানা সহায়তা দিয়ে দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করেন ট্রাম্প। ফলশ্রুতিতে ট্রাম্প প্রশাসনের মধ্যস্ততায় ইসরাইলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে সংযুক্ত আরব আমিরাত। পরবর্তীতে চুক্তিতে যুক্ত হয় বাহরাইন, সুদান ও মরোক্কো। মিশর ও জর্ডানও ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করতে আগ্রহ জানিয়েছে।

দেশে বেকারত্বের হার কমানো: 
দেশে অভিবাসী প্রবেশ নিয়ন্ত্রণে ট্রাম্পের কঠোর অবস্থান আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব ফেললেও এতে দেশে বেকারদের জন্যেও কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়। ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর যুক্তরাষ্ট্রের বেকারত্বের হার কমানোর চেষ্টা করেছেন শুরু থেকেই। তার ক্ষমতাকালে দেশটিতে প্রায় ৪০ লাখ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। যা দেশটির ইতিহাসে কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও সর্বনিম্ন বেকারত্বের হারের নতুন রেকর্ড। যদিও করোনাকালে লকডাউনের কারণে কর্মহীনদের সংখ্যা আবারও বেড়ে যায়। তারপরও নারীপুরুষসহ প্রায় সব শ্রেণীর মানুষের জন্যেই দেশজুড়ে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্ট হয়েছে বিগত চার বছরে। ৫০ বছরের মধ্যে বেকারত্বের হার ছিল সর্বনিম্ন। 

জ্বালানীতে স্বনির্ভরতা অর্জন: 
২০১৮ সালে অপরিশোধিত জ্বালানী তেলের উৎপাদনের হারে সৌদি আরবকেও ছাড়িয়ে যায় যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়াও দেশে গ্যাসের দামও কয়েক দশকের মধ্যে সবচাইতে কম ছিল ট্রাম্পের শাসনামলে।

আয়কর কমানো ও বিনিয়োগের সুযোগ বৃদ্ধি: 
মধ্যবিত্তদের আর্থিক সচ্ছলতা লাভের জন্য ‘ট্যাক্স কাট’ নীতি বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখে। এছাড়াও ডোনাল্ড ট্রাম্প তার শাসনামলে বাণিজ্য সংক্রান্ত আইন-কানুনও পরিবর্তন করেছেন। এতে হ্রাস পেয়েছে ব্যক্তিগত ও কর্পোরেট আয়কর। দেশীয় উৎপাদন বৃদ্ধির বিষয়ে অগ্রাধিকার দিয়ে জারি করেছেন নির্বাহী আদেশ। যার ফলে যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগের সুযোগও বেড়েছে। শেয়ারবাজারও ছিল স্থিতিশীল।

স্পেস ফোর্স গঠন: 
দেশের গণ্ডি পেরিয়ে মহাকাশ প্রতিরক্ষায় ট্রাম্পের শাসনামলে গড়ে তোলা হয় ‘স্পেস ফোর্স’। এর জন্য ট্রাম্প প্রশাসন বিপুল পরিমাণ অর্থও বরাদ্দ দেয়। এর মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ৭০ বছরেরও বেশি সময় পর নতুন একটি সামরিক বাহিনী গড়ে তোলা হলো। আর তাই এই বিশেষ কৃতিত্বের দাবীদারও ডোনাল্ড ট্রাম্প।

এছাড়াও সরকারের অনেক কাজেই ট্রাম্পের ভূমিকা প্রশংসনীয়। যদিও এর বাইরে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডও কম ঘটাননি তিনি।