• ঢাকা
  • রবিবার, ০৫ মে, ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৬, ২০২১, ১০:২৫ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : ফেব্রুয়ারি ৬, ২০২১, ১০:২৫ পিএম

এশিয়ার রাজনীতি

চীনের বিনিয়োগ বনাম ভারতের টিকা!

চীনের বিনিয়োগ বনাম ভারতের টিকা!

করোনার টিকা নিয়ে যখন ইউরোপ-অ্যাস্ট্রাজেনেকার দ্বন্দ্ব চরমে, তখন এশিয়ার ছয় দেশকে আগামী কয়েক সপ্তাহে লাখ লাখ ডোজ করোনার টিকা সরবরাহ করতে যাচ্ছে ভারত। এর মাধ্যমে প্রতিবেশীদের প্রশংসার সঙ্গে যেন এ অঞ্চলে নিজেদের আধিপত্যও বিস্তার করতে যাচ্ছে দেশটি। ভ্যাকসিন নীতিতে কূটনৈতিকভাবেও চীনকে ছাপিয়ে যাচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার পরাশক্তি ভারত। বিগত বছরগুলোরে হিমালয় অঞ্চলের দেশগুলোতে যখন চীনের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক আধিপত্য প্রবল হতে চলেছে ঠিক তখনই শুরু হলো ভারতের ‘টিকা রাজনীতি’।

এমন সময় প্রতিবেশীর প্রতি ভারত এই সহায়তার হাত বাড়িয়েছে, যখন টিকা কর্মসূচী নিয়ে বিশ্বের সব দেশই হিমশিম খাচ্ছে। ইতিমধ্যে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত ব্রিটিশ-সুইডিশ ওষুধ কোম্পানি অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার চালান পৌঁছেছে বাংলাদেশে, মালদ্বীপ, ভুটান ও নেপালে। মিয়ানমার আর সিসিলিসও রয়েছে ভারতে উৎপাদিত টিকার অপেক্ষায়।

ভূখণ্ড নিয়ে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন চললেও নেপালের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক মন্ত্রী হৃদেশ ত্রিপাঠী বলছেন, “টিকা সরবরাহের মাধ্যমে প্রতিবেশীদের প্রতি ভারত বন্ধুত্বের প্রমাণ দিয়েছে। করোনায় বিপর্যস্ত সাধারণ মানুষের এটি সত্যিই স্বস্তির খবর।”

মহামারী মোকাবেলায় চীন নেপালকে সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিলেও, সিনোফার্মার উৎপাদিত ভ্যাকসিন মানবদেহে প্রয়োগের ছাড়পত্র না পাওয়ায় ভারতের ওপরেই নির্ভর করছে দেশটি। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত সিনোভ্যাক টিকা তুরস্ক ও ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশগুলোকেও দিয়েছে চীন। এছাড়া আফ্রিকা, এশিয়া ও দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোতেও টিকা সরবরাহের অঙ্গীকার করেছে দেশটি। 

চীনের এই সিনোভ্যাক বায়োটেকের কাছ থেকে বাংলাদেশেরও এক লাখ টিকা পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বাংলাদেশ তাদের উৎপাদন খরচ দিতে অনিচ্ছুক হওয়ায় অনিশ্চয়তায় পড়েছে চুক্তি। ফলে জরুরি সরবরাহের প্রয়োজনে প্রতিবেশী ভারতের দ্বারস্থ হয়েছে বাংলাদেশ। উপহার হিসেবেও বাংলাদেশকে টিকা দিচ্ছে ভারত।

এদিকে চীন বিনামূল্যে পাঁচ লাখ ডোজ টিকা উপহার দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়ায় দেশটিকে ধন্যবাদ দিয়েছে পাকিস্তান। চলতি মাসের শেষদিকে দেশটির টিকা কার্যক্রম শুরু হবে। চীনের কৌশলগত ঘনিষ্ঠ মিত্র ও সব পরিস্থিতির বন্ধু ভারতের চিরবৈরী পাকিস্তান। তাই নয়াদিল্লির টিকা গ্রহীতাদের তালিকাতেও ইসলামাবাদের নাম অনুপস্থিত।

অন্যদিকে শ্রীলংকা, নেপাল ও মালদ্বীপের মতো দেশগুলোতে চীনা বিনিয়োগের গতির সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে ভারত। যদিও এসব দেশে অর্থনৈতিক প্রকল্প বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়িটিভের অংশ হিসেবে বন্দর, সড়ক ও বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করেছে চীনারা। তবে মহামারী বিপর্যস্ত দেশগুলো এখন টিকার জন্যেই বেশী মরিয়া।
বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের উপাত্ত বলছে, সীমান্ত বন্ধ করে দেয়া ও জনসমাগম নিষিদ্ধ হওয়ায় বৈশ্বিক পর্যটন খাতে মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। ২০২০ সালে এক লাখ ৩০ হাজার কোটি ডলার ক্ষতির মুখে পড়েছে এই খাত। অথচ ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির টিকা সরবরাহের প্রস্তাবে অনেক দেশের চীনের মুখাপেক্ষীতায় ভাটা পড়েছে।

ভারতের সরকারের এক সূত্র জানা গেছে, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে প্রথম দফায় এক কোটি থেকে দুই কোটি টিকা প্রতিবেশীদের মাঝে বিতরণের কথা ভাবছে দেশটি। কোনো কোনো দেশে স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ এবং টিকাদান কর্মসূচির অবকাঠামো স্থাপনেও সহায়তা দিচ্ছে ভারত।

এক সাক্ষাৎকারে সাবেক ভারতীয় রাষ্ট্রদূত রাজিব ভাটিয়া জানান, ‘প্রতিবেশীর অগ্রাধিকারই প্রথম’ নীতিতেই কাজ করছে ভারত সরকার। এই টিকা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে ভারতের শক্তিমত্তার কথা জানান দেয়।”

জিন্দাল স্কুল অব আন্তর্জাতিক অ্যাফেয়ার্সের ডিন শ্রীরাম চৌলিয়া বলেন, “সামরিক ও অর্থনৈতিকভাবে ভারতকে ছাপিয়ে যেতে পারে চীন। তবে ওষুধ উৎপাদন ও সাশ্রয়ী স্বাস্থ্যসেবায় প্রতিবেশীর চেয়ে এগিয়ে আছে ভারত।  সংকট সৃষ্টি না করে সমাধানের মাধ্যমে বিশ্বের নেতৃত্ব দিতে চায় ভারত।”

বিশ্বে সবচেয়ে বড় ঔষধ উৎপাদনকারী দেশ ভারত, বৈশ্বিক টিকা চাহিদার ৬২ শতাংশ পূরণ করতে যাচ্ছে। মহামারী শুরু পর থেকে বিভিন্ন দেশের ওষুধ সরবরাহেও এগিয়ে ছিল তারা। দেশে দেশে হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন আর ব্যথানাশক ঔষধ পাঠিয়েছে ভারত।

এমন পরিস্থিতিতে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া মহামারীতে যখন লাখ লাখ মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে তখন ভারতের টিকানীতি চীনের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়াচ্ছে। অর্থনীতি সমরনীতিতে না পারলেও টিকার কূটনীতিতে চীনকে ছাপিয়ে যেতে চাচ্ছে ভারত।

তথ্যসূত্র: রয়টার্স, বিবিসি ও ইন্টারনেট

আরও পড়ুন