• ঢাকা
  • বুধবার, ০১ মে, ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুলাই ৩১, ২০২১, ০৮:৩৫ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুলাই ৩১, ২০২১, ০৮:৩৫ পিএম

আফগানিস্তান পরিস্থিতি

৩ প্রধান শহরে সেনা-তালেবান তুমুল লড়াই চলছে

৩ প্রধান শহরে সেনা-তালেবান তুমুল লড়াই চলছে

সরকারি বাহিনীর কাছ থেকে নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টায় আফগানিস্তানের দক্ষিণ এবং পশ্চিমাঞ্চলের তিনটি প্রধান শহরে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র তালেবান যোদ্ধাদের তুমুল লড়াই চলছে। শনিবারের অনলাইন প্রতিবেদনে এই খবর জানিয়েছে বিবিসি।

তালেবানরা কান্দাহার, হেরাত ও লস্কর গাহ শহরের অংশে ঢুকে পড়েছে। দুই পক্ষের তুমুল লড়াই চলছে। আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে বিদেশি সেনাদের আফগানিস্তান ছাড়ার ঘোষণা আসার পর তালেবান ক্রমশ গ্রামীণ এলাকাগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছে।

তবে দেশটির প্রধান শহরগুলোর ভাগ্য নিয়ে ভীষণ উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। উভয়পক্ষ নিয়ন্ত্রণ নিজেদের দখলে নিতে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে সরকারি সেনারা কতদিন নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে পারবে সেটাই বড় প্রশ্ন। স্থানীয়রাও বাড়িঘর ছেড়ে পালাচ্ছেন।

বিবিসি বলছে, তালেবান মিলিশিয়ারা ইতোমধ্যে অর্ধেক আফগানিস্তান নিজেদের দখলে নিয়েছে। এর মধ্যে প্রতিবেশী দুই দেশ পাকিস্তান ও ইরানের সঙ্গে ‌‘বর্ডার ক্রসিং’ রয়েছে। তবে তালেবান অবশ্য দেশের ৯০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার দাবি করছে।

শনিবার তুমুল লড়াই চলা কান্দাহারের একজন সংসদ সদস্য (এমপি) বিবিসিকে বলেছেন, ভয়াবহ এক ঝুঁকির মুখে আছে তার শহর। ইতোমধ্যে হাজার হাজার মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে বাস্তচ্যুত হয়েছে। দরজায় কড়া নাড়ছে বড় এক মানবিক বিপর্যয়।

গুল আহমাদ কামিন নামে ওই এমপি বলছেন, প্রতি ঘণ্টায় পরিস্থিতির আরও অবনতি হচ্ছে এবং শহরের মধ্যে উভয়পক্ষের মধ্যে যেভাবে লড়াই চলছে, গত বিশ বছরে কান্দাহারে এমন সংঘর্ষ দেখা যায়নি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে।

এমপি বলছেন, তালেবানের প্রধান মনযোগ এখন কান্দাহার দখল। কারণ কান্দাহারকে তারা তাদের অস্থায়ী রাজধানী করতে চায়। যদি কান্দাহারের নিয়ন্ত্রণ পায় তাহলে এই অঞ্চলের আরও ৫ থেকে ৬টি প্রদেশের দখলও তালেবানের হাতে চলে যাবে।

শহরটির চারপাশে তালেবান যোদ্ধারা অবস্থান নিয়েছে। তালেবান পূর্ণ শক্তি নিয়ে কান্দাহারে ঢোকার চেষ্টা করলে সরকারি বাহিনীর পক্ষে প্রয়োজনীয় অস্ত্র ও গোলা-বারুদের ব্যবহার করা সম্ভব হবে না। শহরটি জনবহুল হওয়ায় সরকারি সেনারা এটা করতে পারবে না।

এদিকে আফগানিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত দেশটির অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ শহর হেরাতে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ চলছে। দেশটির সংবাদমাধ্যম টোলো নিউজের এক প্রতিবেদক বলছেন, দুই পক্ষের মধ্যে লড়াই-সংঘর্ষ আরও জোরালো হয়েছে।

আরও অন্তত পাঁচটি পৃথক স্থানে লড়াইয়ের খবর পাওয়া যাচ্ছে। এদিকে আফগান বাহিনীকে সহায়তায় এখনো তালেবান যোদ্ধাদের লক্ষ্য করে যুক্তরাষ্ট্র বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। বিমান হামলা চালিয়ে বিমানবন্দরের পাশের একটি জেলা পুনরায় দখলও করেছে তারা।

এছাড়া শুক্রবার হেরাতে জাতিসংঘের প্রধান একটি স্থাপনায় ‘সরকারবিরোধীদের’ হামলায় এক নিরাপত্তারক্ষী নিহত হয়েছেন। দেশটিতে জাতিসংঘ সহকারী আবাসিক প্রধান বলছেন, রকেটচালিত গ্রেনেড হামলা ও গুলি চালানো হয় হেরাতের জাতিসংঘ কম্পাউন্ডে।

তালেবান যোদ্ধারা হেরাত শহরের অনেকখানি ভেতরে প্রবেশের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এই আক্রমণ করা হয়। অবশ্য হামলায় জাতিসংঘের কোনো কর্মকর্তা হতাহত হননি। ওই সময় জাতিসংঘ দফতরটির কাছে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে তালেবানদের তীব্র লড়াই চলছিল।

বাসিন্দারা বলছেন, শহরের কিছু অংশ এখনো নিরাপদ রয়েছে এবং কিছু মানুষ অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। শহর রক্ষায় সশস্ত্র প্রতিরোধ আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছে আশির দশকে সোভিয়েত বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করা এক কমান্ডার।

এদিকে দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশ হেলমান্দের রাজধানী লস্কর গাহ শহরের কেন্দ্র থেকে দুই কিলোমিটারের মধ্যে সরকারির বাহিনীর সেনাদের সঙ্গে তালেবান যোদ্ধাদের লড়াই চলছে। যদিও গতকাল রাতজুড়ে অভিযান চালিয়ে শহরের দখল ফিরিয়ে নিয়েছিল সরকারি বাহিনী।

আফগান বাহিনীর কমান্ডার বলছেন, তাদের শক্ত প্রতিরোধ ও পাল্টা অভিযানে তালেবানদের ব্যাপক প্রাণহানি হয়েছে। স্থানীয় সুত্রগুলো বিবিসিকে জানিয়েছে, সরকারির বাহিনীর পাল্টা আক্রমণের আগে শুক্রবার গভর্নরের কার্যালয়ের কাছে পৌঁছে গিয়েছে তালেবান।

জাগরণ/এসকে