• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুলাই ২৪, ২০১৯, ০৫:১২ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুলাই ২৪, ২০১৯, ০৫:৫৮ পিএম

মামলা পিবিআইতে দেয়ার দাবি বাবার

প্রভাবশালী মহলকে আড়াল করতে মিন্নিকে ফাঁসাচ্ছে পুলিশ

প্রভাবশালী মহলকে আড়াল করতে মিন্নিকে ফাঁসাচ্ছে পুলিশ
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছেন মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর  -  ছবি : জাগরণ

প্রভাবশালী মহলের চাপে খুনিদের আড়াল করতে আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে ফাঁসানোর ষড়যন্ত্র চলছে বলে দাবি করেছেন মোজাম্মেল হোসেন কিশোর। এ জন্য তিনি পুলিশকে দায়ী করে বলেছেন, পুলিশ মামলার তদন্ত ভিন্নখাতে প্রবাহিত করছে। বরগুনা পুলিশের অধীনে সুষ্ঠু তদন্ত সম্ভব নয় জানিয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপির কাছে রিফাত হত্যা মামলাটি পিবিআইতে হস্তান্তর করে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে খুনিদের আইনের আওতায় আনার কথা বলেছেন।

বুধবার (২৪ জুলাই) দুপুরে বরগুনা প্রেসক্লাবে আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর সংবাদ সম্মেলন করে এ দাবি জানিয়েছেন। এ সময় তার পরিবার ও স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন।

মোজাম্মেল হোসেন কিশোর লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করেন, ২৬ জুন প্রকাশ্য দিবালোকে তার জামাতা শাহনেওয়াজ রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা। হত্যার সময় উপস্থিত শত শত মানুষ কেউ এগিয়ে না এলেও তার মেয়ে আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অস্ত্রের মুখে দাঁড়িয়ে স্বামী রিফাতকে একা বাঁচানোর চেষ্টা করেছেন। এ ঘটনায় যে ভিডিও ফুটেজ ভাইরাল হয় তার মাধ্যমে মিন্নি দেশবাসীর কাছে সাহসী নারী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। এরপর দুলাল শরীফ বরগুনা সদর থানায় বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার ১ নম্বর সাক্ষী হিসেবে মিন্নিকে রাখা হয়। প্রভাবশালী মহলের চাপে ১৩ জুলাই মিন্নিকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন দুলাল শরীফ। এরপর মানববন্ধন করে মিন্নিকে গ্রেফতারের দাবি জানানো হয়।

১৬ জুলাই পুলিশ মিন্নিকে আসামি শনাক্ত করার কথা বলে বরগুনার পুলিশ লাইনে নিয়ে আসে। সোয়া ১১ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রাত ৯টায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। মিন্নির বাবার দাবি, তার মেয়েকে রিমান্ডে নিয়ে তার ওপর মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিতে বাধ্য করা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, তার মেয়ে অসুস্থ। কিছুদিন আগেও তাকে চিকিৎসা করাতে হয়েছে ঢাকায় নিয়ে। পুলিশি নির্যাতনে তার মেয়ে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছেন। তার সুচিকিৎসা প্রয়োজন। পুলিশ এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত প্রভাবশালী মহলকে আড়াল করতে তার মেয়েকে ফাঁসাচ্ছে।

কিশোরের দাবি, রিফাত হত্যাকাণ্ডের আগে রিফাতের সাথে বরগুনা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের স্ত্রী শামসুন্নাহার খুকির বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। এরপর খুকি তার বোনের ছেলে রিফাত ফরাজী ও রিশান ফরাজীর কাছে এ বিষয়ে নালিশ করেছে, যা ইতোমধ্যে বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে। যেদিন হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছিল সেদিন হত্যাকারীরা বলেছিল, ‘তুই আমার মাকে গালাগাল করেছিস। আমার চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বল।’

মিন্নির বাবা জানান, রিফাত ফরাজী ও রিশান ফরাজী তাদের খালা খুকিকে মা বলে ডাকত। তাই তার ধারণা হচ্ছে, এই হত্যাকাণ্ডে রিফাত-রিশানের আগ্রাসী ভূমিকার কারণ হতে পারে। মাকে গালাগাল করার প্রতিশোধ নিতে গিয়েই রিফাত ফরাজী ও রিশান ফরাজী হত্যাকাণ্ডের অগ্রভাগে ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে এবং রিফাত ফরাজী রিশান ফরাজীই এই হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করেছে। তার দাবি, পুলিশ সঠিকভাবে তদন্ত করলে এ বিষয়ে সব তথ্য বেরিয়ে আসবে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এমনিতেই তিনি ও তার পরিবার-পরিজন নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে। তার সন্তানদের পড়ালেখা বন্ধ। তারা স্কুলে যাওয়া-আসা করতে পারছে না। বিভিন্ন মহলের হুমকির কারণে প্রতি মুহূর্তে নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে তাকে চলতে হয়।

এদিকে বুধবার বেলা ১টার দিকে বরগুনা কারাগারে গিয়ে আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির সাথে দেখা করেছেন আইনজীবী অ্যাডভোকেট মাহাবুবুল বারী আসলাম। এ সময় তার সাথে ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সাইফুর রহমান সোহাগ। অ্যাডভোকেট মাহাবুবুল বারী আসলাম জানিয়েছেন, আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি শারীরিকভাবে অসুস্থ। তার হাঁটতে সমস্যা হচ্ছে। মিন্নি আইনজীবীকে জানিয়েছেন, তাকে নির্যাতন ও ভয় দেখিয়ে পুলিশ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে বাধ্য করেছে। মিন্নি তার জবানবন্দি প্রত্যাহার করতে চান। আসলাম আরো জানিয়েছেন, মিন্নিকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে কীভাবে তিনি জবানবন্দি প্রত্যাহারের জন্য আবেদন করবেন।

রিফাত হত্যা মামলায় এ পর্যন্ত ১৫ আসামিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তারা সবাই ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। প্রধান আসামি নয়ন বন্ড ২ জুলাই পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। মামলার এজাহারভুক্ত ১২ আসামির মধ্যে এখনো চারজন গ্রেফতার হয়নি।

প্রসঙ্গত, গত ২৬ জুন সকালে প্রকাশ্যে বরগুনা সরকারি কলেজ গেটের সামনে রিফাতকে কুপিয়ে আহত করা হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় বরিশালে নেওয়ার পর তিনি মারা যান। এ ঘটনায় রিফাতের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ বাদী হয়ে ১২ জনকে আসামি করে বরগুনা থানায় হত্যা মামলা করেন।

এনআই

আরও পড়ুন