• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: নভেম্বর ২৮, ২০১৯, ১০:৩২ এএম
সর্বশেষ আপডেট : নভেম্বর ২৮, ২০১৯, ১০:৫৫ এএম

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা

খালেদার জামিন শুনানি শেষ, আদেশ ৫ ডিসেম্বর

খালেদার জামিন শুনানি শেষ, আদেশ ৫ ডিসেম্বর
বিএনপি চেয়ারপারসর খালেদা জিয়া-ফাইল ছবি

● মানবিক কারণে খালেদার জামিন চাই, আপিল শুনানিতে বিএনপির আইনজীবী

●  মিছিল-গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে : প্রধান বিচারপতি

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন বিষয়ে আদেশের জন্য ৫ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার) দিন ধার্য করেছে আপিল বিভাগ। এই সময়ের মধ্যে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। 

বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপিল বেঞ্চ শুনানি নিয়ে আদেশের জন্য এই দিন ধার্য করে। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের ছয় বিচারপতির আপিল বেঞ্চে এই শুনানি হয়।

রোববার (২৫ নভেম্বর) শুনানির দিন ধার্য থাকলেও আপিল বিভাগের সব সদস্য শুনবেন বলে বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) তারিখ ঠিক করেন প্রধান বিচারতি। হাইকোর্ট জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় জিয়ার জামিন আবেদন না মঞ্জুর করলে এর বিরুদ্ধে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে আবেদন করেন তার আইনজীবীরা। চেম্বার আদালত বিষয়টি শুনানির জন্য আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন।

খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন, মওদুদ আহমদ ও জয়নুল আবেদীন। দুদকের পক্ষে ছিলেন খুরশীদ আলম খান।

১৭ নভেম্বর (রোববার) এ আবেদন উপস্থাপনের পর আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান শুনানির জন্য ২৫ নভেম্বর (সোমবার) পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠানোর আদেশ দেন।

১৪ নভেম্বর (বৃহস্পতিবার) সুপ্রিমকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় কারাবন্দি সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে এ আবেদন করেন অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড জয়নুল আবেদীন তুহিন। তার সঙ্গে ছিলেন বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল।

৩১ জুলাই (বৃহস্পতিবার) দুর্নীতির মামলায় অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন সরাসরি খারিজ করেন হাইকোর্ট।

২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছর কারাদণ্ড পেয়ে বন্দি রয়েছেন খালেদা জিয়া। আপিলের পর হাইকোর্টে যা বেড়ে ১০ বছর হয়। পরে ২০১৮ সালের ১৮ নভেম্বর খালাস চেয়ে আপিল বিভাগে খালেদা জিয়া জামিন আবেদন করেন। তবে সে আবেদন এখনও আদালতে উপস্থাপন করেননি তার আইনজীবীরা।

২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর (মঙ্গলবার) পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রশাসনিক ভবনের ৭ নম্বর কক্ষে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক মো. আখতারুজ্জামান (বর্তমানে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি) জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন। একইসঙ্গে তাকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়। একই সাজা হয়েছে মামলার অপর তিন আসামিরও।

খালেদা জিয়ার পাশাপাশি দণ্ডপ্রাপ্ত অপর তিন আসামি হলেন- সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার তৎকালীন রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছ চৌধুরীর তৎকালীন একান্ত সচিব জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরশনের সাবেক মেয়র সদ্যপ্রয়াত সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।

২০১৮ সালের ১৮ নভেম্বর হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এর বিরুদ্ধে আপিল করা হয়। এরপর চলতি বছর ৩০ এপ্রিল (মঙ্গলবার) জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ৭ বছরের দণ্ডের বিরুদ্ধে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে অর্থদণ্ড স্থগিত এবং সম্পত্তি জব্দ করার ওপর স্থিতাবস্থা দিয়ে দুই মাসের মধ্যে ওই মামলার নথি তলব করেছিলেন।

২০ জুন (বৃহস্পতিবার) বিচারিক আদালত থেকে মামলার নথি হাইকোর্টে পাঠানো হয়। ৩১ জুলাই (বুধবার) বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এসএম কুদ্দুস জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ তার জামিন আবেদন খারিজ করে দেন। পরে ১১ সেপ্টেম্বর (বুধবার) ফের জামিন আবেদন ফেরত দেন বিচারপতি ফরিদ আহমেদ ও বিচারপতি এ এস এম আবদুল মোবিনের হাইকোর্ট বেঞ্চ।

২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা করা হয়। ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে তিন কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগে মামলাটি করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

তদন্ত শেষে ২০১২ সালে খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় দুদক। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ খালেদাসহ চার আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। সাক্ষ্যগ্রহণ কার্যক্রম শেষ হলে দুদকের পক্ষে এই মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণা করা হয়। 

নিরাপত্তা জোরদার

শুনানিকে কেন্দ্র করে সুপ্রিমকোর্টের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। সকাল থেকেই সুপ্রিমকোর্টের প্রতিটি প্রবেশপথ ও আদালত চত্বরের অভ্যন্তরের বিভিন্ন স্থানে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়।

আর্চওয়ে এবং মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে তল্লাশি করে আইনজীবী, বিচারপ্রার্থী, সাংবাদিকসহ সংশ্লিষ্টদের আদালত চত্বরে প্রবেশ করানো হয়।

২৫ নভেম্বর (সোমবার) খালেদা জিয়ার এই জামিন আবেদনটি আপিল বিভাগে শুনানির জন্য এলে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ বলেন, এটি আমরা পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে (আপিল বিভাগের সাত বিচারপতি) শুনব। এরপর জামিন আবেদনের বিষয়টি শুনানির জন্য বৃহস্পতিবার দিন ধার্য করা হয়। তবে ওইদিন সুপ্রিম কোর্টে আজকের মত বাড়তি নিরাপত্তা ছিল না। তবে পরেরদিন গত মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের দিক থেকে আসা বিএনপির নেতা-কর্মীরা খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে হঠাৎ সুপ্রিম কোর্টের সামনের সড়কে অবস্থান নেন। তখন সুপ্রিম কোর্টের সবগুলো ফটক বন্ধ করে দেয়া হয়।

পরে পুলিশ নেতাকর্মীদের সরিয়ে দিতে লাঠিচার্জ ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। পুলিশের ধাওয়ায় বিএনপি নেতাকর্মীরা পালিয়ে যাওয়ার সময় রাস্তায় বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।

এমএ/এসএমএম

আরও পড়ুন