• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুন ২০, ২০১৯, ০৮:৩৮ এএম
সর্বশেষ আপডেট : জুন ২০, ২০১৯, ০৮:৪৮ এএম

হ্যাটট্রিক ক্রমাবনতির পর কিছুটা বেড়েছে দেওয়ানি মামলা নিষ্পত্তি 

হ্যাটট্রিক ক্রমাবনতির পর কিছুটা বেড়েছে দেওয়ানি মামলা নিষ্পত্তি 


সারাদেশে অধস্তন আদালতে দেওয়ানী মামলা নিষ্পত্তির পরিমাণ ২০১৮ সালে কিছুটা বেড়েছে। টানা তিন বছর ক্রমান্বয়ে দেওয়ানি মামলা নিষ্পত্তির সংখ্যায় হ্যাটট্রিক ক্রমাবনতি হওয়ার পর চতুর্থ বছরে গিয়ে তা কিছুটা বাড়লো।

অধস্তন আদালতের মামলা নিষ্পত্তি হওয়ার পরিসংখ্যান দিয়ে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ থেকে প্রস্তুত করা এক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে আসে। ২০০৮ সাল থেকে ২০১৮ সালের মামলার পরিসংখ্যান দিয়ে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়।

এর পরিপ্রেক্ষিতে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র মোহাম্মদ সাইফুর রহমান দৈনিক জাগরণকে বলেন, কয়েকটি উদ্যোগের ফলে মামলা নিষ্পত্তিতে ইতিবাচক এই পরিবর্তন এসেছে। এগুলো হলো, প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন দায়িত্ব নেয়ার পর আদালতের পূর্ণ কর্মঘণ্টা কাজে লাগাতে সার্কুলার জারির আদেশ দেন। ওই সার্কুলার জারির পর বিচারকরা  আগের চেয়ে বেশি সময় দেন বিচার কাজে। যার ফলে নিষ্পত্তিতে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে।

সুপ্রিম কোর্টের এই বিশেষ কর্মকর্তা আরও জানান, বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সবাইকে ল্যাপটপ দেয়া হয়েছে। দপ্তরেতো ডেস্কটপ আছেই। তথ্য প্রযুক্তির সুবিধা কাজে লাগানোর কারণেও মামলা নিষ্পত্তি আগের চেয়ে বেশি হচ্ছে। 

এছাড়া বিচারিক কর্মকর্তাদের  জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। বলেন, অধস্তন আদালতের বিচারকদের দুই দেশে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের উদ্যোগে আমাদের বিচারকদের ভারতের ভূপালে প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানো হয়। তাছাড়া আইন মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে অস্ট্রেলিয়ায় পাঠিয়েও বিচারকদের  প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ফলে প্রশিক্ষিত হয়ে মামলা নিষ্পত্তির হার বাড়াতে ভূমিকা রাখছেন বিচারকরা।

তাছাড়া প্রতিটি জেলায় জেলা জজের নেতৃত্বে কেইস মেনেজমেন্ট কমিটি কাজ করাছে। কমিটির কার্যক্রম মনিটর করছে সুপ্রিম কোর্ট। এর পরিপ্রেক্ষিতে আবার কমিটিকে দিক নির্দেশনা দিচ্ছে সুপ্রিম কোর্ট। এমনকি প্রয়োজন হলে কোন বিচারকের মামলা নিষ্পত্তির হার কম হলে আলাদাভাবে তার সুযোগ / সুবিধা জেনে তাকেও পরামর্শ দিচ্ছে সুপ্রিম কোর্ট। ফলে মামলা নিষ্পত্তির হার বাড়ছে সারাদেশে।

প্রতিবেদন অনুসারে এই সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মামলা নিষ্পত্তি হয় ২০১৪ সালে। ওই বছর মামলা নিষ্পত্তি হয় তিন লাখ ২০ হাজার ৮৩০টি। পরের তিন বছর ২০১৫, ২০১৬, ২০১৭ ও ২০১৮ সালে মামলা নিষ্পত্তির সংখ্যা যথাক্রমে দুই লাখ ৬৬ হাজার ১৩১, দুই লাখ ২৪ হাজার ৯০০,  দুই লাখ ১৭ হাজার ৬৪০ ও দুই লাখ ২৯ হাজার ৫৭৬টি।

তাছাড়া ২০০৮ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত মামলা নিষ্পত্তির পরিমাণ ছিল যথাক্রমে এক লাখ ১১ হাজার ২১২, এক লাখ ১৮ হাজার ৯৬৪, এক লাখ ৭১ হাজার ৮৮৬, ৪৯ হাজার ৬৮, ৬০ হাজার ২৭৩ ও দুই লাখ ৩৬ হাজার ৩৯৯টি।

এই সময়ে ২০০৮ সালে প্রারম্ভিক মামলার সংখ্যা ছিল চার লাখ ৬৫ হাজার ১৮৯টি। ওই বছর মামলা দায়ের ও / প্রাপ্তি হয় মোট এক লাখ ৬৯ হাজার ৪৭৩টি। ফলে মোট মামলা হয় ছয় লাখ ৩৪ হাজার ৬৬২টি। আর বদলি হয় সাত হাজার ১২৪টি মামলা। এছাড়া নিষ্পত্তি হওয়া মামলা বাদ দিয়ে ওই বছর শেষে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা দাঁড়ায় পাঁচ লাখ ১৬ হাজার ৩২৬টি। যা ২০০৯ সালের প্রারম্ভিক মামলা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়।

পরের বছর ২০০৯ সালে মামলা দায়ের ও / প্রাপ্তি হয় দুই লাখ ১০ হাজার ৮০৬টি। এতে মোট মামলার সংখ্যা হয় সাত লাখ ২৭ হাজার ১৩২টি। বদলি হয় এক হাজার ১৪৬টি মামলা। বছর শেষে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা বা ২০১০ সালের প্রারম্ভিক মামলার সংখ্যা দাঁড়ায় ছয় লাখ সাত হাজার ২২টি মামলা।

২০১০ সালে মামলা দায়ের ও / প্রাপ্তি হয় দুই লাখ ১৫ হাজার ৭১৪টি। বদলি হয় ছয় হাজার ১৭৯টি মামলা। নিষ্পত্তি হওয়া মামলা বাদ দিয়ে বছর শেষে ২০১১ সালের জন্য প্রারম্ভিক মামলার সংখ্যা দাঁড়ায় ছয় লাখ ৪৪ হাজার ৬৭১টি মামলা।

২০১১ সালে মামলা দায়ের ও / প্রাপ্তি এক লাখ ১২ হাজার ২৬১টি। বদলি হয়ে কমে যায় ৩৯১টি মামলা। নিষ্পত্তি হওয়া মামলা বাদ দিয়ে বছর শেষে পরের বছর ২০১২ সালের জন্য প্রারম্ভিক মামলার সংখ্যা দাঁড়ায় সাত লাখ সাত হাজার ৪৭৩টি।

ওই বছর নতুন মামলা দায়ের ও / প্রাপ্তি দুই লাখ ২৩ হাজার ৬২৪টি। বদলি হয় ৩৬১টি মামলা। নিষ্পত্তি হওয়া মামলা বাদে বছর শেষে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা দাঁড়ায় আট লাখ ৭০ হাজার ৪৬৩টি। যা পরের বছর ২০১৩ সালের পয়লা জানুয়ারির প্রারম্ভিক মামলার সংখ্যা হিসেবে দেখানো হয়।

২০১৩ সালে নতুন মামলা দায়ের ও / প্রাপ্তি হয় চার লাখ ৩৬ হাজার ৭০৬টি, ওই বছর মামলা বদলি হয় বায়ান্ন হাজার ১৬০টি। নিষ্পত্তি হওয়া মামলার বাদ দিয়ে বছর শেষ বিচারাধীন মামলার সংখ্যা দাঁড়ায় ১০ লাখ ১৮ হাজার ৬১০টি। এটি পরের বছর ২০১৪ সালের প্রারম্ভিক মামলার সংখ্যা।

২০১৪ সালে মামলা দায়ের ও / প্রাপ্তি হয় চার লাখ ৩০ হাজার ৯৩৪টি। ওই বছর বদলি হয় নয় (৯) হাজার ৫১০টি। সারা বছর নিষ্পত্তি হওয়া মামলা বাদ দেয়ার পর বিচারাধীন মামলার সংখ্যা দাঁড়ায় ১১ লাখ ১৯ হাজার ২০৪টি।

২০১৫ সালে প্রারম্ভিক এই সংখ্যা নিয়ে শুরু করার পর সারা বছরে আর তিন লাখ ৩৩ হাজার ৬৩৯টি মামলা নতুন দায়ের ও / প্রাপ্তি হয়। এছাড়া বদলি হয় ২৫০টি মামলা। নিষ্পত্তি হওয়া মামলা বাদ দেয়ার পর মামলার বিচারাধীন মামলার সংখ্যা দাঁড়ায় ১১ লাখ ৮৬ হাজার ৪৬২টি।

২০১৬ সালে ১১ লাখ ৮৬ হাজার ৪৬২টি প্রারম্ভিক মামলার সঙ্গে সারা বছরে দুই লাখ ৪৩ হাজার ৮৪১টি মামলা নতুন করে দায়ের ও / প্রাপ্তি হয়। তাছাড়া বদলি হয় ১৪৯টি মামলা। নিষ্পত্তি হওয়া মামলা বাদ দেয়ার পর বছর শেষে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা দাঁড়ায় ১২ লাখ পাঁচ হাজার ২৫৪টি।

তবে ২০১৭ সালে মামলার প্রারম্ভিক সংখ্যা প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে ১২ লাখ ২১ হাজার ৩৯টি। যা ২০১৬ সালের শেষ দিনের বিচারাধীন মামলার সংখ্যার চেয়ে বেশি। এই বিষয়ে একটি নোট দেয়া হয়েছে প্রতিবেদনে। যাতে বলা হয়েছে, ‘২০১৬ খ্রিস্টাব্দে শ্রম আপীল ট্রাইব্যুনাল, শ্রম আদালত, পরিবেশ আপীল আদালত ও পরিবশে আদালত হতে মামলার তথ্য ভুলবশত সংগৃহীত হয় নাই। পরবর্তীতে ২০১৭ খ্রিস্টাব্দে উক্ত আদালত সমূহ হতে মামলার তথ্য সংগৃহীত হওয়ায় ২০১৬ খ্রিস্টাব্দে বিচারাধীন মামলার চেয়ে ২০১৭ খ্রিস্টাব্দের প্রারম্ভিক জের-এ বিচারাধীন মামলার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।)

২০১৭ সালে নতুন মামলা দায়ের ও / প্রাপ্তি হয় তিন লাখ ২৫ হাজার ৮৪৫টি। বদলি হয় ৪৯ হাজার ৬৬৪টি। নিষ্পত্তি হওয়া মামলা বাদ দেয়ার পর বছর শেষে পরবর্তী বছর ২০১৮ সালের জন্য প্রারম্ভিক মামলার সংখ্যা দাঁড়ায় ১২ লাখ ৭৯ হাজার ৫৮০টি।

ওই বছর নতুন মামলা দায়ের ও / প্রাপ্তি হয় তিন লাখ ১০ হাজার ৮১৬টি। বদলি হয় ৩৯ হাজার ৭৮২টি। নিষ্পত্তি হওয়া মামলা বাদ দেয়ার পর বিচারাধীন মামলার সংখ্যা দাঁড়ায় ১৩ লাখ ২১ হাজার ৩৮টি। যা চলতি ২০১৯ সালে যা প্রারম্ভিক মামলা হিসেবে সামনে আসে।

এমএ/আরআই