• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: নভেম্বর ১৫, ২০১৯, ০৭:৪৫ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : নভেম্বর ১৫, ২০১৯, ০৭:৪৯ পিএম

পাওনা সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকা

গ্রামীণফোন-বিটিআরসি : কোন পক্ষ কী বলছে

গ্রামীণফোন-বিটিআরসি :  কোন পক্ষ কী বলছে

বেসরকারি মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোনের কাছে টেলিযোগাযোগ খাতের সরকারি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) পাওনা সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকারও বেশি। এর মধ্যে মাত্র ২শ কোটি টাকা দিতে রাজি গ্রামীণফোন। শতাংশের হিসাবে যা ১ দশমিক ৬ শতাংশেরও কম।

তবে বিটিআরসির আইনজীবী অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম চান গ্রামীণফোনকে তার দেনা ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকার পুরোই পরিশোধ করতে হবে।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে গ্রামীণফোনের অন্যতম আইনজীবী এ এম আমিন উদ্দিন আজ শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) দৈনিক জাগরণকে বলেন, আমরা এখন ২০০ কোটি টাকা দিতে রাজি হয়েছি, বিষয়টি তা নয়। শুনানিতে আগের একটা প্রস্তাব আপিল বিভাগ আমাদের মনে করিয়ে দিয়েছিল, এই আরকি।

বিষয়টি স্পষ্ট করে তিনি বলেন, ‘বিটিআরসির কাছে গ্রামীণফোনের দেনার বিষয়ে সরকারের দুই মন্ত্রীর সঙ্গে গ্রামীণফোনের আগে একটি বৈঠক হয়েছিল। সেখানে গ্রামীণফোন কিছু শর্ত দিয়ে বলেছিল, এই শর্তসপেক্ষে আমরা ২০০ কোটি টাকা দিতে রাজি। গতকাল বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) আপিল বেঞ্চে শুনানির সময় আদালত আমাদের স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলে যে, আপনারা (গ্রামীণফোন) ২০০ কোটি টাকা দেবেন বলেছিলেন। আদালতের এই কথার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বলেছি, টাকা যে দেব কাকে দেব? কোথায় দেব? কখন দেব? আমাদের তো শর্ত আছে।’

গতকাল শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আদালতকে বলেন, গ্রামীণফোনের কাছ থেকে বিটিআরসির পাওনা আদায়ের ওপর হাইকোর্টের দেয়া নিষেধাজ্ঞা আমরা স্থগিত চাই। পরে এ বিষয়ে শুনানি ও আদেশের জন্য আগমী ১৮ নভেম্বর দিন ধার্য করেছে আপিল বিভাগ।

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে ৬ বিচারপতির আপিল বেঞ্চে এই শুনানি হয়। আদালতে গ্রামীণফোনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এ এম আমিন উদ্দিন ও শেখ ফজলে নূর তাপস। আর বিটিআরসির পক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও খন্দকার রেজা-ই-রাকিব।

জানা গেছে, গত ৩ অক্টোবর অর্থমন্ত্রী ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রীর সঙ্গে গ্রামীণফোনের এক সমঝোতা বৈঠকে কয়েকটি প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। সেগুলো হলো-

১. দুই পক্ষ একটি কমিটি গঠন করে পাওনা পরীক্ষা অথবা পরীক্ষার পদ্ধতি বের করবে।

২. বিটিআরসি লাইসেন্স বাতিলের কারণ দর্শানোর নোটিশ ও নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করবে। আর অপারেটররা মামলা প্রত্যাহারের পদক্ষেপ নেবে।

৩. অর্থমন্ত্রী, টেলিযোগাযোগমন্ত্রী, এনবিআর ও বিটিআরসির চেয়ারম্যান কমিটির কার্যক্রম পর্যবেক্ষণে রাখবেন।

৪. কমিটি গঠন ও কমিটির কাজ শুরুর আগে আগামী ৭ দিনের মধ্যে গ্রামীণফোন ১০০ কোটি ও পরের এক মাসের মধ্যে ১০০ কোটি টাকা বিটিআরসিকে দেবে।

৫. এসব প্রস্তাব দুই অপারেটর তাদের যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে পর্যালোচনা ও অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করবে।

শুনানিতে গ্রামীণফোনের আইনজীবী ফজলে নূর তাপস বলেন, গত ৩ অক্টোবর অর্থ মন্ত্রণালয় এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বসে আমরা কিছু শর্ত দিয়েছি। তারা শর্তগুলো মানলে আমরা ২০০ কোটি টাকা দিতে রাজি আছি। আর বিটিআরসির আইনজীবী অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আদালতের কাছে গ্রামীণফোনের কাছে পাওনা পুরো টাকা আদায়ের ওপর হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞার আদেশ স্থগিত চেয়েছেন।

অবশ্য আদালত থেকে বের হওয়ার পর বিটিআরসির আরেক আইনজীবী খোন্দকার রেজা-ই রাব্বী সাংবাদিকদের বলেন, অর্ধেক টাকা দিতে সম্মত হলে আমরা আলোচনায় বসতে রাজি আছি। পরে এ বিষয়ে আদালত আদেশের জন্য আগামী সোমবার দিন নির্ধারণ করেছে।

হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে বিটিআরসির লিভ টু আপিলের শুনানি নিয়ে গত ২৪ অক্টোবর গ্রামীণফোন ন্যূনতম কত টাকা দিতে পারবে তা জানতে চেয়ে ৩১ অক্টোবর আদেশের জন্য রেখেছিল আপিল বিভাগ। কিন্তু সেই হিসাব গ্রামীণফোন দিতে না পারায় দুই সপ্তাহ সময় নিয়েছিল।

এর আগে গত ২৪ অক্টোবর পুরো টাকার মধ্যে গ্রামীণফোন আপাতত বিটিআরসিকে কত টাকা দিতে পারবে তা জানাতে বলে আপিল বিভাগ। এরও আগে গত ১৭ অক্টোবর গ্রামীণফোনের কাছে বিটিআরসির পাওনা এই টাকা আদায়ের ওপর দুই মাসের অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা দেয় হাইকোর্ট।

বিচারপতি আবদুল হাকিম ও বিচারপতি ফাতেমা নজীবের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই আদেশ দেয়। পরে সেই আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করে বিটিআরসি।

এর আগে প্রায় ২৭টি খাতে ১২ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা দাবি করে গ্রামীণফোনকে গত ২ এপ্রিল চিঠি দেয় বিটিআরসি। এই চিঠির যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে অর্থ আদায়ের ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা চেয়ে গ্রামীণফোন নিম্ন আদালতে একটি মামলা করে। এরপর গত ২৮ আগস্ট নিম্ন আদালত গ্রামীণফোনের অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আবেদন নামঞ্জুর করে। পরে ওই আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করে গ্রামীণফোন। পরে ওই আপিলটি শুনানির জন্য গ্রহণ করে দুই মাসের জন্য গ্রামীণফোনের কাছ থেকে টাকা আদায়ে নিষেধাজ্ঞা দেয় উচ্চ আদালত।

এমএ/ এফসি

আরও পড়ুন