• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: এপ্রিল ১৪, ২০১৯, ০৭:৩৪ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : এপ্রিল ১৫, ২০১৯, ০১:৩৬ এএম

রমনা বটমূলে হামলার মামলা শুনানির জন্য হাইকোর্টের কার্যতালিকায়

রমনা বটমূলে হামলার মামলা শুনানির জন্য হাইকোর্টের কার্যতালিকায়
ফাইল ফটো

রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে ২০০১ সালের বোমা হামলার ঘটনায় মামলার ডেথ রেফারেন্স শুনানির জন্য হাইকোর্টের কার্যতালিকায় এসেছে। ডেপুটি এটর্নি জেনারেল মোঃ মনিরুজ্জামান দৈনিক জাগরণকে আজ রোববার এই তথ্য জানান। 

এর মধ্যে ২০১৪ সালে হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেছিল বিচারিক আদালত। ওই রায়ে আটজনকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেয়া হয়। নিয়ম অনুসারে নিম্ন আদালতের দেয়া মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর করার জন্য উচ্চ আদালতের অনুমোদন পেতে (ডেথ রেফেরেন্স) তা হাইকোর্টে আসে। তবে এ পর্যন্ত হাইকোর্টে মামলাটির শুনানিই শুরু হয়নি।

মামলাটি বর্তমানে বিচারপতি মোঃ রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি এ, এস, এম আব্দুল মোবিনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানির অপেক্ষায় আছে। বেঞ্চে রাষ্ট্রপক্ষের দায়িত্বপ্রাপ্ত ডেপুটি এটর্নি জেনারেল মোঃ মনিরুজ্জামান দৈনিক জাগরণকে বলেন, মামলাটি বর্তমানে এই বেঞ্চের আগামীকাল সোমবারের কার্যতালিকায় (কজলিস্ট) ২৪ নম্বরে আছে।

এক প্রশ্নের জবাবে আইনজীবী জানান, কার্যতালিকায় মামলাগুলো ক্রমান্বয়ে উপরের দিকে এগিয়ে আসে। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ২০১২ সালের পর বর্তমানে ২০১৩ সালের ডেথ রেফারেন্সের মামলাগুলো ক্রমান্বয়ে শুনছে আদালত। রমনার বটমূলে বোমা হামলার মামলাটির ডেথ রেফারেন্স এসেছে ২০১৪ সালে।

মামলাসূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ২৩ জুন বিচারিক আদালত হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করে। এরপর ডেথ রেফারেন্স এবং আসামিদের জেল আপিল ও ফৌজদারি আপিলের শুনানির জন্য মামলাটি হাইকোর্টে আসে। এরপর বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি শহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে ডেথ রেফারেন্স শুনানির শেষ পর্যায়ে আসার পর আদালতের এখতিয়ার পরিবর্তন হয়। এরপর মামলাটি পাঠানো হয় হাইকোর্টের বিচারপতি মোঃ রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে। ওই বেঞ্চেও মামলাটির নিস্পত্তি হয়নি। বর্তমানে মামলাটি বিচারপতি মোঃ রুহুল কুদ্দুসের নেতৃত্বে অন্য বেঞ্চে আছে।

মামলাটি হাইকোর্টের এক বেঞ্চে শুনানি শেষ পর্যায়ে এসে আবার অন্য বেঞ্চে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে মো. মনিরুজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, মামলাটির শুনানি নতুনভাবে হবে। শুনানির জন্য কার্যতালিকায় রয়েছে। তাই যে কোনোদিনই চাঞ্চল্যকর এই মামলার শুনানি শুরু হতে পারে। যদিও এরপর আরও একবছর কেটে গেলেও শুনানি শুরু হয়নি।

মামলার নথি সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ২৩ জুন ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ রুহুল আমিন বোমা হামলার ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে আটজনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্তরা হলো— মুফতি আবদুল হান্নান, মাওলানা আকবর হোসেন, আরিফ হাসান সুমন, মাওলানা তাজউদ্দিন, হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর, মাওলানা আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার, মাওলানা আবদুল হাই ও মাওলানা শফিকুর রহমান। এছাড়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ছয় আসামি হলেন— শাহাদাত উল্লাহ জুয়েল, মাওলানা সাব্বির, শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, মাওলানা আবদুর রউফ, মাওলানা ইয়াহিয়া ও মাওলানা আবু তাহের।

মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রাপ্ত আটজনের প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানাও করা হয়েছে রায়ে। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ প্রাপ্তদেরও একই অর্থদণ্ড দেয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত, পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠান ‘ইসলামবিরোধী’ বিবেচনা করে ২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল রমনা বটমূলে বর্ষবরণে বোমা হামলা চালানো হয়। হামলায় ঘটনাস্থলেই নয়জনের মৃত্যু হয়। পরে হাসপাতালে মারা যায় একজন। এ ঘটনায় রাজধানীর নীলক্ষেত পুলিশ ফাঁড়ির সার্জেন্ট অমল চন্দ্র ওই দিনই রমনা থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা করেন। ঘটনার প্রায় আট বছর পর ১৪ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। আলোচিত এ মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা বারবার পরিবর্তন, সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল, বারবার তাগিদ দেয়া সত্ত্বেও তদন্ত কর্মকর্তাদের আদালতে সাক্ষ্য দিতে না আসার কারণে বিচার শুরু হতে দেরি হয়। পর্যায়ক্রমে থানা, ডিবি ও সিআইডি পুলিশে মামলার তদন্তে যায়। মামলার অষ্টম তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক আবু হেনা মো. ইউসুফ ২০০৮ সালের ৩০ নভেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। দুটি মামলারই অভিযোগপত্র একসঙ্গে দাখিল করা হয়। পরে বিচারের জন্য মামলা দুটি ২০০৯ সালের ১ জানুয়ারি ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে যায়। ওই আদালতে একই বছরের ১৬ এপ্রিল পৃথক মামলা দুটিতে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং সেলের সিদ্ধান্তে হত্যা মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৩ এবং বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এ পাঠানো হয়। বিস্ফোরক আইনের মামলাটি এখনো বিচারিক আদালতেই আছে।

এমএ/এসএইচএস