• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৩ মে, ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুলাই ১৫, ২০২১, ১২:৩৮ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুলাই ১৫, ২০২১, ১২:৩৮ পিএম

কারফিউ ও করোনায় হ-য-ব-র-ল মিয়ানমার

কারফিউ ও করোনায় হ-য-ব-র-ল মিয়ানমার
মাস্ক পরে অক্সিজেন রিফিলের জন্য অপেক্ষা করছেন মিয়ানমারের একজন বাসিন্দা। ছবি: এএফপি

মিয়ানমারে সম্প্রতি করোনার সংক্রমণ আবারও বেড়েছে। করোনার রোগী বেড়ে যাওয়ায় সেনাশাসিত দেশটিতে অক্সিজেনের সংকট দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি।

এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়, মিয়ানমারের বড় শহর ইয়াঙ্গুনে কারফিউ উপেক্ষা করে মানুষজনকে তাঁদের প্রিয়জনদের বাঁচানোর জন্য হন্যে হয়ে অক্সিজেন সিলিন্ডার খুঁজতে দেখা গেছে।

বুধবার ইয়াঙ্গুনে সকাল হওয়ার পরই সেখানে শত শত মানুষকে অক্সিজেন রিফিল করানোর জন্য লাইন ধরে থাকতে দেখা গেছে। তাঁদের মধ্যে অনেকেই দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকতে হবে বলে বাড়ি থেকে চেয়ার-টুল নিয়ে এসেছিলেন, যাতে একটু আরাম করা যায়। অনেকেই আবার প্রিয়জনদের জন্য অক্সিজেনের জোগাড় করতে পারেননি। 

থান জাও উইন নামের এক বাসিন্দা এএফপিকে বলেন, ‘আমার বোন তিন দিন ধরে করোনায় আক্রান্ত। প্রথম দিনে সে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। পরের দিন থেকে সে নিশ্বাস নিতে পারছিল না। কিন্তু যখন আমি আজ সকালে অক্সিজেন  নিতে আসি, আমার ভাগনি আমাকে ফোন করে জানান যে আমার বোন মারা গেছে।’

গতকাল বুধবারও মিয়ানমারে সাত হাজারের বেশি করোনা রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। গত মে মাসের শুরুর দিকেও মিয়ানমারে প্রতিদিন ৫০ জনের মতো করোনার রোগী শনাক্ত হয়েছে।

মিয়ানমারের বড় শহর ইয়াঙ্গুন এবং মান্ডালেতে জনগণকে ঘরের বাইরে বের না হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবুও মিয়ানমারে করোনার সংক্রমণ এবং মৃত্যু বেড়েই চলছে। স্বেচ্ছাসেবকেরাই করোনা আক্রান্ত এবং মৃতদের সহায়তায় এগিয়ে আসছেন।

ইয়া কিউ মো নামের মিয়ানমারের একজন নাবিক জানিয়েছেন, তিনি অক্সিজেনের লাইনে জায়গা পেতে সামরিক বাহিনী দ্বারা আরোপিত কারফিউ শুরু হওয়ার আধ ঘণ্টা আগে, অর্থাৎ ভোররাত তিনটায় অক্সিজেনের জন্য লাইনে দাঁড়াতে এসেছেন। তবে ততক্ষণে তাঁর সামনে ১৪ জন ছিল।

এএফপিকে মো বলেন, ‘আমি সারা রাত ঘুমাতে পারিনি। কারফিউ নিয়ে আমাকে সতর্ক থাকতে হয়েছিল। মিয়ানমারের সেনা সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তাদের কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণ অক্সিজেন রয়েছে।’

মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল নিউ লাইট অব মিয়ানমারের একটি সংবাদে জান্তা সরকার এমন দাবি করে।

মিয়ানমারের সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লাইং বলেন, জনগণকে এ নিয়ে চিন্তা করতে হবে এবং তাদের গুজব ছড়ানো উচিত হবে না।

তবে হ্লাইংয়ের এ দাবি মানতে রাজি নন ইয়াঙ্গুনের বাসিন্দা থান জাও উইন। তিনি বলেন, ‘পর্যাপ্ত অক্সিজেন থাকলে আমার বোনকে হারাতে হতো না।’

মিয়ানমারে টিকাদান কর্মসূচিও ঝিমিয়ে পড়েছে। জান্তা সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, দেশটিতে ৫ কোটি ৪০ লাখ মানুষের মধ্যে মাত্র ১৭ লাখ ৫০ হাজার মানুষ করোনার ভ্যাকসিন পেয়েছেন।

মিয়ানমারবিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ দূত টম অ্যান্ড্রুজ বলেন, সেনাদের ওপর ব্যাপক অবিশ্বাসের কারণে এই সংকট তৈরি হয়েছে।

মিয়ানমারে করোনার সংক্রমণ বাড়ায় মানবিক কর্মীদের ওপরও চাপ বেড়েছে। এ নিয়ে মিয়ানমার রেডক্রসের একজন মুখপাত্র এএফপিকে বলেন, ‘কর্মীদের জন্য মিয়ানমারের পরিস্থিতি প্রতিনিয়তই চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়াচ্ছে।’

অং কিয়াউ নামের একজন তাঁর স্ত্রীর জন্য ইয়াঙ্গুনে অক্সিজেন পেতে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। তিনি জানান, শেষবার ৪০ লিটার অক্সিজেনের সিলিন্ডার রিফিল করতে তাঁকে ২৪ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছিল।

অং কিয়াউ বলেন, ‘শহরের বিভিন্ন স্থান ঘুরে অক্সিজেন সিলিন্ডার রিফিল করার সামর্থ্য আমার নেই। সুতরাং আমি অপেক্ষা করেছি।’

জাগরণ/এমএইচ
 

আরও পড়ুন