• ঢাকা
  • সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুলাই ১৯, ২০২০, ০৫:৩৭ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুলাই ১৯, ২০২০, ০৫:৩৭ পিএম

পাক সেনাতে ভারতীয় মেজরের নির্মম পরিণতি

পাক সেনাতে ভারতীয় মেজরের নির্মম পরিণতি

গুপ্তচরবৃত্তি দুনিয়াজুড়ে বেশ চর্চিত একটি বিষয়। বিশেষত সামরিক বা প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে গুপ্তচর বৃত্তিকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়। এক দেশ থেকে আরেক দেশে গিয়ে বা ঐ দেশের নাগরিককে বশে এনে বা নানাভাবে গুপ্তচরবৃত্তি করা হয়। যে দেশ যত উন্নত তাদের গুপ্তচরবৃত্তি তত শক্তিশালী।

গুপ্তচরবৃত্তির জন্য অনেক সময় ভিনদেশের সামরিক বাহিনীতেও অনপ্রবেশ ঘটানো হয়। এ জন্য ভারত তার প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানের সেনাবাহিনীতে এজেন্ট ঢুকিয়েছিল। তার আসল নাম রবীন্দ্র কৌশিক। তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে চাকরি নেন নবী আহমেদ শাকির নামে। ওই গুপ্তচর এক পর্যায়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মেজর পর্যন্ত হয়ে যান।

কাজের সুবিধার্থে ও সন্দেহের উর্ধ্বে থাকতে তিনি উর্দুর পাশাপাশি ইসলামিক সংস্কৃতির খুঁটিনাটি রপ্ত করে নেন। রবীন্দ্র কৌশিককে নিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

তার বীরত্বগাঁথা গল্প নিয়ে বিশেষ সচিত্র ফিচার প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা। রবীন্দ্র কৌশিক বিপক্ষের ঘাঁটিতে গিয়ে যে পারদর্শীতা দেখিয়েছেন তার মতো কাজ আর কোনও ভারতীয় আন্ডারকভার এজেন্টের পক্ষে সম্ভব হয়নি।

আনন্দবাজার পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে, রবীন্দ্র কৌশিক রাজস্থানের শ্রী গঙ্গানগরে ১৯৫২ সালের ১১ এপ্রিল জন্ম নেন। নিজ শহর থেকেই স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করে লখনউয়ে নাটক প্রতিযোগিতায় অভিনয় করতেন। সেখানেই তাকে চোখে পড়ে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং বা ‘র’-এর কর্মকর্তাদের।

মূলত ‘র’ এর প্রস্তাবে তিনি পাকিস্তানে গিয়ে আন্ডারকভার এজেন্টের কাজ করতে রাজি হন। এর পর তাকে দিল্লিতে দুই বছর প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। কিন্তু অধিকাংশ আন্ডারকভার এজেন্টদের মতো তাকেও সরকারিভাবে স্বীকৃতি দেয়া হয়নি।

তরুণ রবীন্দ্র ১৯৭৫ সালে ২৩ বছর বয়সে দুবাই, আবুধাবি হয়ে পৌঁছান পাকিস্তানে। নতুন নাম নবি আহমেদ শাকির। ভারতীয় পরিচয়ের যাবতীয় নথি নষ্ট করে ফেলা হয় তার। আহমেদ শাকির করাচি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে চাকরি পান। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনি মেজর পদে উন্নীত হয়েছিলেন। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর এক দরজির মেয়ে আমানতকে বিয়ে করেছিলেন রবীন্দ্র। তাদের একটি সন্তানও হয়েছিল।

১৯৭৯ থেকে ১৯৮৩ পর্যন্ত রবীন্দ্র কৌশিক বহু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ভারতে পাঠিয়েছিলেন। তার পাঠানো তথ্য দেশের প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

বলা হয়, ভারতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় থেকে তার নাম দেওয়া হয়েছিল ‘ব্ল্যাক টাইগার’। এটাই ছিল তার সাংকেতিক নাম। কিন্তু আরেক ‘র’ এজেন্টের নির্বুদ্ধিতার মাশুল দিয়েছিলেন রবীন্দ্র।

আশির দশকের গোড়ায় ইনায়ৎ মসিহা নামে আর এক আন্ডারকভার এজেন্টকে পাঠিয়েছিল ‘র’। পরিকল্পনা ছিল, তিনি রবীন্দ্রর সঙ্গে যোগাযোগ করে তাকে কাজে সাহায্য করবেন।

কিন্তু অভিযোগ, ইনায়তের নির্বুদ্ধিতায় সব গোপনীয়তার আবরণ খসে যায়। প্রথমে পাকিস্তানি গোয়েন্দাদের কাছে ধরা পড়েন ইনায়ত। তার পর তিনি নাকি প্রকাশ করে দেন রবীন্দ্র কৌশিকের আসল পরিচয়।

রবীন্দ্র কৌশিককে ১৯৮৫ সালে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। তার আগে শিয়ালকোটের এক ঘাঁটিতে দু’বছর বন্দি রাখা হয়।  পরে দেশটির হাইকোর্টে তাঁর শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে পরিবর্তিত হয়। এরপর ১৬ বছর ধরে পাকিস্তানের বিভিন্ন কারাগারে ছিলেন। ২০০১ সালে মুলতানের কেন্দ্রীয় কারাগারে রবীন্দ্র কৌশিক মারা যান।

তাঁর পরিবারের দাবি, ভারত সরকারের পক্ষ থেকে কোনওরকম সাহায্য বা স্বীকৃতি পায়নি তার পরিবার। ২০১২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত বলিউডের ছবি ‘এক থা টাইগার’ আসলে রবীন্দ্রর জীবনেরই কাহিনী।  কিন্তু তার জন্যেও কোনও স্বীকৃতি মেলেনি বলে জানান তারা।

সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা।

এসকে