• ঢাকা
  • সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুলাই ২৪, ২০১৯, ০১:৪২ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুলাই ২৪, ২০১৯, ০৫:৪১ পিএম

রূপপুর দুর্নীতি তদন্ত প্রতিবেদন

৩৪ কর্মকর্তা দায়ী, গণপূর্তের ১৬ জনকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

৩৪ কর্মকর্তা দায়ী, গণপূর্তের ১৬ জনকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত
প্রেস ব্রিফিংয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম-ছবি : জাগরণ

রূপপুর গ্রিন সিটি প্রকল্পের আসবাবপত্র ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী ক্রয় ও ভবনে উঠানোর কাজে আর্থিক অনিয়মের ঘটনায় ৩৪ জনকে দায়ী করে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি। তাদের মধ্যে গণপূর্তের ১৬ জনকে বরখাস্ত করে বিভাগীয় মামলার সিদ্ধান্ত দিয়েছে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত  মন্ত্রণালয়।

বুধবার (২৪ জুলাই) দুপুরে সচিবালয়ের মন্ত্রণালয়ে সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম এ সব তথ্য জানান।

মন্ত্রী জানান, তদন্ত কমিটি ৩৪ জন কর্মকর্তাকে দায়ী করে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করেছে। তারমধ্যে চারজন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি  মন্ত্রণালয়ের। বাকি ৩০ জন গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে।

শ ম রেজাউল করিম বলেছেন, তদন্ত রিপোর্ট পর্যালোচনায় ৩৪ জন কর্মকর্তা রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কিছু ঠিকাদারি কাজে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত থাকার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ৪ জন কর্মকর্তা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সংযুক্ত। তারা হলেন- প্রকল্প পরিচালক ড. শওকত আকবর, হাসিনুর রহমান, মেহেদী হাসান ও মোহাম্মদ মাহাবুব। তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। 

তিনি বলেন, আমাদের মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন দফতরের কর্মকর্তাদের মধ্যে একজন কর্মকর্তা অবসরে এবং ৩ জন কর্মকর্তা পিআরএলে গেছেন। তাদের ক্ষেত্রে ভিন্ন ব্যবস্থা নেয়া হবে। সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলা হয়েছে। যারা কর্মরত আছেন তাদের মধ্যে ১৬ জনকে গুরুতর অভিযোগের কারণে সাময়িক বরখাস্তসহ বিভাগীয় মামলা রুজুর সিদ্ধান্ত হয়েছে। অপর ১০ জনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিভাগীয় মামলা রুজু হবার পর তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। একজন কর্মকর্তার ব্যাপারে তদন্ত কমিটি সম্পৃক্ততা পায়নি বিধায় তাকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
 
মন্ত্রী জানান, চাকরিরত ২৭ জনের মধ্যে একজন কর্মকর্তা রকিবুল ইসলাম একেবারেই নবীন। গত বছরের ২০ সেপ্টেম্বর পাবনা গণপূর্ত সার্কেলে সহকারী প্রকৌশলী পদে যোগদান করেন এবং ওইদিনই প্রাক্কলনে স্বাক্ষর করেন। নবীন কর্মকর্তা হিসেবে প্রথম কর্মদিবসে পিডাব্লিউডি এর রেট সিডিউল এবং অ্যানালাইসিস সম্পর্কে সুষ্পষ্ট ধারণা থাকার কথা নয় বিধায় তার বিষয়টি সহানুভূতির সাথে দেখার জন্য উভয় কমিটি সুপারিশ করেছে। শুধু তাকেই অব্যাহত দেয়া হয়েছে।

মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ এর কথা বলেছেন। সরকারের অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য কাজ করছি। যেখানেই অনিয়ম-দুর্নীতি, তার বিরুদ্ধেই আমাদের কঠোর অবস্থান। আমরা চাই দেশে উন্নয়নের গতিকে ধ্বংস করার ভয়াবহ ব্যাধি দুর্নীতি যেনো না থাকে। এ লক্ষ্যে আমাদের মন্ত্রণালয় কাজ করছে। 

শ ম রেজাউল করিম বলেন, দুটি তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত কমিটি দায়ী কর্মকর্তাদের ৬টি ক্যাটাগরিতে ভাগ করেছে। ক্যাটাগরিগুলো হলো- (১) প্রাক্কলন প্রস্তুত (২) প্রাক্কলন পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও সুপারিশ (৩) প্রাক্কলন যাচাই বাছাই ও অনুমোদন (৪) বিল প্রদান (৫) বার্ষিক ক্রয় পরিকল্পনা প্রণয়ন ও অনুমোদন  এবং (৬) দরপত্র মূল্যায়ন ও অনুমোদন। 

গণপূর্ত অধিদফতর কর্তৃক গঠিত কমিটি দায়ী কর্মকর্তাদের ৩টি ক্যাটাগরিতে ভাগ করেছেন। সেগুলো হলো- (১) প্রাক্কলন প্রণয়ন (২) প্রাক্কলন অনুমোদনের প্রক্রিয়াকরণ এবং (৩) প্রাক্কলন চূড়ান্তকরণ।

ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, রূপপুরের গ্রিন সিটি প্রকল্পের নির্মাণাধীন ২০ ও ১৬ তলা ভবনের আসবাবপত্র ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী ক্রয়ে ও ভবনে ওঠানোর অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা গণমাধ্যমের মাধ্যমে জানতে পেরে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন দুইটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির তদন্ত পরিসরের ব্যপ্তি করে দিয়ে বলেছি অন্যায়ভাবে কোনও নির্দোষ কর্মকর্তা-কর্মচারী বা সংশ্লিষ্ট কেউ যেনো অভিযুক্ত না হয়, পাশাপাশি বলেছি যত বড় ক্ষমতাসম্পন্ন বা দায়িত্বশীল পদে থাকা ব্যক্তি হোন না কেনো তার দায়ভার পেলে তাকে যেনো অনুকম্পা দেখানো না হয়।

গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী বলেন, আমাদের এই সিদ্ধান্ত দুর্নীতিকে না বলার জন্য জিরো টলারেন্সের ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য সিদ্ধান্ত। যারা অনিয়মে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েন তাদের জন্য এটা একটা বার্তা, দায়িত্বশীল পদে থেকে রাষ্ট্রের অর্থের অপব্যবহার বা নিজের সুবিধা নেয়া বা কাউকে পাইয়ে দেয়ার ঘটনাকে কোনভাবেই বরদাশত করা হবে না। 

শ ম রেজাউল করিম ব্রিফিয়ে বলেন, তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এ ঘটনায় অতিরিক্ত ৩৬ কোটি ৪০ লাখ ৯ হাজার টাকা নিয়েছে। সেই অর্থ উদ্ধারের জন্য পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ঠিকাদারদের অন্যান্য কাজে পাওনা বিল থেকে এ টাকা কেটে রাখা হবে। রাষ্ট্রের একটি টাকাও অন্যায়ভাবে যারা নিয়েছে তারা আত্মসাৎ করতে পারবে না। ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। যারা দুর্নীতিতে জড়ায় তাদের ঠিকাদার হিসেবে কাজ করা উচিত নয়। এটি সকল ঠিকারদারদের জন্য বার্তা, অন্যায় করলে ব্যবসা করা যাবে না এবং সরকারি কোনও প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পৃক্ত থাকা যাবে না। 

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স কালো তালিকাভুক্ত করা সহ অন্যান্য পদ্ধতিতে অগ্রসর হবেন মন্তব্য করেন মন্ত্রী।

প্রায়ই অভিযোগ উঠে তদন্ত আলোর মুখ দেখে না বা তদন্তের প্রেক্ষিতে কোনও ব্যবস্থা নেয়া হয় না উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, দেশ ও জাতির স্বার্থে আমাদের গৃহীত ব্যবস্থা সকল মানুষ জানবে এবং অপরাধীদের কোনরকম ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই।

গণমাধ্যমের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে মন্ত্রী বলেন, আপনারা সোচ্চার হয়েছেন বিধায় এত গভীরে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হয়েছে। আমার মন্ত্রিত্বকালীন আমি সকল গণমাধ্যমের সহযোগিতা পাচ্ছি।

এক প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, টেন্ডার সংক্রান্ত সকল অনিয়ম আমরা খতিয়ে দেখবো। যেকোন অনিয়মের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেবো। গণমাধ্যম অনেক শক্তিশালী। কোথাও কোনো অনিয়ম থাকলে আমাদের জানার সুযোগ করে দিন। রাষ্ট্রের অংশ হিসেবে অনিয়মের বিষয়ে আমাদের জানানো সাংবাদিকদের কর্তব্য। এরই মধ্যে প্রাপ্ত অভিযোগের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, ভবিষ্যতেও নেবো। 

এমএএম/আরআই/টিএইচ/এসএমএম

আরও পড়ুন