• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুন ২৪, ২০১৯, ০৭:০৫ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুন ২৪, ২০১৯, ০৭:৩৫ পিএম

রোহিঙ্গা প্রত্যার্পণে আন্তর্জাতিক তদারকি চান মাহাথির

রোহিঙ্গা প্রত্যার্পণে আন্তর্জাতিক তদারকি চান মাহাথির

 

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নির্বাসন প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণের জন্য আন্তর্জাতিক তদারকির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ। মিয়ানমারে প্রত্যর্পণের পর যাতে রোহিঙ্গারা সেখানে কোন শাস্তির মুখে না পড়ে সে বিষয়ে আন্তর্জাতিক মহলের তদারকি প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।

রোববার (২৩ জুন) থাইল্যান্ডের ব্যাংককে এক সংবাদ সম্মেলনে মাহাথির বলেন, শরণার্থীদের নির্বাসন পরিকল্পনায় যেহেতু রোহিঙ্গাদের মতামত নেয়া হয়নি সেহেতু এই তদারকির প্রয়োজন। তাদের মতামত বিবেচনা করা উচিত কারণ তারা রাখাইন রাজ্য ফিরে যেতে ভয় পাচ্ছে। থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ৩৪তম আসিয়ান সম্মেলনে মিলিত হবার পর এই সংবাদ সম্মেলনে মাহাথির বলেন, যদি তাদের প্রত্যার্পণ করা হয় তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই তদারকি করতে হবে যাতে রাখাইন রাজ্যে ও মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তারা কোনও পদক্ষেপের মুখোমুখি হতে না হয়।

এই শীর্ষস্থানীয় সম্মেলনে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক উত্থাপিত উদ্বেগগুলির মধ্যে একটি ছিল রোহিঙ্গা ইস্যু। মাহাথির বলেন, ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রপতি জোকো উইদোডো (জোকোভি) একমাত্র নেতা ছিলেন, যিনি শীর্ষ সম্মেলনে রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের বিষয়কে আমলে নিয়েছেন। তিনি (জোকোভি) শুধুমাত্র সেই বিষয়েই (রোহিঙ্গা) কথা বলেছেন। আমি অনেক কিছু নিয়েই কথা বললাম। সম্মেলনে মিয়ানমারের সর্বোচ্চ নেতা অং সান সু চির সঙ্গে এই বিষয়ে তার কোন কথা হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে মাহাথির বলেন, বর্ণানুক্রমিক সাজানোর ব্যবস্থায়, তিনি আমার পাশেই বসেছিলেন। এমনকি আমরা খাওয়ার সময়ও পাশাপাশি বসা ছিলাম। তবে, সম্মেলনে সু চি’র সঙ্গে কোনও ব্যক্তিগত কথোপকথন হয়েছে কিনা তা জানা যায়নি।

এর আগে দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর জোট ‘আসিয়ান’ এর ৩৪তম সম্মেলন শেষে প্রকাশিত বিবৃতিতে চলমান রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে টেকসই ও সমন্বিত সমাধান চাওয়া হয়। জোট নেতাদের পক্ষ থেকে আসিয়ান চেয়ারম্যান ও থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুথ চান-ওচা বিবৃতিটি প্রদান করেন। আসিয়ানের সদস্য দেশগুলো পরস্পরের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কোনো ধরণের হস্তক্ষেপের নীতি অনুসরণ না করলেও এবার সম্মেলন শেষে দেওয়া বিবৃতিতে রোহিঙ্গা ইস্যুতে সুনির্দিষ্ট প্রত্যাশা ব্যক্ত করা হয়। যার মাধ্যমে বিষয়টি শুধু যে মিয়ানমারের একটি অভ্যন্তরীণ বিষয় নয় এবার তারই স্বীকৃতি দেওয়া হলো। আসিয়ান নেতারা চলমান রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যুতে জোটবদ্ধভাবে ভূমিকা পালনে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। যে কারণে সম্মেলন শেষে আসিয়ান চেয়ারম্যান ও থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুথ চান-ওচা সাংবাদিকদের এই রোহিঙ্গা সংকট ইস্যুতে কোনো কথা বলেননি।

যদিও আসিয়ান ভুক্ত দেশগুলোর কূটনীতিকরা বলেছেন, ব্যাংককের রিট্রিট সেশনে আসিয়ান শীর্ষ নেতারা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যুতে আলোচনা করেছেন। যেখানে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চি বলেছেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যুটি অত্যন্ত জটিল। মিয়ানমার সরকার এর সমাধান বের করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।’ ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো রাখাইনে ফেরার পর রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন। ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট তার বক্তব্যে বলেন, ‘বর্তমানে প্রত্যাবাসন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নিরাপত্তাই একমাত্র মুখ্য ইস্যু হয়ে উঠেছে। যে কারণে নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে কখনোই প্রত্যাবাসন সম্ভব নয়।’

আসিয়ানের ৩৪তম সম্মেলন শেষে দেওয়া বিবৃতিতে মিয়ানমার সরকারের ভূমিকা ইস্যুতে প্রকাশ্যে কোনো সমালোচনা করা হয়নি। সম্মেলনে মিয়ানমারের বর্তমানের অবস্থানের সঙ্গে সংগতি রেখে 'রোহিঙ্গা' শব্দের বদলে ‘বাস্তুচ্যুত ব্যক্তি’ বলা হয়েছে। আসিয়ান চেয়ারম্যান প্রায়ুথ চান-ওচা সম্মেলন শেষে জোটের নেতাদের পক্ষে বিবৃতিতে বলেন, ‘রাখাইনে বসবাসরত সব সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিতে এবং বাস্তুচ্যুত লোকদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা এবং সম্মানের সঙ্গে স্বেচ্ছায় ফেরানোর ব্যাপারে যতটা সম্ভব কার্যকর সহায়তা প্রদানের ব্যাপারে আমরা জোর দাবি করছি। একই সঙ্গে এক্ষেত্রে মিয়ানমারের অঙ্গীকারকেও পুরোপুরি সমর্থন জানাচ্ছি।’

আসিয়ান চেয়ারম্যান তার বিবৃতিতে এও বলেছেন, ‘সংঘাতের মূল কারণগুলোর সমন্বিত ও টেকসই সমাধান অনুসন্ধান এবং ক্ষতিগ্রস্ত সম্প্রদায়গুলোর পুনর্বাসনের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির ওপর আমরা জোর দিচ্ছি। তাছাড়া রাখাইনের রাজ্য বিষয়ক পরামর্শক কমিশনের (আনান কমিশনের) দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদনের যে সব সুপারিশ এখনো বাস্তবায়ন হয়নি তা অবিলম্বে বাস্তবায়নের জন্য মিয়ানমার সরকারের প্রতি উৎসাহ জোগানোর চেষ্টা করে যাচ্ছি।’

সূত্র : ব্যাংকক পোস্ট

এসজেড